পৃথিবীতে আসছে নিরপেক্ষ এক কণ্ঠস্বর
ফখরুল মজুমদার
নারী ও পুরুষ ছাড়া আর কি কোনো কণ্ঠস্বর শোনার অভিজ্ঞতা হয়েছে আপনার? না, ভৌতিক কোনো কিছুর কথা বলিনি। মেল-ফিমেলের বাইরে কোনো ভয়েজ শুনেছেন কি? হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। তৃতীয় কোনো স্বর শোনার অভিজ্ঞতা হয়েছে কি না ভেবে দেখুন। চিরাচরিত দুই মনুষ্য কণ্ঠের বাইরে কি কোনো স্বর শুনেছেন? আজগুবি কথাবার্তা মনে হলেও এমনটি হতে যাচ্ছে। নিজেকে প্রস্তুুত করুন, নারী কিংবা পুরুষের বাইরের ভয়েজ শোনার। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় এমন কিছুই সম্ভব হতে যাচ্ছে। লিঙ্গ নিরপেক্ষ কণ্ঠস্বর আসছে পৃথিবীতে। বিশ্বের প্রথম লিঙ্গ নিরপেক্ষ কণ্ঠস্বর বানানোর দাবি করেছেন ভারচু নরডিকস ও কোপেনহেগেন প্রাইড এর বিজ্ঞানীরা। স্বল্প পরিসরে থাকছে না এই নিরপেক্ষ লিঙ্গের কণ্ঠস্বর। সব ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় ব্যবহৃত হবে এটি। হালের আলোচিত অ্যাপলের সিরি থেকে শুরু করে অ্যামাজনের অ্যালেক্সা পর্যন্ত প্রায় সব আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যাসিস্টেন্ট সেবাতেই ব্যবহার করা হয় ডিজিটাল কণ্ঠস্বর। আর এতে চিরায়ত কণ্ঠ শুনেই অভ্যস্ত থাকেন গ্রাহকরা। অ্যাপলের সিরি কিংবা অ্যামাজনের অ্যালেক্সাতে ব্যবহার হয় নারী বা পুরুষের কণ্ঠস্বর। ডিজিটাল সেবাতে এই দুই কণ্ঠের উপর নির্ভর করতে হয় তাদের। কিন্তু চিরায়ত এই স্বর থেকে উত্তোরণের সময় হয়তো এসে গেছে। এবার প্রথমবারের মতো এমন কণ্ঠস্বর দেখা যেতে পারে যেখানে নারী পুরুষের আধিপত্য থাকবে না। ভয়েস অ্যাসিস্টেন্ট সেবাগুলোতে যা শুনতে নারী বা পুরুষের কণ্ঠ শোনার অনুভ‚তি দেবে না। লিঙ্গহীন এই নব্য কণ্ঠস্বরের নাম দেয়া হয়েছে ‘কিউ ‘।
ভয়েজের জগৎকে আরোও বেশি উন্নত করতে আনা হয়েছে এই প্রযুক্তি। স্মার্ট অ্যাসিস্টেন্ট সেবাগুলোতেও এই কণ্ঠস্বর যোগ করার কথা ভাবছেন নির্মাতারা। প্রকল্প দলের সদস্য জুলি কারপেন্টারের মতে, লিঙ্গভিত্তিক প্রযুক্তি বানানো, বাছাই এবং মানুষ কীভাবে বিশ্বাসযোগ্যতা, বুদ্ধিদীপ্ততা এবং নির্ভরযোগ্যতার বিষয়গুলো মেনে নিচ্ছেন, এসবকিছুর মূলে রয়েছে সাংস্কৃতিক বৈষম্য। অভাবনীয় এই সফলতার জন্য কিউ এবার বৈশ্বিক আলোচনায় অংশ নিচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, সত্যিকারের উদ্ভাবনের দিকে এক ধাপ যাবে এগিয়ে কিউ। কারণ এ ধরনের আস্থা ব্যবস্থার জটিল পরীক্ষা নিচ্ছে এটি। নতুন এই কণ্ঠস্বর বানাতে পাঁচ জনের কণ্ঠ রেকর্ড করা হয়েছে, যাদের কণ্ঠস্বর নারী বা পুরুষের মধ্যে পড়ে না। এরপর ‘ভয়েস মডিউলেশন’ সফটওয়্যারের মাধ্যমে এই কণ্ঠগুলোকে লিঙ্গ নিরপেক্ষ রেঞ্জের মধ্যে নেওয়া হয়েছে। কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হবে এই প্রযুক্তিটি।
এরইমধ্যে নারী-পুরুষ কোনোটিই নয় এমন পরিবর্তিত এই কণ্ঠস্বর ৪৬০০ জন ব্যক্তির মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো, এটি কার কণ্ঠস্বর বলে মনে হয়। পুরুষ নাকি নারীর কণ্ঠস্বর। এরপর জরিপকৃতদের জবাবের ভিত্তিতে কিউ’র কণ্ঠস্বর আরও উন্নত করা হয়েছে। নারী পুরুষের কণ্ঠস্বরের সাথে অমিল করে নিখুঁত লিঙ্গহীন কণ্ঠস্বর বাছাই করা হয়। কিউ বানিয়েই ক্ষান্ত থাকছেন না নির্মাতারা। এর সমসাময়িক দিক বিবেচনায় রেখে নতুন উদ্ভাবনের কথা ভাবা হচ্ছে। কিউয়ের কণ্ঠস্বরের ওপর এখন এআই ফ্রেইমওয়ার্ক বানানোর চেষ্টা করছেন গবেষকরা, যাতে ভবিষ্যতে এটি পুরোপুরি কার্যকর ভয়েস অ্যাসিস্টেন্ট বানানো যায়। এমন দিন দূরে নয়, যেদিন মোবাইল ফোনে ভয়েজ শুনে আঁতকে উঠবেন। যারা নতুন নতুন প্রযুক্তির নিয়মিত খোঁজ রাখেন না তাদের ক্ষেত্রে চমক পাবার সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি। কিউ’র সাথে অপরিচিত হলে ভীতি সঞ্চার হতে পারে বৈপ্লবিক! (রোয়ার বাংলা থেকে)