স্বপ্না চক্রবর্তী : রানা প্লাজা ধ্বসের পর পরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিএসি) বা রপ্তানিতে অগ্রাধিকার প্রাপ্তির বিষয়টি স্থগিত করা হয়েছিল ছয় মাসের জন্য। পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নসহ আরও কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে সুবিধাটি ফিরিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও ছয় বছর পার হয়ে গেলেও সুবিধাটি ফিরে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের মতো এত বড় একটি বাজারে ডিউটি ফ্রি তে রপ্তানি করতে পারছেন না উদ্যোক্তারা। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে তাই জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন দেশের পোশাক ব্যবসায়ীরা।
সম্প্রতি বিজিএমইএ কার্যালয় পরিদর্শনে এলে মার্কিন দূত রবার্ট মিলারের কাছেও জিএসপি ফিরে পেতে আবেদন জানায় সংগঠটির সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, রানা প্লাজা ধ্বসের পর বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ ও শ্রমিক নিরাপত্তা নিয়ে শংকার প্রেক্ষিতে ১৬ টি শর্তসাপেক্ষে ২০১৩ সালে আমাদের জিএসপি সুবিধা বাতিল করে দেয়। এই সময়ের মধ্যে আমরা ১৫টি শর্ত পূরণ এবং আদালতের নির্দেশের কারণে একটি শর্ত স্থগিত থাকার পরও জিএসপি সুবিধা ফিরে পাই নি। তবুও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত শ্রমিকদের চাকরিচ্যুতের ঘটনাটি তুলে ধরলে আমরা তাকে জানিয়েছি যে কোনো শ্রমিককেই অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয় নি। আর ১১ হাজার নয় চাকরি গেছে মাত্র ৪ হাজার শ্রমিকের। যারা ভাংচুর আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলো। রবার্ট মিলার আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন দেখা যাক এখন কি হয়। আশার কথা, মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, জিএসপি ইস্যুতে চিঠি দিয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
এ ব্যাপারে পোশাক মালিকদের অপর সংগঠন বিকেএমইএ এর সহ-সভাপতি মনসুর আহমেদ বলেন, শুধু উদ্যোক্তারা না। সরকারের শীর্ষ মহল থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট দফতরের দায়িত্বশীলদের উচিত প্রয়োজনীয় যুক্তিতর্ক দিয়ে জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরা। কারণ ২৪৩টি পণ্যে পাওয়া জিএসপি স্থগিত থাকায় শুধু তৈরি পোশাক না আমাদের প্লাস্টিক, সিরামিকসহ অনেক খাত ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
তবে জিএসপি সুবিধা হারায় যতটা না অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে তার চাইতে ইমেজের ক্ষতি বেশি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমেরিকার বাজারে জিএসপি সুবিধা হারানো আমাদের জন্য খুবই অসম্মানজনক। তবে বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যেখানে বাড়তি সুবিধার দাবিদার আমরা সেখানে জিএসপি সুবিধা দীর্ঘমেয়াদে স্থগিত থাকার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এতে করে আমাদের রফতানিমুখী শিল্পগুলোকে প্রতিযোগী দেশগুলোর কাছে মার খেতে হচ্ছে। জিএসপি সুবিধা না থাকার কারণে পণ্যভেদে ১২ থেকে ২০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক গুনতে হচ্ছে আমাদের রফতানিকারকদের। বলার অপেক্ষা রাখে না এতে করে পর্যায়ক্রমে উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশের কাতারে যাওয়ার আমাদের প্রচেষ্টাও বিলম্বিত ও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সম্পাদনা : ইকবাল খান