দেশে ধনী এগোচ্ছে খরগোশের গতিতে আর গরিব এগোচ্ছে শামুকের গতিতে : এম এম আকাশ
নাঈমা জাবীন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেছেন, বর্তমান উন্নয়ন ধারায় গরিবের একদম কিছু হচ্ছে না, তা আমি বলছি না। গরিবও এগোচ্ছে, ধনীও এগোচ্ছে। কিন্তু ধনী এগোচ্ছে খরগোশের গতিতে আর গরিব এগোচ্ছে শামুকের গতিতে। বাংলাদেশে অতিধনীদের সম্পদ বৃদ্ধির হার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি (১৭.৪ শতাংশ)। গড় আয়ও অনেক বেড়েছে! যদি বলি আমার অর্ধেক শরীর ফ্রিজে, অর্ধেক শরীর চুল্লির মধ্যে আছে, আর সব মিলিয়ে আমি গড়ে নাতিশীতোষ্ণ আছি, ব্যাপারটা অনেকটাই সে রকম। সেজন্য মানুষ এসব উন্নতির পরও সমতা ও সুশাসনের অভাবে অসন্তুষ্ট। সূত্র : বনিক বার্তা
তিনি বলেন, মানুষ বাস্তবে দেখছে সে পরিশ্রম অনুযায়ী ফল পাচ্ছে না। কিন্তু আরেকজন পরিশ্রমের তুলনায় অনেক বেশি পাচ্ছে। আসলে উন্নয়ন হচ্ছে সবারই। তবে নিচের দিকে উন্নয়ন হচ্ছে তুলনামূলক অনেক কম মাত্রায়। ফলে আয়বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে। সব জায়গায়ই বৈষম্য লক্ষণীয়। আমরা যে গড় আয়ু বৃদ্ধির কথা বলছি, সেখানেও গরিবের গড় আয়ু অতোটা বাড়েনি। শিক্ষার হারের কথা যদি বলি, গরিবের ঘরে শিক্ষার মান যতোটা বেড়েছে, ধনী ও মধ্যবিত্তের ঘরে তা বেড়েছে অনেক বেশি। আগে অনেকেই প্রাইমারি স্কুলে পড়তে পারত না। এখন পারছে। কিন্তু গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের মান আর শহরের প্রাইমারি স্কুলের মানে অনেক তফাৎ। শহরের সরকারি প্রাইমারি স্কুলের মান আর বেসরকারি ইংলিশ মিডিয়ামের স্কুলের মানেও অনেক বৈষম্য। স্বাস্থ্যখাতেও বৈষম্য আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বৈষম্যটা হয়তো পরিমাণগতভাবে দেখা যাবে না, কিন্তু গুণগতভাবে দেখতে পাব। যেমন স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে হয়তো অনেকেই বলবেন, কমিউনিটি ক্লিনিক অনেক হয়েছে। সবাই স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। কিন্তু অল্পসংখ্যক ধনী স্কয়ার হাসপাতাল বা সিঙ্গাপুরে গিয়ে যে মানের সেবা পাচ্ছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের বারান্দায় যে রোগীটি আছে, সে তো তা পাচ্ছে না। তার মানে প্রতিটি স্তরে আমরা একটা বৈষম্য সৃষ্টি করে ফেলেছি। সমাজটা আর ঐক্যবদ্ধ থাকছে না। সমাজে হিংসা বা ঈর্ষার প্রতিযোগিতা চলছে। তাই উন্নয়ন বলা যাবে গড়ে অথবা ধনী সংখ্যালঘুর দৃষ্টিতে। কিন্তু বণ্টনের দিক থেকে, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার দিক থেকে একে আদর্শ উন্নয়ন বলা যাবে না।