সবজির বাজারে আগুন, মাছ-মাংসের দামও চড়া
বাংলানিউজ : রাজধানীর বাজারগুলোতে আলু ও পেঁপে ছাড়া বেশিরভাগ সবজির দাম ৫০ টাকার বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। আর চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ, মাংস, তেল ও ডিম। ২শ টাকার নিচে মিলছে না কোনো ধরনের মাছ। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মুরগির দাম প্রতিকেজি ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের সবজি, মাছ ও মাংসের দাম বেড়েছে। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে সব ধরনের চালসহ মুদিপণ্যের দাম। দ্রব্যমূল্যের এ ঊর্ধ্বমুখি প্রবণতায় জীবনযাপনের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন সীমিত আয়ের নি¤œ ও মধ্যবিত্তরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন কয়েকদিন আগে শিলাবৃষ্টিতে সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। ফলে উৎপাদন ও সরবরাহ কমেছে। দাম বেড়েছে সব ধরনের সবজির। আর শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় মাছ ও মাংসের দাম বেড়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগ আন্তর্জাতিক বাজার দরের তুলনায় আমাদের ৭০ শতাংশ বেশি দাম দিয়ে পণ্য কিনতে হয়। সরকারের মনিটর ব্যবস্থা ভালো হলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। শুক্রবার রাজধানীর সুত্রাপুর, শ্যামবাজার, নয়াবাজার, দয়াগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারসহ বেশকয়েকটি বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতা এমন তথ্য পাওয়া দেন।
রাজধানীর বাজারগুলোতে গত এক মাস ধরে বাজারে নতুন সবজি পাওয়া গেলও চলতি সপ্তাহে এসে দাম বেড়েছে সব ধরনের সবজিতে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি সবজিতে দাম বেড়েছে ২০ টাকা। বাজারে আসা নতুন সবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সজনে। মানভেদে প্রতি কেজি সজনে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। এর পরে রয়েছে বরবটি। প্রতি কেজি বরবটি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। দামের দিক থেকে এর পরেই রয়েছে পটল, করলা ও উস্তা। বাজারভেদে প্রতি কেজি পটল, করলা ও উস্তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে। এছাড়া ঢেঁড়স, কচুর লতি, লাউ, ঝিঙ্গা, ধুঁদুল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়।
সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বাড়ার তালিকায় থাকা শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। শিমের দাম বেড়ে হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি।
চড়া দামের বাজারে তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে আলু, পেঁপে, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পাকা টমেটো ও গাজর।
এদিকে বেশ কিছুদিন স্বস্তি দেয়া পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করেই গত সপ্তাহে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে যায়। বাজারভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি। তবে ভারতীয় পেঁয়াজ আগের মতোই ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে কাঁচামরিচ। বাজার ও মানভেদে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।
যাত্রাবাড়ীর ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, বাজারে আলু, পেঁপে ছাড়া ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাবে না। কারণ শীতের সবজি প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এখন যে ফুলকপি, পাতাকপি পাওয়া যাচ্ছে, এর প্রতি ক্রেতাদের খুব একটা আগ্রহ নেই। বাজারে এখন নতুন করে এসেছে সাজনা, ঝিঙ্গা, পটল, ঢেঁড়স, বরবটি। নতুন আসায় এসব সবজির দাম এখন বাড়তি। তাছাড়া গত কয়েকদিনের শিলাবৃষ্টির কারণেও সবজির অনেক ক্ষতি হয়েছে। উৎপাদন কমায় সরবরাহ কমেছে ফলে দাম কিছুটা বেড়েছে।
গত সপ্তাহের মতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে গরু, খাসি ও মুরগির মাংস। বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। এছাড়া লাল লেয়ার মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা কেজি, কক মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা।
এদিকে মাছ বাজারে সব থেকে কম দামে বিক্রি হচ্ছে তেলাপিয়া। আগের সপ্তাহের মতো তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি, পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, রুই ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পাবদা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, টেংরা কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, শিং ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, চিতল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
অপরিবর্তিত রয়েছে চাল ও অন্যান্য মুদিপণ্যের দাম। বাজারে প্রতি নাজির ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, বিআর ২৮ নম্বর ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
তবে বেড়েছে সবধরনের ডিমের দাম। মুরগির ডিম প্রতি ডজনে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০ টাকা। হাঁসের ডিম ১৫৫ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ১৭০ টাকা ডজন বিক্রি হতে দেখা গেছে। সম্পাদনা : শোভন দত্ত, রেজাউল আহসান