আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
মূলধন ঘাটতি পূরণে ১৯ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক
সোহেল রহমান : মূলধন ঘাটতি পূরণে সরকারের কাছে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ‘বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক’ (বিকেবি) চেয়েছে সবচেয়ে বেশি ৭ হাজার ৯৩৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। চাহিদার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জনতা ব্যাংক। জনতা ব্যাংক চেয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা। অপর দুই ব্যাংকের মধ্যে ‘রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক’ (রাকাব) মূলধন ঘাটতি পূরণে ৭৭৫ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধনের সরকারি অংশ পূরণে গ্রামীণ ব্যাংক চেয়েছে ১ কোটি ১২ লাখ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ‘মূলধন পুনর্গঠনে বিনিয়োগ’ খাতে মোট বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো চেয়েছে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। এত টাকা কখনোই দেয়া সম্ভব নয়। গত অর্থবছরে মূলধন ঘাটতি পূরণে ব্যাংকগুলোকে মোট ২ হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়েছিলো।
জানা যায়, চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে কী পরিমাণ অর্থ দেয়া যায়Ñ ইতিমধ্যে এর একটি খসড়া তৈরি করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সূত্রমতে, খসড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে ৮৪৯ কোটি টাকা (চাহিদা ৭,৯৩৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা); রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে ৫০০ কোটি টাকা (চাহিদা ৭৭৫ কোটি টাকা) জনতা ব্যাংককে ১০০ কোটি টাকা (চাহিদা ৬ হাজার কোটি টাকা) ও বেসিক ব্যাংককে ৫০ কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রসঙ্গত গত অর্থবছরে মূলধন ঘাটতি পূরণে বেসিক ব্যাংককে কোনো অর্থ দেয়া হয়নি। ব্যাংকটিকে পৃথকভাবে ‘নার্সিং’ করা হবে বলে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ওই সময় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। এ কারণে মূলধন ঘাটতি পূরণে বেসিক ব্যাংক এবার কোনো বরাদ্দ চায়নি।
জানা যায়, মূলধন ঘাটতি পূরণে আবেদনকৃত অপর তিনটি ব্যাংকের মধ্যে গত অর্থবছরে জনতা ব্যাংককে ৪০০ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে (বিকেবি) ৪০০ কোটি টাকা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে (রাকাব) ১৭৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ও গ্রামীণ ব্যাংককে সরকারি শেয়ারের বকেয়া অর্থ বাবদ ২১ লাখ টাকা দেয়া হয়েছিলো।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এখনো কোনো চাহিদাপত্র পাওয়া যায়নি। পেলে সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আগামী জুনে মূলধন ঘাটতি পূরণে অর্থ ছাড় করা হবে। তবে এর পরিমাণ কোনোভাবেই ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি হবে না। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান
জানা যায়, গত চারটি অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে মোট ১০ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেয়া হয়েছে বেসিক ব্যাংক-কে। এই ব্যাংককে মোট দেয়া হয়েছে ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। বরাদ্দের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সোনালী ব্যাংক। এ ব্যাংকটিকে দেয়া হয়েছে ৩ হাজার ৩ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে অগ্রণী ব্যাংক-কে ১ হাজার ৮১ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক-কে ৮১৪ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক-কে ৭২৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ও রূপালী ব্যাংক- কে ৩১০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংকের (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, বেসিক, বিকেবি ও রাকাব) মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৬১১ কোটি টাকা। এর আগের বছর (২০১৭) ব্যাংকগুলোর মুলধন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২০ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি বেড়েছে ৪ হাজার ২১৩ কোটি টাকা। আবেদনকৃত চারটি ব্যাংকের মধ্যে গত ডিসেম্বর (২০১৮) শেষে বিকেবি’র মূলধন ঘাটতি ৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা (আগের বছর ছিল ৭ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা); জনতা ব্যাংকের ৫ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা (আগের বছর ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা) ও রাকাব-এর মূলধন ঘাটতি ৭৭৫ কোটি টাকা (আগের বছর ছিল ৮০০ কোটি টাকা) দাঁড়িয়েছে।