গৃহনির্মাণ ঋণ পাবেন বিচার বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
সোহেল রহমান : ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকারের গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান কর্মসূচীর আওতায় এলেন বিচার বিভাগের (জুডিসিয়াল সার্ভিস) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সাধারণ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একই প্রক্রিয়া ও বিধি-বিধান অনুসরণ করতে হবে। তবে বেতন গ্রেড/স্কেল ভেদে ৫ম গ্রেডের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রাপ্য সর্বোচ্চ ঋণসীমা একই গ্রেডের সাধারণ কর্মকর্তাদের তুলনায় কিছুটা কম।
অতি সম্প্রতি ‘সরকারি কর্মচারিদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা’ শীর্ষক এ-সংক্রান্ত একটি সংশোধিত পরিপত্র জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। একই সঙ্গে ইতোপূর্বে (৩০ জুলাই, ২০১৮) জারিকৃত একই শিরোনামের পরিপত্রটি বাতিল এবং সংশোধিত পরিপত্রটি চলতি অর্থবছরের গত ০১ জুলাই থেকে কার্যকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সংশোধিত পরিপত্রে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রাপ্তির সর্বোচ্চ বয়সসীমা দুই বছর বাড়িয়ে ৫৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোপূর্বে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৫৬ বছর নির্ধারণ করা হয়েছিল।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গৃহ নির্মাণ ঋণ কমসূচীর আওতা আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামীতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও এর আওতায় আসবেন। তাদের জন্য পৃথক একটি নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, গৃহ নির্মাণ বা ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য জুডিসিয়াল সার্ভিসের চাকরিজীবীরা বেতন গ্রেড/স্কেল ও স্থানভেদে (ঢাকা মহানগর/জেলা সদর/অন্যান্য এলাকা) সর্বনি¤œ ৪৫ লাখ টাকা (৬ষ্ঠ ও ৫ম গ্রেড) এবং সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা (৪র্থ গ্রেড থেকে তদূর্ধ্ব) ঋণ পাবেন। জুডিসিয়াল সার্ভিসের ৪র্থ গ্রেড (৪৪,৪৫০/- তদুর্ধ্ব) থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের এলাকাভেদে সর্বোচ্চ ঋণসীমা হচ্ছে ৭৫ লাখ টাকা, ৬০ লাখ টাকা ও ৫০ লাখ টাকা। ৬ষ্ঠ ও ৫ম গ্রেডের (৩০,৯৩৫/- থেকে ৩৪,৫৪০/-) কর্মকর্তাদের এলাকাভেদে সর্বোচ্চ ঋণসীমা হচ্ছে ৬৫ লাখ টাকা, ৫৫ লাখ টাকা ও ৪৫ লাখ টাকা।
অন্যদিকে সাধারণ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন গ্রেড/স্কেল ও এলাকাভেদে সর্বনি¤œ ঋণসীমা হচ্ছে ২০ লাখ টাকা (২০তম গ্রেড) এবং সর্বোচ্চ ঋণসীমা হচ্ছে ৭৫ লাখ টাকা (৫ম থেকে তদূর্ধ্ব)।
নীতিমালা অনুযায়ী, ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান সংক্রান্ত যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে সরকারি কর্মচারিদের গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রক্রিয়াকরণ করবে। সরকারি সংস্থা কর্তৃক নির্মিত ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে বরাদ্দপত্রের ভিত্তিতে ত্রি-পক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে ঋণ প্রক্রিয়াকরণ করা যাবে। সরকার নির্ধারিত ঋণসীমা ও বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান (ব্যাংক) কর্তৃক যথাযথ পদ্ধতিতে নিরূপিত প্রাপ্য ঋণের পরিমাণ Ñএ দুয়ের মধ্যে যেটি কম, সে পরিমাণ ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণের কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়। সিলিং নির্ধারণের ক্ষেত্রে জমিসহ তৈরি বাড়ি ক্রয় ও ফ্ল্যাটের ক্রয় মূল্যের সঙ্গে রেজিস্ট্রেশন ফি অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে ঋণ প্রদানের ডেট ইক্যুইটি রেশিও হবে ৯০:১০।
নীতিমালা অনুযায়ী, ঋণ প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত ভূমি বা ফ্ল্যাট সম্পূর্ণ দায়মুক্ত হতে হবে এবং বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাট ভবনের নকশা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কেইস-টু-কেইস ভিত্তিতে ঋণ প্রদান করবে এবং ঋণের বিপরীতে ঋণ গ্রহীতাকে রেজিস্টার্ড দলিল মূলে বন্ধকী প্রদান করতে হবে। তবে বাস্তুভিটার ক্ষেত্রে ঋণ গ্রহীতার অন্য কোনো সম্পত্তি বন্ধক রাখা যাবে।
গৃহ নির্মাণ ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ শতাংশ সরল সুদ। তবে সুদের হারের অর্ধেক সরকার ভর্তুকি দেবে। অর্থাৎ সরকারি চাকরিজীবিদের ৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। বিশ বছর মেয়াদে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে চার কিস্তিতে এবং ফ্ল্যাট কিংবা জমিসহ বাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে এক কিস্তিতেই পুরো অর্থ প্রদান করা হবে। ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোন প্রসেসিং ফি কিংবা আগাম ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে কোন প্রকার অতিরিক্ত ফি প্রদান করতে হবে না। গ্রুপভিত্তিক ঋণও নেওয়া যাবে। ঋণের গ্রেস পিরিয়ড বাড়ি নির্মার্ণের ক্ষেত্রে ঋণের প্রথম কিস্তির অর্থছাড়ের পর ১ বছর এবং ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে অর্থছাড়ের পর ৬ মাস গ্রেস পিরিয়ড নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনসহ সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে এই ঋণ প্রদান করা হবে। ঋণ গ্রহীতা যে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করবে সেই ব্যাংকে তার মাসিক বেতনের হিসাব খুলতে হবে। মাসিক বেতন-ভাতার সঙ্গে সুদের ভর্তুকির অর্থ প্রদান করা হবে। তবে ঋণ গ্রহীতার মাসিক কিস্তির টাকা বেতন-ভাতা ও ভর্তুকীর অর্থ থেকে কেটে নেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। সম্পাদনা : ইকবাল খান