সব মানুষের মিলন মেলায় পরিণত একুশে বইমেলা
কামরুল হাসান : ভাষার প্রতি আমাদের ভালোবাসা এবং চরম আত্মত্যাগের কাহিনি মিশে আছে এই মেলার সঙ্গে। শুধুমাত্র মায়ের ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে আত্মোৎসর্গ করা নয়, স্বাধিকার ও স্বাধীনতার দাবি উঠেছে ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে। তাই প্রতি বছর একুশের বই মেলা আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়, আমাদের ভাষার জন্য আত্মত্যাগের ইতিহাস। কণ্ঠে ভেসে আসে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।
অমর একুশে বইমেলা শুধু বই বেচাকেনার মেলা নয়, এ হচ্ছে বাঙালির আবেগের আর আনন্দের মিলনমেলা। নিজেদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য খুঁজে পাওয়ার মেলা। তাই সকল স্তরের এবং সকল বয়সের মানুষের মিলন ঘটে একুশের বই মেলায়। তবে এ কথা সত্যি যে, বর্তমানে ইন্টারনেটের প্রভাবের ফলে বই পড়ার প্রতি আকর্ষণ কমে গেছে অনেক। তারপরও অনেকেই মনে করেন, মুদ্রিত বইয়ের আর্কষণ থাকবে চিরকাল এবং বই মেলার পরিধি ও বেচাকেনাও বাড়বে বছরের পর বছর ধরে। বাংলা একাডেমির পুস্তক বিক্রয়কেন্দ্রের বিক্রয় হিসেব থেকেও তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলায় বাংলা একাডেমি পুস্তক বিক্রয়কেন্দ্র থেকে যেখানে বই বিক্রি হয়েছিলো ৬৭,৭৬,৪৯১ টাকা, সেখানে চলতি বছরের মেলায় ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৯৭,৭৬,১০৯ টাকা। বই বিক্রি বেশি হয়েছে ২৯,৯৯,৬০২ টাকার। সুতরাং দেখা যাচ্ছে প্রতি বছর মেলায় বই ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে।
বাংলা একাডেমির পরিচালক জালাল আহমেদ জানান, বাংলা একাডেমি প্রণীত বই নির্ভুল এবং এতে সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায়। তাই তিনি সঠিক ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানতে বাংলা একাডেমির পুস্তক বিক্রয় ঘুরে দেখতে সবাইকে আমন্ত্রণ জানান তিনি।
যথারীতি বিকাল ৪:০০টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশের ছড়াসাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতানা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন বড়–য়া। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আলম তালুকদার, আসলাম সানী, লুৎফর রহমান লিটন ও আনজীর লিটন। আলোচনা অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ। সন্ধ্যায় মূল মঞ্চে চলে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গতকাল মেলায় নতুন বই আসে ১৪২টি। সবমিলিয়ে মেলায় নতুন বইয়ের সংখ্যা ২৮২৯টি। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান