অল্পের জন্য বেঁচে গেলেন তামিম-মুশফিকরা
রাকিব উদ্দীন : বাংলাদেশ দলের নিউজিল্যান্ড সফর প্রায় শেষের দিকেই ছিল। রাত পোহালেই ক্রাইস্টচার্চে সিরিজের শেষ টেস্ট মাঠে গড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু গতকাল সেখানকার এক মসজিদে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ধাক্কা খেয়েছে গোটা বিশ্ব। ওই হামলার শিকার হতে পারতো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলও। সৌভাগ্যক্রমে বড় বাঁচা বেঁচে গেছে তামিম-মুশফিকরা। ক্রাইস্টচার্চের মসজিদ আল-নূরের দিকে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা রওনা দিচ্ছিলেন। বাস থেকে নেমে মসজিদে প্রবেশ করার আগ মুহূর্তেই তারা জানতে পারলেন ভেতরে গোলাগুলি চলছে। এতে অল্পের জন্য বেঁচে গেলো পুরো টাইগার টিম।
জুমার নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে যখন তামিমরা মসজিদে প্রবেশ করবেন, ঠিক ওই মুহূর্তেই রক্তাক্ত শরীরের একজন মহিলা ভেতর থেকে টলোমলো পায়ে বেরিয়ে এস হুমড়ি খেয়ে পড়ে যান। ক্রিকেটাররা তখনো বুঝতে পারেননি ঘটনা কী। তারা হয়তো মসজিদে ঢুকেই যেতেন, যদি না বাসের পাশের একটা গাড়ি থেকে এক ভদ্রমহিলা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বলতেন, ‘ভেতরে গোলাগুলি হয়েছে। আমার গাড়িতেও গুলি লেগেছে। তোমার ভেতরে ঢোকো না।’
কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ক্রিকেটাররা দ্রুতই বাসে উঠে পড়েন। কিন্তু ততক্ষণে পুলিশ রাস্তার সমস্ত গাড়ি চলাচল বন্ধ করে রেখেছে। অবরুদ্ধ হয়ে বাসে থাকা অবস্থায় ক্রিকেটাররা আতঙ্কে ভূগছিলেন। কেননা, বাসে তখন কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিলো না।
অনেকটা সময় বাসে থাকার পর নিজেদের সিদ্ধান্তেই বাস থেকে নেমে হোটেলের দিকে রওনা দেন। মাঠ দিয়ে হাঁটা অবস্থায় তাদের চোখেমুখে আতঙ্ক বিরাজ করছিলো। চোখের সামনে অনেককে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে নিজেদের ঠিক রাখতে পারেননি ক্রিকেটাররা। হাঁটা অবস্থায় ক্রিকেটাররা বলছিলেন, ‘সংবাদ সম্মেলন একটু দেরিতে শেষ না হলেই সর্বনাশ হয়ে যেত।’ কেননা সময়ের দশ মিনিট বেশি লাগায় নামাজে আসতে দেরি হয়েছিল মুশফিকদের। আর তাতেই রক্ষা।
আতঙ্কিত চেহারা নিয়ে ড্রেসিংরুমে পৌঁছে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন ক্রিকেটাররা। ড্রেসিংরুমে আসার আগেই মুশফিকুর রহিম অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন। আর তামিম ইকবাল বলতে থাকেন, ‘যা দেখেছি, এরপর আমি আর এক মুহূর্ত এখানে থাকতে চাই না। এই টেস্টে খেলার প্রশ্নই আসে না। আমি দেশে ফিরে যাব।’
বাসে ক্রিকেটারদের সঙ্গে ছিলেন ম্যানেজার খালেদ মাসুদ ও বাংলাদেশ দলের অ্যানালিস্ট শ্রীনিবাসন আইয়ারও। ড্রেসিংরুমে ফেরার পর খোঁজ পড়ে বাংলাদেশ দলের দুই ক্রিকেটার লিটন কুমার ও নাঈম হাসানের। অবশ্য তারা দু’জন ছিলেন হোটেলে। ফোনে তাদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হন ম্যানেজার খালেদ মাসুদ।
পরবর্তী সময়ে হ্যাগলি পার্ক থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় নভোটেল হোটেলে। দুদলের মতামতের ভিত্তিতে সিরিজের শেষ টেস্ট বাতিল করা হয়েছে। আতঙ্কিত ক্রিকেটারদের রাতেই দেশে ফেরার কথা ছিল। সম্পাদনা : আনিস রহমান