পৃথিবীকে বাঁচাতে ক্লিন এনার্জির প্রতি ঝুঁকতে হবে, বললেন অর্থমন্ত্রী
সোহেল রহমান : দেশে পরিবেশবান্ধব ক্লিন এনার্জি উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ ক্লিন এনার্জি সামিট-২০১৯’-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। দু’দিনব্যপী এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড’ (ইডকল)।
অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রতিনিয়তই বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের মাত্র ২০ শতাংশ ক্লিন এনার্জি। অবশিষ্ট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় তেল, গ্যাস ও কয়লা দ্বারা। এর ফলে পৃথিবী নামক গ্রহ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। আমাদের বাঁচতে হলে পৃথিবীকে বাঁচাতে হবে। সবাইকে এক হয়ে ক্লিন এনার্জির প্রতি ঝুঁকতে হবে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। খাবার পানি এতোটাই অপ্রতুল হয়ে গেছে যে, তাইওয়ানে রেশন হিসেবে পানি দেয়া হচ্ছে। ব্যক্তিগত পানির সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে কিছু কিছু দেশে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলেও নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে। জলোচ্ছ্বাস বেড়েছে। সাগরের পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে খর¯্রােত। ফলে গত ৪০ বছরে বাংলাদেশের ২৬ শতাংশ জমি নদী-সাগরে হারিয়ে গেছে। পাশাপাশি ইতোমধ্যে বিশ্বে যে হারে বরফ গলা শুরু হয়েছে Ñতা অব্যাহত থাকলে খুব শিগগিরই বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের বেশকিছু উপকূলীয় অঞ্চল পানির নিচে চলে যাবে। যা আমাদের জন্য ভয়াবহ ব্যাপার।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আগের তুলনায় বর্তমানে প্লেনে (আকাশ পথে যাত্রায়) ঝাঁকুনিও বেড়েছে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে এ ঝাঁকুনি আরও ২৫ ভাগ বাড়বে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় তহবিল বাড়ানোর জন্য দাতাদের প্রতি আহবান জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে পৃথিবীকে রক্ষা করা যাবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারাবিশ্ব ইতোমধ্যেই ২৬ শতাংশ উপকূলীয় জমি হারিয়েছে। বিশ্বব্যাপী আমরা প্রতিবছর ২ হাজার হেক্টর জমি হারাচ্ছি। আমরা কার্বন নিঃসরণ কম করছি। উন্নত দেশগুলো বিশেষ করে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, রাশিয়া ও ভারত বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত করছে। আর এর খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের মতো দেশগুলোকে। এর বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় বিশ্বে মাত্র ২৭২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হচ্ছে, যা খুবই সামান্য।
ইআরডি সচিব ও ইডকল চেয়ারম্যান মনোয়ার আহমেদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) আবুল কালাম আজাদ, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. আহমাদ কায়কাউস, ইডকলের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মাহমুদ মালিক, এডিবি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ প্রমুখ।
ড. আহমাদ কায়কাউস বলেন, গত ৫০ বছর ধরে গ্রিন এনার্জিতে বিনিয়োগ কার্যক্রম চলছে। আমাদের এখন ৫ দশমিক ৩ মিলিয়ন সোলার হাউস সিস্টেম বিতরণ করা হয়েছে। আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুতের ১০ শতাংশ সোলার সিস্টেমের আওতায় নিয়ে আসতে চাই।
অনুষ্ঠানে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেন, গ্রিন এনার্জিতে ৫৩৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা করেছে এডিবি। চাহিদা ব্যবস্থাপনা ও ইনভেস্টমেন্ট রিটার্ন সঠিকভাবে ব্যবহার করাই হলো মূল চ্যালেঞ্জ। সম্পাদনা : ইকবাল খান