মামলা ছাঁটাইয়ে বৈশ্বিক চাপের মুখে পোশাক শিল্প উদ্যোক্তারা
স্বপ্না চক্রবর্তী : গত বছরের ডিসেম্বর থেকে শুরু করে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ন্যূনতম মজুরির দাবিতে আন্দোলনের জের ধরে প্রায় ৬ হাজার পোশাক শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিজিএমইএর মতে চাকরি হারিয়েছে আরও প্রায় ৪ হাজার শ্রমিক। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো নানা প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও বর্তমানে চাপের মুখে দিন কাটাচ্ছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।
বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা যায়, মজুরি নিয়ে আন্দোলনের জেরে ৫ হাজার ৮৪৫ জন পোশাক শ্রমিককে আসামি করে ২৮টি মামলা হয়। এর মধ্যে গাজীপুরের কোনাবাড়ী ও গাছা, সাভার আশুলিয়া ও টঙ্গী পূর্ব থানায় ২৭টি কারখানার করা মামলায় ৪ হাজার ৩৪৫ শ্রমিককে আসামি করা। সাভার থানায় শিল্প পুলিশের করা এক মামলায় আসামি করা হয় ১ হাজার ৫০০ অজ্ঞাত শ্রমিককে। সম্প্রতি বিজিএমইএ-র সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন এ ঘটনায় চাকরিচ্যুত করা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার শ্রমিককে। তবে একজন শ্রমিককেও বিনা অপরাধে বা আইনের বাইরে ছাঁটাই করা হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, আন্তার্জাতিক পর্যায়ে আমাদের পোশাক শিল্প নিয়ে প্রতিনিয়ত নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে। যা আমাদের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। এটি বন্ধ হওয়া উচিত। এ লক্ষ্যে তিনি বিভিন্ন দেশের মিশন কর্মকর্তাদেরও নজর রাখার অনুরোধ করেন। এর আগে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি) এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল, ৯৯টি কারখানায় ১১ হাজারে বেশি শ্রমিক ছাঁটাই ও বরখাস্ত হয়েছেন। যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে জানান বিজিএমইএ এর-সহ সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাছির। তিনি বলেন, শুধু আন্দোলনের সাথে যারা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলো শুধু তাদেরকেই ছাঁটাই করা হয়েছে। কিন্তু কাউকেই আইনের বাইরে গিয়ে ছাঁটাই করা হয়নি।
এদিকে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা ও ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রচারণা শুরু করেছে ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইনসহ শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করা কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। সংগঠনটি গত ২৮ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লন্ডন, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, জেনেভা, বার্লিন, ব্রাসেলস, মাদ্রিদ ও দ্য হেগে অবস্থি বাংলাদেশের হাইকমিশনের সামনে ‘হ্যাশট্যাগ উই স্ট্যান্ড উইথ গার্মেন্ট ওয়ার্কার’ শীর্ষক কর্মসূচি পালন করে। সেখানে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা ও ছাঁটাইয়ে উদ্বেগ জানায় সিসিসি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এরকম প্রতিবাদ অব্যাহত থাকলে দেশের পোশাক খাত নতুন করে চাপের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, মজুরিসংক্রান্ত যৌক্তিক আন্দোলন করেও মামলা ও ছাঁটাইয়ের শিকার হওয়ায় শ্রমিকেরা আতঙ্কে আছেন। যৌক্তিক আন্দোলনের কারণে বহির্বিশ্ব থেকেও প্রশ্ন উঠছে। তাই সরকার ও মালিকপক্ষের উচিত হবে বিশেষ বিবেচনায় মামলাগুলো প্রত্যাহার করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মাধ্যমগুলোতে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরা। যাতে করে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প নিয়ে কারো মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি না হতে পারে। সম্পাদনা : আনিস রহমান