প্রবৃদ্ধির হিসাবে নতুন ব্যাংকের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা
বিশ্বজিৎ দত্ত : বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালনায় অনেক সমস্যা রয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের প্রয়োজন নেই এটি সম্ভবত সঠিক নয়। অনেকে ব্যাংকিং ব্যবসার খেলাপি ঋণের সমস্যার কারণে আর ব্যাংক প্রয়োজন নেই বলে মত দেন। কিন্তু বাংলাদেশের বিকাশমান অর্থনীতিতে আরো ব্যাংকের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ সাবেক এনবিআর সদস্য আমিনুর রহমান।
তিনি বলেন, ব্যাংকের মৌলিক কাজই প্রয়োজনের তাগিদে মুদ্রাকে সঞ্চালনের মাধ্যমে অর্থনীতির চাকায় গতি নিয়ে আসা। বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির শক্তি মূল্যায়নে প্রবৃদ্ধি বড় ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের এখন গড় প্রবৃদ্ধি ৭ এর উপরে। এটিকে আগামীতে ১০ এ নিয়ে যেতে হবে। আর এই কাজ করতে গেলে জাতীয় সঞ্চয় বাড়াতে হবে।
যেমন আপনি মাসে এক হাজার টাকা সঞ্চয় করেন আরো অনেকে সঞ্চয় করেন। তাহলে আপনার সঞ্চয় আরো অনেকের সঙ্গে মিলে বিরাট এক পুঁজির ভা-ার তৈরি করেছে। পুঁজি বা টাকার পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে বাজারে সুদের হার কমে গেল এবং এই কম সুদে অনেক উদ্যোক্তা নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপনে এগিয়ে এলো। এতে করে অর্থনীতিতে শিল্পের বিস্তার ঘটলো যে শিল্পে বেকার জনশক্তির কর্মসংস্থান হলো এবং তাদের আয় বেড়ে যাবে। প্রবৃদ্ধিনির্ভর অর্থনীতিতে মুদ্রার ‘সার্কুলেশন’ বা পরিচলনের এক গুণক প্রভাব রয়েছে। যদি আজ ১০০ টাকা খরচ করেন, তাহলে তা সঞ্চয় প্রবণতার ওপর নির্ভর করে অর্থনীতিতে ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকার প্রভাব ফেলতে পারে। ধরা যাক, আপনার টাকা অলস পড়ে থাকলো। আর আপনি যদি সঞ্চয় করেন কোনো ব্যাংকে, তাহলে ব্যংক হয়তো অন্য কাউকে এই টাকাটা ধার দিচ্ছে যা আবার বাজারে খরচ হয়ে অর্থনৈতিক কর্মকা- বাড়ছে। তাই এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, শুধু সঞ্চয় নয়, বরং ব্যাংক কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক সঞ্চয়ই অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়াতে পারে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বার্ষিক জিডিপি এখন প্রায় ২৫০ বিলিয়ন ডলার। এবং এটি বিশ্বের ৪৩তম বৃহত্তম অর্থনীতি। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজম্যান্টের হিসাবে বাংলাদেশের জনসংখ্যার বড় একটা অংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বলে ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে অবস্থান করছে। ব্যাংক থেকে বেতন ভাতা পান এমন কর্মজীবীর সংখ্যা মোট কর্মজীবীর ২ শতাংশ। দেশে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণের হার মাত্র ৩১ শতাংশ। এটি ভারতে ৫৮ শতাংশ ও শ্রীলংকায় ৮০ শতাংশ। তাদের মতে দেশের এ জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসলে দেশের অর্থনীতির গতিসঞ্চার হবে। তৃতীয়ত, বাংলাদেশে সুদের হার অত্যধিক বেশি এবং তা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করে দেয়। ব্যাংকের সংখ্যা বেড়ে গেলে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং ফলে সুদহার কমে আসবে যা অর্থনৈতিক কর্মকা-কে বাড়িয়ে দেবে।
বিআইবিএমের রিপোর্টে বলা হয়, বাজারে নতুন ব্যাংক আসবে কি আসবে না, বাজার অর্থনীতিতে তা বাজারই ঠিক করে দেবে। ব্যাংক যেহেতু প্রতিষ্ঠা সরকার করবে না বরং বেসরকারি উদ্যোক্তারা করবে তাই তারা বাজার পর্যবেক্ষণ করেই অর্থাৎ বাজারে তাদের ব্যবসা পরিচালনার মতো পর্যাপ্ত চাহিদা থাকলেই বিনিয়োগ করবে।
রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে কোন ব্যাংকেরই ট্যাক্সপরবর্তী মুনাফা ২০০ কোটি টাকার কম নয়। দেশের কর্পোরেট ট্যাক্সের ৪৩ শতাংশই এসেছে ব্যাংক ব্যবসা থেকে। এমনকি প্রায় দেওলিয়া হয়ে যাওয়া ফার্মার্স ব্যাংকও মুনাফা করেছে।
এ বিষয়ে নতুন ব্যাংকের একজন উদ্যোক্তা বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিন জানান, বাংলাদেশের অর্থনীতি বেড়েছে। উন্নত অর্থনীতির অন্যতম একটি দিক হলো মানুষজনকে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নিয়ে আসা। দেশের ৮০ ভাগ লেনদেন এখনো নগদে হয়। এটি আর্থিক খাত বিকাশে অন্তরায়। ১৬ কোটি মানুষকে এখন ব্যাংক দিয়ে ভাগ করলে প্রায় প্রতিটি ব্যাংক এখন ৩৫ হাজার মানুষকে সেবা দেয়। কিন্তু ভারতে এটি মাত্র ২২ হাজার। এই হিসাবেও বাংলাদেশে আরো ব্যাংকের প্রয়োজন রয়েছে। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান