অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো রবিনসন ক্রুসো দ্বীপ
মঞ্জুর দেওয়ান
প্রায় এক শতাব্দী ধরে রবিনসন ক্রুসো দ্বীপের অধিবাসীরা জানে যে তাদের দ্বীপের নাজুক বাস্তুসংস্থান নির্ভর করছে এর অনন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ওপর। চিলির উপক‚ল থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরে হুয়ান ফার্নান্দেজ দীপপুঞ্জের একটি দ্বীপ রবিনসন ক্রুসো। সাহিত্যের অন্যতম বিখ্যাত এক চরিত্রের নামে নামকরণকৃত দ্বীপটি আবিষ্কৃত হয় ষোড়শ শতাব্দীতে। স্কটিশ নাবিক অ্যালেক্সান্ডার সেলকির্ক এই দ্বীপপুঞ্জে আটকে ছিলেন চার বছর চার মাস। পরে তিনি ড্যানিয়েল ডেফোর কাছে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। পরবর্তীতে ডেফো তার কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে লেখেন কালজয়ী বই রবিনসন ক্রুসো। ওই দীপপুঞ্জেরই আরেকটি দ্বীপের নাম রাখা হয়েছে অ্যালেক্সান্ডার সেলকির্ক, অন্যটির নাম সান্টা ক্লারা।
১৯৭৭ সালে এই দ্বীপপুঞ্জকে ‘জীবমÐলের অভয়ারণ্য’ ঘোষণা করা হয়। প্রায় এক বছর আগে চিলি সমুদ্রে এক লাখ এক হাজার বর্গমাইলের বিশাল আকারে হুয়ান ফার্নান্দেজ মেরিন পার্ক তৈরির ঘোষণা দিয়েছে। এটাই হবে প্যাসিফিক সাগরের সবচেয়ে বড় সুরক্ষিত এলাকা। একই সঙ্গে এটা চিলিতে ১৩ লক্ষ বর্গকিলোমিটারের জুড়ে একটি সংরক্ষিত সামুদ্রিক এলাকার নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করেছে। এর অর্থ হচ্ছে দেশটির জলভাগের প্রায় ৪৪ শতাংশ কোনও না কোনও ভাবে খনি খনন ও ব্যাপকভাবে মাছ শিকার থেকে সুরক্ষিত।
১০ বছর আগ পর্যন্তও চিলি সমুদ্র থেকে সম্পদ আহরণকারী দেশের মধ্যে অন্যতম ছিল। কিন্তু এখন এটা বদলে গেছে এবং সমুদ্র সুরক্ষায় তারা অন্যতম পথিকৃৎ। এখানে বিয়া¯ø সব মেরিন পার্ক তৈরি করা হয়েছে, যাতে সমুদ্রে মাছের পরিমাণ আবারও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। বিভিন্ন হুমকির মোকাবেলা করছে এসব দূরবর্তী দ্বীপগুলো। এর মধ্যে রয়েছে সমুদ্রে ফেলা প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা, এবং জুয়ান ফারনান্দেজের বাস্তুসংস্থানে নতুন আমদাকিৃত হানাদার বিভিন্ন প্রজাতি। দ্বীপে প্রায় এক হাজার মানুষ বাস করে। হুয়ান ফার্নান্দেজের জন্য অন্যতম হুমকি হচ্ছে ইঁদুর, বিড়াল এবং দক্ষিণ আমেরিকান এক ধরনের র্যাকুন। এরা দ্বীপপুঞ্জের ‘ফায়ারক্রাউন’ পাখিগুলোর জন্য বিরাট হুমকি। ইঁদুর, বিড়াল, র্যাকুন এদের ডিম আর ছানা খেয়ে ফেলে। গোলাপি পায়ের শিয়ার-ওয়াটারস পাখির জন্যও এরা বিরাট হুমকি। এই পরিযায়ী সামুদ্রিক পাখিটি শুধু এই দ্বীপপুঞ্জে আর মোকা আইল্যান্ডে বাসা বাঁধে। স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের রাস্তা এবং বাড়িতে সাদা আলোর পরিবর্তে লাল বা সবুজ আলো ব্যবহার করছে শিয়ার-ওয়াটারস পাখিকে সাহায্য করার জন্য। কুয়াশার মধ্যে উজ্জ্বল আলোয় এরা বিভ্রান্ত হয়ে ভবনে বা গাছে আছড়ে পড়ে। এটা বন্ধ করতেই বাসিন্দাদের এই উদ্যোগ। হামিংবার্ড বাসা বাঁধে যে লুমা গাছে সেগুলো সংরক্ষণেও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বø্যাকবেরি ঝোপের কারনে এই গাছগুলো বাড়তে পারে না, তাই সেগুলো ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। প্রতি দুই সপ্তাহ পর পর সাপ্লাই জাহাজে বা ঢেউয়ের সাথে ভেসে আসা প্লাস্টিকও দ্বীপটির জন্য বড় হুমকি। অন্যান্য দ্বীপ এধরনের প্লাস্টিক মূল ভ‚খÐে রিসাইক্লিংয়ের জন্য ফেরত পাঠালেও এই দ্বীপপুঞ্জ তা করে না। এখানে সব আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলা হয়। সম্প্রতি সেখানে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে যার আওতায় ২০২০ সালের মধ্যে ওই দ্বীপে সব ধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা হবে।