অপরাহ উইনফ্রে এক জীবন যুদ্ধে জয়ী নারীদের প্রতিনিধি
মাহমুদুর রহমান
বিশ্বের সবচাইতে ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী নারীদের মধ্যে একজন অপরাহ উইনফ্রে। কৃষ্ণাঙ্গ এই নারীর মধ্যে কি এমন আছে? কি তাঁর জীবনের গল্প? অপরাহর গল্প শুরু হয় তাঁর জন্মের আগেই। জন্ম তাঁর ১৯৫৪ সালের ২৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ রাজ্য মিসিসিপির এক কুমারী মায়ের ঘরে। বাবা পেশায় ছিলেন নরসুন্দর এবং মা গৃহপরিচারিকা। প্রথম থেকেই তার বাবা-মা আলাদা ছিলেন। যার কারনে অপরাহর শৈশব ছিল দারিদ্র্য ও যন্ত্রণাপূর্ণ। এখানেই শেষ না।
মাত্র নয় বছর বয়সেই তিনি ধর্ষণের স্বীকার হন। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন, জন্মের কিছুদিন পর যে শিশুটি মারা যায়। স্কুলে পড়াকালে টেনিসি রাজ্যের স্থানীয় একটি রেডিও স্টেশনে চাকরি পেয়ে যান। সেখানে খবরের উপস্থাপিকা হিসেবে এবং পরে তার উপস্থিত বক্তব্যে পারদর্শিতা দেখে টক শো ‘এ এম শিকাগো’ উপস্থাপন করতে দেওয়া হয়। তৃতীয় সারির টক শো অপরাহর হাত ধরে প্রথম সারিতে জায়গা করে নেয়। এরপর অপরাহ নিজের প্রডাকশন কোম্পানি খুললেন এবং আন্তর্জাতিক প্রচারে চুক্তিবদ্ধ হলেন। সেই ‘এ এম শিকাগোই’ বর্তমানের দি অপরাহ উইনফ্রে শো। মাত্র নয় বছর বয়সে যে কিশোরী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এবং সে নির্যাতন সইতে না পেরে একপযার্য়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন, কেই কি জানত এই কিশোরীই একদিন সারা বিশ্বে সফল নারীর দৃষ্টান্তে পরিণত হবেন?
‘দি অপরাহ উইনফ্রে শো’ আমেরিকার টেলিভিশনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রচারিত শো হিসেবে গণ্য। অপরাহ উইনফ্রে মূলত এই অনুষ্ঠানেরর প্রযোজক এবং উপস্থাপক। কিন্তু তিনি উপস্থাপক হিসেবেই সর্বাধিক পরিচিত। ২৫ জুলাই ২০০৭ সালে রয়টার্সে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দি অপরাহ উইনফ্রে শো-এর উপস্থাপিকা অপরাহ উইনফ্রে আমেরিকার সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া উপস্থাপক। তিনি বছরে প্রায় ২৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেন। শুধু তাই নয়, তিনিই বিশ্বের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ বিলিওনিয়ার। মাত্র ৩২ বছর বয়সেই অপরাহ মিলিওনিয়ার হয়ে যান এবং ৪১ বছর বয়সে তার মোট সম্পদের পরিমান দাঁড়ায় ৩৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত বিশ্বের একশ জন সর্বোচ্চ প্রভাবশালী মানুষের তালিকায় অপরাহ উইনফ্রে একমাত্র ব্যক্তি যিনি টানা আটবার নির্বাচিত হয়েছেন। অথচ, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটন নির্বাচিত হয়েছেন মাত্র পাঁচবার। অন্যদিকে আমেরিকার এক সময়ের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা অপরাহ উইনফ্রেকে আমেরিকার সম্ভাব্য সবচেয়ে প্রভাবশালী নারী বলে মনে করেন।
এখানেই থেমে থাকেননি অপরাহ। তার নিজের সম্পাদনায় ‘ও’ নামে ম্যাগাজিন প্রকাশের পর তিনি একজন শক্তিমান সাহিত্য সমালোচক হিসেবে পরিচিতি পান। এছাড়াও একাডেমি অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত অভিনেত্রী। অপরাহ রেডিও নামে তার একটি রেডিও চ্যানেলও রয়েছে। একটি গবেষণায় প্রকাশ পায় যে, আমেরিকায় ২০০৮-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পক্ষে তিনি এক মিলিয়নেরও বেশি সমর্থন আদায় করেন। সব দিকে সফল হলেও, ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্কই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি তাঁর। অপরাহর এই বর্ণাঢ্য কর্মজীবন নিয়ে অনেক আলোচনা যেমন হয়েছে, তেমনি সমালোচনাও কম নয়।
কিন্তু এতো কিছুর পরেও বিশ্বের ১৪০টি দেশে তার অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়েছে। আর আমেরিকাতেই তার অনুষ্ঠান দেখেছেন এমন লোকের সংখ্যা প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষ যাদের অধিকাংশই নারী। অপরাহ কেবল নারী হিসেবে নন, মানুষ হিসেবে সফল এবং জীবন যুদ্ধে জয়ী মানুষের প্রতিনিধি। (নতুন বার্তা থেকে)