আট হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করে সংশোধিত এডিপি উঠছে এনইসি সভায়
কালাম আঝাদ : বৈদেশিক সহায়তা অংশে ৯ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি তহবিলের অংশে এক হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত এডিপির (আরএডিপি) খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।
পরিকল্পনা সচিব মো. নুরুল আমিন জানান, সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্প সংখ্যা বাড়ছে। কারণ সারাদেশে সমভাবে উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে প্রকল্প অবশ্যই বেশি হবে। আঞ্চলিক বৈষম্য কমাতে হবে। সেজন্যই মূল এডিপির তুলনায় সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্প বাড়ছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিলো ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। সেখান থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত এডিপির আকার নির্ধারণ করা হচ্ছে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা অংশে বরাদ্দ ছিলো ৬০ হাজার কোটি টাকা। সেখান থেকে ৯ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৫১ হাজার কোটি টাকা।
অন্যদিকে সরকারি তহবিলের (জিওবি) অংশে মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। সেখান থেকে এক হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। তবে এসবের বাইরে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অর্থায়নসহ মূল এডিপির আকার ছিল ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ৮ হাজার ৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরে মোট সংশোধিত এডিপির আকার দাঁড়াবে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭১ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, সংশোধিত এডিপিতে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্রকল্পসহ মোট প্রকল্প থাকছে ১ হাজার ৯১৬টি। এর আগে মূল এডিপিতে এ সংখ্যা ধরা হয় ১ হাজার ৪৫১টি। প্রকল্প বাড়ছে ৪৬৫টি। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দহীনভাবে ৯৮৭টি নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির সুবিধার্থে ২৫৬টি বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। অন্যদিকে সংশোধিত এডিপিতে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুকূলে ২৪ হাজার ৪৪১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বিদ্যুৎ বিভাগ পাচ্ছে ২৩ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। তৃতীয় অবস্থানে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ পাচ্ছে ১৯ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। এছাড়া মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৪২৯ কোটি, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ১৬৩ কোটি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৩ হাজার ৯৮৩ কোটি, তথ্য মন্ত্রণালয় ২৩১ কোটি, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২৯৮ কোটি, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১ হাজার ২০৫ কোটি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ৩২১ কোটি, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ ১ হাজার ৭৪৫ কোটি, শিল্প মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৮৭ কোটি, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ৭১২ কোটি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ২ হাজার ১২৯ কোটি, কৃষি মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৮০৬ কোটি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৭৭৫ কোটি, পরিবেশ-বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ৫২৪ কোটি, ভূমি মন্ত্রণালয় ৬৩৪ কোটি, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ৫ হাজার ৮৫৯ কোটি, খাদ্য মন্ত্রণালয় ৬৪৫ কোটি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৯১৫ কোটি, রেলপথ মন্ত্রণালয় ৭ হাজার ৯২৫ কোটি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ২ হাজার ৮৯৪ কোটি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ১ হাজার ২১ কোটি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৮৪৫ কোটি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাদ্দ পাচ্ছে ৫৪১ কোটি টাকা।
একইসঙ্গে জাতীয় সংসদ সচিবালয় ৭৩ লাখ টাকা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ২ হাজার ৭৩ কোটি টাকা, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ১ হাজার ৪১০ কোটি টাকা, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ৭৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, সরকারি কর্মকমিশন ৪৪ কোটি টাকা, অর্থ বিভাগ ৪৩৪ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ৩৫৭ কোটি টাকা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ৫৫ কোটি টাকা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ৪০ কোটি টাকা, পরিকল্পনা বিভাগ ১৫৬ কোটি টাকা, আইএমইডি ১০৪ কোটি টাকা, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ৫৫১ কোটি টাকা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২৮৪ কোটি টাকা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৬৬ কোটি টাকা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা, আইন ও বিচার বিভাগ ৪৭২ কোটি টাকা, জননিরাপত্তা বিভাগ ১ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা, সুরক্ষা সেবা বিভাগ ২ হাজার ১৪ কোটি টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৬ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১১ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ২৫৭ কোটি টাকা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় পাচ্ছে ১ হাজার ১২২ কোটি টাকা। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান