এলএনজি অজুহাতে বাখরাবাদের গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব
স্বপ্না চক্রবর্তী : পাইপলাইন তৈরি না হলেও এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আসবে এই অজুহাতে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। শুধু বাখরাবাদ নয় অন্যান্য গ্যাস বিতরণ কোম্পানীগুলোও দাম বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কোম্পানি (বার্ক) এর কাছে।
গতকাল বুধবার বিতরণ কোম্পানীগুলোর দাম বাড়ানোর গণশুনানিতে উপস্থিত বক্তারা বলেন, এখনও পাইপলাইনই নির্মিত হয়নি। কবে এলএনিজ আসবে তারও ঠিক নেই। এই অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনোও যুক্তিই নেই। বরং প্রি-পেইড মিটার দিয়ে গ্যাস সাশ্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। বার্ক অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ গণশুনানির তৃতীয় দিন উপস্থিত ছিলেন, কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য মিজানুর রহমান, মাহমদুউল হক ভুইয়া, রহমান মুর্শেদ, আব্দুল আজিজ খান। শুনানিতে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি আবাসিকে এক চুলা বর্তমান দর ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩শ’ ৫০ টাকা, দুই চুলা ৮শ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪শ’ ৪০ টাকা, প্রি-পেইড মিটারে ৯.১০ (ঘনমিটার) টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬.৪১ টাকা করার প্রস্তাব করেছে।
অন্যদিকে বিদ্যুতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩.১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯.৭৪ টাকা, সিএনজিতে ৩২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৮.১০ টাকা, সার উৎপাদনে প্রতি ঘনমিটার ২.৭১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮.৪৪ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ৯.৬২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮.০৪ টাকা, শিল্পে ৭.৭৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৪.০৫ টাকা, বাণিজ্যিকে ১৭.০৪ টাকার পরিবর্তে ২৪.০৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাখরাবাদের গ্যাস কোম্পনির পক্ষে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম এবং জেনারেল ম্যানেজার (অর্থ) নারায়ন চন্দ্র পাল বক্তব্য রাখেন।
এই প্রস্তাবের তীব্র প্রতিবাদ করে এসময় জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সালেক সুফি বলেন, বিতরণ কোম্পানিগুলো এলএনজি আমদানির যৌক্তিকতা তুলে ধরছে, কিন্তু তারা সেটা পারে না। তারা বিভিন্ন কোম্পানিকে ঋণ দিয়েছে। এটা কোন নীতিতে দিয়েছে তারা? তারা কি ব্যবসায়ী নীতি পরিবর্তন করেছে?’ তিনি আরও বলেন, তারা বলছে, পেট্রোবাংলার নির্দেশে দিয়েছে। এপ্রিল থেকে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আসবে বলা হচ্ছে। কিন্তু পাইপলাইনের কাজই শেষ হয়নি। গ্যাস আসবে না তাই ধরে নিয়ে গ্যাসের দাম সর্বোচ্চ ৬০০/৭০০ টাকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
এসময় কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আবাসিকে মিটার না দিয়ে গ্যাসখাতকে দুর্নীতির মধ্যে রাখা হচ্ছে। মিটার যুক্ত গ্রাহকের ৩০০/৪০০ টাকা বিল আসে। মিটার বিহীনরা দিচ্ছে ৭০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা। কিন্তু তারা ৫০ ভাগও গ্যাস ব্যবহার করে না। এটা বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশ হাউজ অ্যান্ড ফ্ল্যাট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, আপনারা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দিতে পারবেন না। তাহলে দাম বাড়াবেন কেন? দুর্নীতি ছাড়া গ্যাসের কোনও কাজ হয় না। এই দুর্নীতি বন্ধ করতে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এখনই কোম্পানিগুলো লাভজনক জায়গায় আছে। দুর্নীতি বন্ধ করা গেলে গ্যাসের দাম না বাড়িয়েই আরও লাভ করতে পারবে কোম্পানিগুলো। সম্পাদনা : ইকবাল খান