আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৩
৬ মাস পরেই প্রথম ইউনিটে উৎপাদন মোট ব্যয় ২১ হাজার কোটি টাকা পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে বছরে কয়লা লাগবে ৪০ লাখ টন
শাহীন চৌধুরী : বিদ্যুৎ খাতে বর্তমান সরকারের মেগা প্রকল্পের অন্যতম পায়রা কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। কয়লা ভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা ৫০ ভাগ ইন্দোনেশিয়া থেকে এবং ৫০ ভাগ অষ্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা হবে। জাহাজে আসা কয়লা খালাশের জন্য এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একাধিক নিজস্ব জেটি থাকবে যাতে কোন বন্দরের ওপর নির্ভর করতে না হয়। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি বছর ৪ মিলিয়ন টন বা ৪০ লাখ টন কয়লা ব্যবহৃত হবে। কোন অবস্থায় বিদ্যুৎ উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য সব সময় দুই মাসের কয়লা মজুত রাখা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ফেজ অর্থাৎ ১৩২০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট ৬৬০ মেগাওয়াট উৎপাদনে যাচ্ছে আগামী ৬ মাসের মধ্যেই উৎপাদনে যাচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ২ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। এই বিদ্যূৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের মূল্য হবে ৬ টাকা ৫০ পয়সা।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শাহ আব্দুল মওলা আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী আগস্ট মাসেই আমরা প্রথম ফেজের প্রথম ইউনিটের সিংক্রোনাইজেশন করবো। আর এর দু’ মাস পরেই আমরা পুরো মাত্রায় উৎপাদনে যেতে পারবো। সে হিসেবে চলতি বছর অক্টোবর মাসেই ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হচ্ছে পায়রায়। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন শুরু হওয়ার মধ্য দিয়ে কয়লা ভিত্তিক দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, পায়রা বিদ্যুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় ফেজে আরও ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। ওই অংশের ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন, কনসালট্যান্ট নিয়োগের কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। গত বছর নভেম্বর থেকে দ্বিতীয় ফেজের ফিজিক্যাল ওয়ার্কও শুরু হয়ে গেছে। এই ফেজের বিদ্যুৎ উৎপাদনের টার্গেট রয়েছে ২০২২ সালে জুন মাসে। এই অংশেরও প্রকল্প ব্যয় প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ দুই ফেজ মিলিয়ে এই প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দ প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। আর বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে ২ হাজার ৬শ’ ৪০ মেগাওয়াট। দেশে এ পর্যন্ত গৃহীত প্রকল্পের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প।
সূত্রমতে, এই বৃহৎ প্রকল্পের ৫০ ভাগ অর্থ বিনিয়োগ করবে বাংলাদেশ আর বাকি ৫০ ভাগ অর্থ বিনিয়োগ করবে চীন। এজন্য বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে এই প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড এবং চায়নার পক্ষে রয়েছে সিএমসি চায়না লিমিটেড।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের প্রথম ফেজের জন্য ৪৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। আর দ্বিতীয় ফেজের জন্য ২২৫ একর জমি অধিগহণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় ফেজের জমি কম হওয়ার কারণ হচ্ছে লিভিং এরিয়া, অফিসসহ অনেক স্থাপনাই প্রথম ফেজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বা বিপিডিবি এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ ক্রয় করে তার অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির লাইফ টাইম ধরা হয়েছে ২৫ বছর। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শাহ আব্দুল মওলা আরও বলেন, দেশের বিদ্যুৎ চাহিদার কথা বিবেচনা করে এ ধরণের মেগা প্রকল্প গ্রহণের কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, সমস্ত পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম হব। সম্পাদনা : ইকবাল খান