দেবদুলাল মুন্না
মোবাইল ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে ঢাকায় সাইবার ক্যাফের ব্যবসা কমে গেছে। সাইবার ক্যাফের ব্যবসায়ীদের সংগঠনের গবেষণায় দেখা গেছে, ভোক্তা না থাকায় গত পাঁচ বছরে ৪০ শতাংশ দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। ২০১০ সালে ঢাকায় সাইবার ক্যাফের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার। এই সংখ্যা এখন ৩০০-এ নেমে এসেছে। সাইবার ক্যাফের ব্যবসায়ীদের সংগঠনের সূত্রে জানা গেছে, এই শিল্পে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছিল। এছাড়া গত ১৫ বছরে ১.৫ বিলিয়ন টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। কম দামের স্মার্টফোনের আগমন, পাশাপাশি হাই-স্পিড ইন্টারনেটের প্রসার আর মোবাইল অপারেটরদের মোবাইল ইন্টারনেটের নানা ধরনের প্যাকেজ সাইবার ক্যাফের ব্যবসাকে লোকসানের দিকে নিয়ে গেছে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হওয়ার পরে সাইবার ক্যাফের ব্যবসার ব্যাপক জমজমাট হয়ে ওঠে। কিন্তু বর্তমানে ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে ক্যাফে মালিকরা ফটোকপি, প্রিন্টিং, ছবি স্ক্যান, চাকরির আবেদনপত্র জমা, বেসিক কম্পিউটার ট্রেনিং, গান ও সিনেমা ডাউনলোডের মতো সেবা চালু করেছেন পাশাপাশি। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি’র তথ্য মতে, বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫১.৬২৫ মিলিয়ন। এদের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪৭.১৬৭ মিলিয়ন। মোবাইল ব্যবহারকারীরা যাতে সহজেই ইন্টারনেট সংযোগ পান, সেজন্য মোবাইল অপারেটর’রা নানা ধরনের প্যাকেজের ব্যবস্থা রেখেছেন। সেজন্য কেউ এখন আর সাইবার ক্যাফেতে দৌড়াদৌড়ি না করে নিজেরাই প্যাকেজ কিনে নেন। নেটব্যবহারকারি ইমন বলেন,‘২০০৬ বা ০৭ সালের কথা। আমি তখন সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে নেটে বসতাম। তখন ফেসবুক খুব একটা জনপ্রিয় ছিলনা। চ্যাট করার জন্য ইয়াহু মেসেঞ্জার ছিল দারুণ আকষর্ণীয় প্ল্যাটফর্ম। ইয়াহু চ্যাটরুমে ঢুকে অচেনা মানুষের সাথে চ্যাট করাটা ছিল দারুণ এক্সাইটিং একটা কাজ। নেশার মতোন। ঘন্টা নিতো ১০০ টাকা। কোনো ক্যাফেতে সস্তায়ও করা যেতো। কিন্তু স্পিড কম ছিল। আর এখন মাত্র ২২৯ টাকায় ২৮ দিনের গ্রামীন ফোনের জিবি কিনলেই অনায়াসে ২৮দিন পার করে দেওয়া যায়। ফেসবুক ইউটিউব ব্যবহার করা যাচ্ছে। নিউজ পোর্টালে খবর দেখা যাচ্ছে। আর ম্যাসেঞ্জার তো ফ্রি।আবার ওয়াইফাই ব্যবস্থাও চালু হয়েছে।ওটি ব্যবহার দরেন একবাসায় যদি চারু করেন তবে আনলিমিটেড যে যতো খুশি তেেতাবার নেট ইউজ করতে পারে। বলেন তবে কেন আর মানুষ সাইবার ক্যাফে’তে যাবে?’ ঢাকার পান্থপথে শমরিতা হাসপাতালের উল্টোদিকে একসময় ছিল বিখ্যাত সাইবার ক্যাফে ছিল‘ ক্যাফে টুয়েন্টিফোর।’ সারারাত খোলা থাকতো।এখন সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। এটির কর্ণধার শ্যামল দত্ত বলেন, ‘ ব্যবসা নেই। তাই বন্ধ করে দিয়েছি।’ সংকরের নাসির ট্রেড সেন্টারে চালু রয়েছে এখনও ‘ নেট টু নেট’ নামের সাইবার ক্যাফে। গতকাল গিয়ে দেখা যাচ্ছে কয়েকজন কম্পিউটারে কাজ করছেন। ম্যানেজার করিমকে জিজ্ঞেস করলে বললেন, ‘ এ ক্যাফেতে এখন আসলে বাংলায় কম্পোজ আর ওয়েব পেজ ডিজাইনের কাজ শেখানো নয়।’