ক্রিসেন্ট গ্রুপের জালিয়াতিতে ১০ ব্যাংক কর্মকর্তার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ
রমজান আলী : জনতার ব্যাংকের আলোচিত ঋণ খেলাাপির প্রতিষ্ঠান ক্রিসেন্ট গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থপাচারের প্রমাণ পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এরই প্রেক্ষিতে ক্রিসেন্ট গ্রুপের কর্ণধার এম এ কাদেরসহ ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর চকবাজার থানায় একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ক্রিসেন্টের মূল হোতা এমএ কাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. শহিদুল ইসলাম বলেন, ক্রিসেন্ট গ্রুপের অর্থ পাচারে বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে। সেগুলো নিয়ে আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে অনুসন্ধান করছি। এরই মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে আমরা অনিয়মের তথ্যও পেয়েছি। অনুসন্ধান শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিদেশে ৯১৯ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে এনবিআরের মামলায় গ্রেফতার হন এমএ কাদের। এরই ধারাবাহিকতায় অধিকতর তদন্তের স্বার্থে এর সঙ্গে যুক্ত ১০ ব্যাংক কর্মকর্তার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করার সুপারিশ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এই সংক্রান্ত একটি চিঠি বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে ক্রিসেন্ট ট্যানারিজের মালিকরা ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজেশে এই অর্থপাচার করে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানি ল্যান্ডারিং আইনে মামলা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি অধিকতর তদন্তের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ১২ জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করার সুপারিশ করা হয়েছে। বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করার সুপারিশ করা হয়েছে তৎকালীন জনতা ব্যাংকের জিএম বর্তমানে কৃষি ব্যাংকের ডিএমডি মোহাম্মদ ফখরুল আলম, জনতা ব্যাংকের ডিজিএম রইস উদ্দিন আহমেদ, এজিএম আতাউর রহমান সরকার, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. খাইরুল আমিন, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মগরেব আলী, প্রিন্সিপাল অফিসার মুহাম্মদ রুহুল আমিন, সিনিয়র অফিসার মো. সাইদুজ্জামান, সিনিয়র অফিসার মনিরুজ্জামান, সিনিয়র অফিসার মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন। এছাড়া এই জালিয়াতির অন্যতম হোতা ক্রিসেন্ট ট্যানারিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিসেস সুলতানা বেগম মনির বিরুদ্ধে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করারও সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ জানুয়ারি ৯১৯ কোটি বিদেশে পাচারের অভিযোগে মানি লন্ডারিং আইনে ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ কাদের ও জনতা ব্যাংকের দুই ডিএমডিসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। মামলা দায়েরের দিনই ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজের চেয়ারম্যান এমএ কাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া ক্রিসেন্ট গ্রুপের কাছ থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি আদায় করার জন্য পাঁচটি মামলা করেছে জনতা ব্যাংকও।
ক্রিসেন্ট গ্রুপের কাছ থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি উদ্ধারে পাঁচটি মামলা করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। গ্রুপের পাঁচ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ঢাকা প্রথম অর্থঋণ আদালতে জনতা ব্যাংকের পক্ষে লোকাল অফিসের মহাব্যবস্থাপক মামলাগুলো করেন। চারটি মামলায় প্রধান বিবাদী করা হয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ কাদেরকে। অন্য মামলার প্রধান বিবাদী হলেন এমএ কাদেরের ছোট ভাই এবং রিমেক্স ফুটওয়্যার ও জাজ মাল্টিমিডিয়ার চেয়ারম্যান মো. আব্দুল আজিজ। মামলার অন্য বিবাদীরা হলেন এমএ কাদেরের মা রেজিয়া বেগম, স্ত্রী সুলতানা বেগম মনি, কন্যা সামিয়া কাদের নদী, আব্দুল আজিজের স্ত্রী লিটুল জাহান মীরা ও লেক্সকো লিমিটেডের পরিচালক হারুন-অর-রশীদ। এসব মামলার মধ্যে রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের কাছে ১ হাজার ১৩৪ কোটি ৯ লাখ, রূপালী কম্পোজিট লেদারওয়্যার লিমিটেডের কাছে ৯২৩ কোটি ৫৯ লাখ, ক্রিসেন্ট লেদার প্রডাক্টস লিমিটেডের কাছে ৮৯৪ কোটি ৯২ লাখ, লেক্সকো লিমিটেডের কাছে ৪৪৬ কোটি ২৬ লাখ ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেডের কাছে ১৭৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে। ব্যাংকের কাছে প্রতিষ্ঠানগুলোর জামানত থাকা বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রি করে পাওনা টাকা আদায়ের জন্য এসব মামলা করা হয়েছে।
শুধু ব্যাংক কর্মকর্তারা দায় কি এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সুষ্ঠ তদন্ত করে আসল দোষীদের খুঁজে বের করতে হবে। এর মধ্যে কারা ছড়িত রয়েছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। শুধু ব্যাংক কর্মকর্তারাই ছড়িত না কি অন্য কেউ আছে তাদেরকেও খুঁজে বের করতে হবে। সম্পাদনা : ইকবাল খান