বর্তমান হারে এলএনজি আমদানিতে বছরে সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা ঘাটতিতে পড়বে জ্বালানি খাত
শাহীন চৌধুরী : বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী দিনে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করলে বছরে ২৪ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা ঘাটতির মুখে পড়বে জ্বালানি বিভাগ। চলতি বছর এপ্রিল মাস থেকে আরও ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে। এ কারণে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির জন্য গণশুনানি শুরু করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইঅঅরসি)।
গতকাল সোমবার রাজধানীর টিসিবি মিলনায়তনে বিইআরসি গ্যাসের মূল্যহার পরিবর্তনের ওপর গণশুনানিতে পেট্রোবাংলা গ্যাসের দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরে ঘাটতি মোকাবিলায় গ্যাসের দাম বাড়ানো দরকার বলে মন্ত্যব্য করে। গণশুনানি গ্রহণ করেন বিইআরসি পূর্ণাঙ্গ কমিশন। এতে উপস্থিত ছিলেন চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য আব্দুল আজিজ, মিজানুর রহমান, রহমান মুরশেদ এবং মাহমুদউল হক ভুইয়া।
শুনানীকালে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রুহুল আমিন জানান, দেশে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহের জন্য এলএনজি আমদানি অব্যাহত রাখতে হবে। সঙ্গত কারণে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনও বিকল্প নেই। শুনানির শুরুতে কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম বলেন, এখনো সামিট-এর এলএনজির ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়নি। আগামী এপ্রিল থেকে আরও ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। ফলে তখন থেকে ঘাটতি আরও বেড়ে যাবে। এ কারণেই গ্যাসের দাম সমন্বয় করা দরকার।
পেট্রোবাংলা জনায়, ঘাটতি মেটাতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তিন হাজার ৬৬০ কোটি টাকা দরকার। কিন্তু অর্থ বিভাগ পেট্রোবাংলাকে কোনও অনুদান দেয়নি। পেট্রোবাংলা তার আবেদনে বলছে, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া, বাণিজ্যিক ব্যাংকে পর্যাপ্ত ডলার সঞ্চিত না থাকায় বেসরকারি ব্যাংককে সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এভাবে অর্থায়ন করলে আরও ৫ ভাগ খরচ বাড়বে।
পেট্রোবাংলার লিখিত আবেদনে দেখা যায়, বর্তমানে দেশের কোম্পানি বিজিএফসিএল’র কাছ থেকে ৭৭২ মিলিন ঘনফুট গ্যাস ৭০ পয়সা হারে (প্রতি ঘনমিটার), বাপেক্সের কাছ থেকে ৩ টাকা ৪ পয়সা হারে ১০৮ মিলিয়ন ঘনফুট, এসজিএফসিএল -এর কাছ থেকে ২০ পয়সা হারে ১২৪ মিলিয়ন ঘনফুট, আইওসির কাছ থেকে ২ দশমিক ৫৫ টাকা হারে ১ হাজার ৭১২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কেনা হচ্ছে, যার ইউনিট প্রতি দাম পড়ছে গড়ে প্রায় সাড়ে ৬ টাকার মতো। আর আমদানি করা এলএনজির দাম পড়বে ৩৯ দশমিক ৮২ টাকা। বর্তমানে গড়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ৭ দশমিক ১৭ টাকা দরে বিক্রি করছে। এর সঙ্গে এলএনজি চার্জ ৯ দশমিক ৫৫ টাকা হারে নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছে পেট্রোবাংলা।
বিইআরসি’র এই শুনানী অব্যাহত থাকবে। পরবর্ততে কমিশন বৈঠকে মূল্য সম্বয়নের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। সম্পাদনা : ইকবাল খান