স্থানীয়রা বলছেন, চুড়িহাট্টায় অগ্নিকা-ের কারণ রাসায়নিক বিস্ফোরণ নয়, ত্রুটিযুক্ত সিলিন্ডার
আসিফুজ্জামান পৃথিল : রাসায়নিক পদার্থ চুড়িহাট্টা ট্রাজেডির মূল নিয়ামক ছিলো না। এই ঘটনার প্রধান নিয়ামক ছিলো ত্রুটিযুক্ত সিএনজি এবং এলপিজি সিলিন্ডার। এমন অভিযোগ করছেন চুড়িহাট্টা, আসগর লেন আর উর্দু রোডের বাসিন্দারা। তাদের দাবি ১৯৯৬ সালে এই এলাকায় রাসায়নিক বিস্ফোরণ ঘটেছিলো। তখন এলাকাবাসী এবং ব্যবসায়ীরা বিপজ্জনক রাসায়নিকের গুদাম এলাকা থেকে সরিয়ে ফেলেন। তারা বলছেন, চুড়িহাট্টার ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিলো ত্রুটিযুক্ত সিএনজি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে। এর প্রতিক্রিয়ায় বিস্ফোরিত হয় বেশকিছু ত্রুটিযুক্ত এনএলজি সিলিন্ডার। এতেই হতাহত হন ঘটনার শিকাররা।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় নিজেদের ক্ষোভ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, ভুল তথ্য দিয়ে সত্যকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে। বড় বড় ব্যবসায়ীরা, পুঁজিপতিরা সিএনজি কনভারশন আর এনএলজি আমদানি ও সিলিন্ডার ব্যবসায় যুক্ত। ত্রুটিপূর্ণ সিলিন্ডারের কারণে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত্যুর পরিমাণ চুড়িহাট্টার সমপরিমাণ না হওয়ায় এই নিয়ে মাতামাতি কম হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ও সিটি ব্যাংক কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন আনু মনে করেন, যদি সত্যকে ঘুরিয়ে ফেলা হয়, তবে সমস্যার সমাধান হয় না। যদি এভাবে রাসায়নিকের উপরই দোষ চাপানো হয়, তবে সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের লোভ কমবে না। তারা ত্রুটিপূর্ণ সিলিন্ডার বাজারজাত করেই যাবেন। ফলশ্রুতিতে এরকম ঘটনা আরো ঘটবে। এই দুর্ঘটনায় কিছু রাসায়নিক উপাদানের ভূমিকা অবশ্যই ছিলো, যেমন বডি স্প্রে। আবার পিভিসি বা ইভা দানার মতো বহুক্ষণ দাহ্য পদার্থগুলো আগুনকে জিইয়ে রেখেছিলো। তবে এই ঘটনায় রাসায়নিক পদার্থের দায় যতোটা, তার চেয়ে অনেক বেশি দায়ী ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার।
কথা হয় বাংলাদেশ প্লাস্টিক ব্যবসায়ী সমিতির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক নূর বাশার আলমের সঙ্গে। তিনি দাবি করেছেন, এই এলাকায় কোনভাবেই রাসায়নিক পদার্থ মজুদ করা হয় না। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে এখানে রাসায়নিক দ্রব্যে আগুন লেগে ২ জন স্থানীয় মানুষ নিহত হন। এরপর আমরা স্থানীয়রা মিলে বিপজ্জনক সব রাসায়নিকের গুদাম সরিয়ে ফেলি। এবার সম্পূর্ণভাবে দায়ি ত্রুটিযুক্ত সিলিন্ডার। এই সিলিন্ডার যারা বানায় তারা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। এদের দোষ ঢাকতেই দোষ দেয়া হয় মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে। তবে মসজিদ কমিটি বিষয়টি নিয়ে ভাবছে। আমরা আগামীকালই বসছি। আমাদের সভাপতি হাজি ফারুক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তিনি আমাদের তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।’
মসজিদ কমিটির সদস্য হাজি ফারুকও দায়ী করেছেন ত্রুটিপূর্ণ সিলিন্ডারকেই। তিনি মনে করেন, পুরান ঢাকাকে ছোট করার এবং সব ক্ষেত্রে অনিয়মের আখড়া প্রমাণ করার ইচ্ছা নতুন ঢাকার মানুষের মধ্যে রয়েছে। এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই সবাই এলাকাটিকে রাসায়নিকের গুদাম বলে প্রচার শুরু করে। সত্যতা কেউ বিবেচনা করেনি। চুড়িহাট্টা ট্রাজেডিতে নিহতদের একজন মোহাম্মদ জুম্মদ। তিনি চুড়িহাট্টার স্থানীয় বাসিন্দা। তার ছেলে মোহাম্মদ রাশেদ বলেছেন, তার বাবাকে ফিরিয়ে আনা যাবে না, কিন্তু আর কাউকে যেনো পিতৃহারা না হতে হয়, সেটি নিশ্চিত করতেই হবে। এই ঘটনার পেছনে দায়ি রাসায়নিক গুদাম হোক আর গ্যাস সিলিন্ডার, এটি খুঁজে বের করে দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে, তা দায়ী ব্যক্তি যত ক্ষমতাশালীই হোক না কেনো। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান