প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্র্যান্ডিং হতে পারে অন্যতম হাতিয়ার
বাশার আল আসাদ
ব্রান্ডিং মানে হচ্ছে ‘কমোডিটি উইথ আইডেন্টিটি’। এখানে কমোডিটি হচ্ছে পণ্য, আর আইডেন্টিটি হচ্ছে পরিচিতি। কাস্টমারের মনে একটি পণ্যের ইউনিক বা অনন্য নাম এবং পরিচিতি তৈরি করাকে ব্র্যান্ডিং বলা হয়। এক কথায় বলতে গেলে ব্র্যান্ডিং হচ্ছে আপনার ক্রেতা বা কাস্টমার প্রতি আপনার পণ্যের মান ও সেবার প্রতিশ্রæতি। বর্তমান বিশ্বের চরম প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে চাইলে ব্র্যান্ডিং হতে পারে আপনার অন্যতম হাতিয়ার। সঠিক এবং সুপরিকল্পিত ব্র্যান্ডিং এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই আপনার পণ্যের ক্রেতা আকৃষ্ট করতে পারবেন এবং ব্র্যান্ড ইমেজ বজায় রাখতে পারলে তাকে সন্তুষ্ট করে আপনার নিয়মিত কাস্টমার বানাতে পারবেন খুব সহজেই।
ব্র্যান্ডিং সঠিকভাবে করতে পারলে পণ্য বিক্রি করাটা খুব সহজ হয়ে যায়, কারণ কাস্টমার আপনার সেবা ও মানের প্রতি আসক্ত হয়ে যায়। যে কোনো ধরণের বিজনেস এর জন্য ব্র্যান্ডিংটা এখন অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। একমাত্র ব্রান্ডিংই পারে কম বিক্রি করেও পর্যাপ্ত মুনাফা করার ব্যবস্থা করতে। বাংলাদেশ যখন খেলায় জিতে, বা এভারেস্ট জয় করে, তখন আমরা দেখি, দেশের পতাকা ব্যাবহার করা হয়। এটা হচ্ছে বাংলাদেশের ব্রান্ডিং।
ব্রান্ডিং এবং মার্কেটিং এর মধ্যে পার্থক্য: ব্র্যান্ডিং এবং মার্কেটিং পুরোপুরি এক না হলেও একটির সঙ্গে আরেকটি সম্পর্কিত। ব্র্যান্ডিং কে আপনি একটি ভিন্ন মাত্রার মার্কেটিং প্ল্যান বলতে পারেন। মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে কাস্টমারকে চাপ প্রয়োগ করা হয় প্রোডাক্ট কিনতে। এক্ষেত্রে তার টার্গেট কাস্টমারকে পণ্য কেনার জন্য উদ্বুদ্ধ করার জন্য বলে, আমরা দিচ্ছি সেরা পণ্যটি, আমাদের পণ্য অন্য সকল পণ্যের থেকে ভালো ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু কোন ব্র্যান্ড কখনই এভাবে তার ব্র্যান্ডিং করবে না। ব্র্যান্ড তার কাস্টমারকে পুশ না করে পুল করে। প্রলুব্ধ না করে তার নিজের প্রতি আকৃষ্ট করে। ব্র্যান্ড তার কাস্টমারের সামনে তার তুলে ধরবে যে সে কি, কি দিচ্ছে এবং তার বৈশিষ্ট্য কি। এর ফলে তার নিজেকে কাস্টমারের কাছে গিয়ে তার পণ্য কিনতে বলতে হয় না, কাস্টমারই আকৃষ্ট হয়ে ব্র্যান্ড এর কাছে আসে তার পণ্য কিনতে।
সুতরাং ভেবে দেখুন, আপনি ব্র্যান্ডিং করবেন, নাকি গতানুগতিক মার্কেটিং করে পণ্য বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। কিভাবে ব্র্যান্ডিং করবেন যদি আপনি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে আপনি ব্র্যান্ডিং করবেন আপনার কোম্পানির বা অনলাইন শপ এর, তাহলে এখন আপনার জানতে হবে ব্র্যান্ডিং কিভাবে করতে হবে, কি কি জিনিস ব্র্যান্ডিং করার জন্য প্রয়োজনীয়। ব্র্যান্ডিং এর জন্য কিছু বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এগুলো আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে, যদি আপনি আপনার অনলাইন শপকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে দাড় করাতে চান। কি বিজনেস করবেন প্রথমেই আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কিসের বিজনেস করবেন, কি বিক্রি করবেন। আপনি কি একটি নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির প্রোডাক্ট বিক্রি করবেন? নাকি সবধরনের পণ্য বিক্রি করবেন? যদি আপনি নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির পণ্য বিক্রি করতে চান তাহলে সেটার ব্র্যান্ডিং এক রকম হবে, আবার বিভিন্ন ক্যাটাগরির পণ্য বিক্রি করতে চাইলে সেটার ব্র্যান্ডিং অন্যরকম হবে। ই-কর্মাস কোম্পানির ব্র্যান্ডিং দুইভাবে করা যেতে পারে।
১. আপনি যে পণ্য বিক্রি করছেন সেটার ব্র্যান্ডিং করুন অথবা ২. আপনার অনলাইন শপ এর ব্রান্ডিং করুন। আপনি যদি আপনার পণ্যের ব্র্যান্ডিং করতে চান তাহলে আপনার পণ্যগুলো একই ক্যাটাগরির হলে ভালো হয়। আর আপনার যদি বিভিন্ন ক্যাটাগরির পণ্য থাকে সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পণ্যের ব্র্যান্ডিং না করে আপনার অনলাইন শপটিকে ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করুন। উপযুক্ত নাম বাছাই করা ব্র্যান্ডিং করতে হলে প্রথমেই যেটা করতে হবে সেটা হল একটি উপযুক্ত নাম বাছাই করা। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এক্ষেত্রে অনেকেই ভুল করে থাকেন। আপনার কোম্পানির নামটি অবশ্যই আপনার পণ্য বা সেবার সাথে মানাসই হতে হবে। আপনি যদি জামাকাপড় বিক্রি করার সাইটের নাম চাল-ডাল এর মত রাখেন তাহলে সেটা কখনই উপযুক্ত হবে না। আপনার কোম্পানির নাম অবশ্যই আপনার পণ্য, সেবা অথবা শপের সাথে মানানসই হতে হবে। অন্যথায় ব্র্যান্ডিং করতে অনেক অসুবিধা হবে।
আপনি যদি উচ্চবিত্তদেরকে আপনার টার্গেট কাস্টমার হিসেবে নেন তাহলে বাংলা নাম আপনাকে তাদের থেকে দূরে ঠেলে দিবে। কারণ তারা ইউনিক জিনিস খুঁজেন, বিদেশী পণ্য যা সহজলভ্য নয় সেগুলো তাদের আকৃষ্ট করে, কাজেই তাদেরকে তাদের চাহিদামত সন্তুষ্ট করতে চাইলে আপনার কোম্পানির নামটাও তাদের পছন্দসই হতে হবে। নাম বাছাই করার পরের ধাপ হচ্ছে, ‘¯েøাগান’ তৈরি করা যা আপনার সেবা, মান ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আপনার কাস্টমারকে জানাবে। যেমন একাত্তর টেলিভিশন এর ¯েøাগান হচ্ছে ‘সংবাদ নয়-সংযোগ’, নোকিয়া ব্র্যান্ড এর ¯েøাগান ‘কানেক্টিং পিপল’।
আপনার বিজনেস এর একটা উপযুক্ত ¯েøাগান নির্বাচন করুন। মানানসই এবং আকর্ষণীয় লোগো তৈরি করুন। এমন লোগো তৈরি করুন যেটা সহজেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। লোগো খুব বেশী জটিল হলেই আকর্ষণীয় হবে এমন কোন কথা নেই। যদি সম্ভব হয় তাহলে প্রফেশনাল কাউকে দিয়ে লোগো ডিজাইন করে নিন, কারণ ব্র্যান্ডিং এর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে আপনার লোগো। এই লোগো যদি আকর্ষণীয় হয় তাহলে খুব সহজেই আপনি মানুষের কাছে নিজের ব্র্যান্ডকে পরিচিত করতে পারবেন। অনলাইন শপের জন্য ওয়েবসাইট জরুরী অনলাইন শপের জন্য ওয়েবসাইট জরুরী।
ওয়েবসাইটের ডিজাইন অবশ্যই ব্র্যান্ড হিসেবে উপযুক্ত হতে হবে। অন্যকে দেখে ডিজাইন নকল করতে যাবেন না। বাংলা নাম, শপিং কার্ট যুক্ত লোগোর মত আমাদের দেশের ওয়েবসাইটের ডিজাইনগুলোও ৯০% ক্ষেত্রে একই রকমের। ব্র্যান্ড কখনো কমন বা সাধারন পর্যায়ে পরে না, তার সব কিছুই ইউনিক হয়। ব্র্যান্ডিং করতে হলে অনেক টাকা লাগে এটি পুরোপুরি ভুল কথা। আপনি আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী সঠিকভাবে চেষ্টা করলে সেটাই হবে উপযুক্ত ব্র্যান্ডিং। এছাড়াও আরো অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো আপনি বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর কার্যক্রম অনুসরণ করলে বুঝতে পারবেন।