ফেসবুক, টুইটার বা হোয়াটসঅ্যাপে ‘না’ বোঝানোর নতুন ইমোজি এখন এই তিন চাকার যান
আবুল বাশার
অটোরিকশা – তিন চাকার এই যানে চেপে কোথাও যেতে চেয়ে চালক মুখের ওপরে যাব না বলেননি, এরকম যাত্রী হয়তো খুঁজে পাওয়া সত্যিই কঠিন। বলা যায়, এই অভিজ্ঞতা ভারতের প্রায় সব শহুরে মানুষের হয়েছে। আর বাংলাদেশের ঢাকার মানুষেরাও এই অভিজ্ঞতার বাইরে নেই – সেখানকার সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে।
আবার চটজলদি কোথাও যাওয়ার জন্য এই যানের জুরি মেলাও ভার – ট্যাক্সি বা ক্যাবের থেকে কিছুটা সস্তাও। কিন্তু আপনি যেখানে যেতে চান, সেই দিকে যাওয়ার মতো অটোরিকশা কিছুতেই পাবেন না তাড়াতাড়ি সময়ে। চালকদের এই যাত্রী প্রত্যাখ্যানের কারণে সাধারণ মানুষ যে কতটা ত্যক্ত-বিরক্ত হতে পারে, তার প্রমাণ গত কদিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে একটা ‘ইমোজি’র কারণে। ঘটনা হল, নানা ব্রাউজার আর সামাজিক মাধ্যমে কোন ইমোজি ব্যবহৃত হবে, সেটা যারা চূড়ান্ত করে, সেই ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম ২০১৯ সালের নতুন ইমোজিগুলোর মধ্যে রেখেছে এই অটোরিকশাকে। কালো-হলুদ রঙের এই নতুন ‘অটোরিকশা ইমোজি নিয়েই সাধারণ মানুষ তাদের ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন কিছুটা মজার ছলেই। অনেকেই বলছেন, কোন কিছুতে না বোঝাতে তারা অটোরিকশার এই ইমোজি ব্যবহার করছেন – অর্থ্যাৎ না এর সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করছেন। দিল্লি-কলকাতায় এই অটোরিকশার রঙ সবুজ, অনেকটা ঢাকার মতোই। কিন্তু ভারতের অনেক শহরে কোথাও কালো, কোথাও বা হলুদ-কালো রঙের অটোরিকশা চলে।
যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করা এক তথ্যপ্রযুক্তি বিজ্ঞানী অংশুমান পান্ডে অটোরিকশা নিয়ে ইমোজি তৈরির আবেদন পাঠিয়েছিলেন ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামের কাছে। সেই আবেদনে অবশ্য অটোরিকশা কীভাবে ভারত-বাংলাদেশসহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নানা দেশে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে মিশে আছে, তার ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন তিনি। কোন ছবিগুলিকে ইমোজিতে রূপান্তরিত করা যায়, তাও জানিয়েছিলেন ড. পান্ডে। অটোরিকশা ইমোজি নিয়ে যে ভারতে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ চলছে, সেটা বিবিসি বাংলার কাছে জানতে পেরে ড. পান্ডের মন্তব্য, ‘লোল! অটোরিকশাকে যে যেরকম খুশি ব্যবহার করতেই পারে!’
একটু দেখে নেওয়া যাক অটোরিকশা ইমোজি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে কে কী লিখছেন: স্বপ্নিল নামের একজনের টুইট বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। তিনি লিখেছেন, চেষ্টা করলাম এই ইমোজিটা পাঠাতে, কিন্তু সে ‘নেহি যায়গা’ বলে জবাব দিল’, অনেকটা যেভাবে অটোরিকশা চালকরা যাত্রী তুলতে অস্বীকার করে দেয় মুখের ওপরে। হরিশ আয়াঙ্গার নামের একজন নতুন ইমোজির ছবি টুইট করে বলেছেন, ‘না বলতে হলে এই ইমোজি ব্যবহার করা যেতে পারে।’ ‘সাইকেল চেন শঙ্কর’ নামে এক টুইট ব্যবহারকারী লিখেছেন, আশা করি এই ইমোজিটা অন্তত ওদিকে যাব না বলবে না। ‘ক্লাইভ’ নামের একজন আবার মজা করে লিখেছেন, এই একটামাত্র অটোই বোধহয় মুম্বাইতে পাওয়া যাবে! রুশভ শেঠ অবশ্য ব্যঙ্গ করেই অটোরিকশা চালকদের পক্ষ নিয়েছেন। এক অটোচালকের জবানিতে তিনি লিখছেন, মুম্বাই অটোওয়ালা: আমাদেরও সময় আসবে একদিন। সামাজিক মাধ্যমের বাইরেও আলোচনা হচ্ছে অটোরিকশা ইমোজি নিয়ে।
কলকাতায় অটো চলে নির্দিষ্ট রুটে, তাই যাত্রী প্রত্যাখ্যানের সুযোগ তাদের বড় একটা নেই। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কম নয়।এই ইমোজিটা ব্যবহার করা যেতে পারে, ‘অটোক্র্যাসি’ বোঝাতে – এখানে অটোক্র্যাসি মানে একনায়কতন্ত্র নয়, অটোরিকশা দৌরাত্ম্য অর্থে বলতে চাইছি, বলছিলেন কলকাতার একটি স্কুলের শিক্ষক তিলক মহালনবিশ। দক্ষিণ কলকাতার একটি অটোরিকশা ইউনিয়নের প্রধান দেবরাজ ঘোষের মন্তব্য, অটোরিকশা যে পরিষেবা দেয়, তার স্বীকৃতি এই ইমোজি! তিনি অবশ্য স্বীকার করেন যে যাত্রীদের পছন্দ মত যে কোন রুটে যেতে অনেক সময় চালকরা অস্বীকৃতি জানান, হয়তো নতুন ইমোজি তারই প্রতিফলন। তবে তাঁর মতে, অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করেন অটো চালকরা, তাই হয়তো মানুষ এরকম মন্তব্য করছেন।