বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানির সংস্থানে গ্যাস অনুসন্ধান ও কয়লা উত্তোলন জরুরি
নাঈমা জাবীন : ২) বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাথমিক জ্বালানির সংস্থানই আগামী দিনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কয়লা উত্তোলনের ক্ষেত্রে সরকার নীতির পরিবর্তন করেনি। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এককভাবে বিদেশি উৎসের ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পাবে। এতে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উভয়ের দাম বৃদ্ধি করা ছাড়া কোনও বিকল্প থাকবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র : বাংলাট্রিবিউন
৩) ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. তামিম-এর মতে, ‘প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আমাদের দেশীয় সরবরাহ। সাগরে ও স্থলভাগে সমানতালে অনুসন্ধান কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে খুব শিগগিরই দরপত্র আহŸান করা জরুরি। সেই দরপত্রে গ্যাসের দাম অবশ্যই রিজনেবল ও আকর্ষণীয় হতে হবে। দ্বিতীয়ত: আমাদের নিজেদের কয়লা উত্তোলন করতে হবে। বাকিটা পূরণ করতে এলএনজি আমদানি করতে হবে। এক্ষেত্রে কিছু কয়লাও আমদানি করা যেতে পারে। যদিও কয়লা আমদানি কিছুটা কঠিন।’
৪) তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে সবার আগে সাগরে জরিপ কাজটি করা জরুরি। বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা পেয়েছে চার বছর হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কোনও কাজে লাগেনি।’
৫) দেশে অবশিষ্ট গ্যাস দিয়ে বড় জোর ৭/৮ বছর চলবে- এমন আশঙ্কা করছে পেট্রোবাংলা। গ্যাস দ্রæত ফুরিয়ে আসায় দেশে নতুন গ্যাস চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে কেউ গ্যাস চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে চাইলে তাকে বিদেশ থেকে এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি করতে হবে। গত বছর সরকারি-বেসরকারি খাতে এলএনজি চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
৬) রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি জার্মানির সিমেন্স, চীনের সিএমসি ও যুক্তরাজ্যের বিপি’র সঙ্গে যুক্ত হয়ে পায়রা-তে ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এলএনজি চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। এর বাইরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেক্ট্রিক (জিই)-এর সঙ্গে সমান ক্ষমতার একটি এলএনজি চালিত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে। এছাড়া বেসরকারি খাতে সামিট গ্রæপ জিইএ’র সঙ্গে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট এবং ইউনিক পাওয়ার আরও ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে এমওইউ সই করেছে। প্রাথমিক জ্বালানিতে টান পড়বে এমন ধারণা থেকেই দেশীয় গ্যাসের বদলে এলএনজিতে যাচ্ছে সরকার। এছাড়া খুলনার রূপসাতে আরও এলএনজি বিদ্যুৎ কে›ন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি।
৭) প্রতি ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হয়। এখন নির্মাণ চুক্তির মধ্যে থাকা ১১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য দৈনিক এলএনজির চাহিদা দাঁড়াবে ৫৮০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর পুরোটাই আমদানি করতে হবে।
৮) বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন-এর মতে, ‘আমরা নিজেদের গ্যাস আবিষ্কারে মনোযোগী না। এটি আসলেই কঠিন। টাকা দিতে হবে, ঝুঁকিও নিতে হবে। সে তুলনায় আমদানি করাটা খুব সহজ।’
তিনি বলেন, ‘অনুসন্ধান না করে তাই গ্যাস আমদানি করা হচ্ছে। কয়লা উত্তোলনের ক্ষেত্রে নানা কথা বলে শেষ পর্যন্ত কিছুই করলাম না। দেশের দুটি মূল প্রাথমিক জ্বালানি গ্যাস ও কয়লা যদি উত্তোলন না করা হয়, তাহলে তো আমদানি করতেই হবে।’
তার মতে, আর আমদানি যদি করতেই হয়, তাহলে আরও দুটি জিনিস আমদানি করতে হবে। একটি হচ্ছে, এলএনজি এফিসিয়েন্সি অর্থাৎ সবচেয়ে দক্ষভাবে যেন এলএনজি আমরা ব্যবহার করতে পারি। আরেকটি হচ্ছে, আমাদের সিস্টেম প্ল্যানিং যেন সুষ্ঠু থাকে, যাতে এলএনজির যেন কোনও অপচয় না হয়।’
দেশে এখন যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে সেজন্য ২ হাজার ৯৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে মোট সরবরাহ করা হচ্ছে ১ হাজার ১৬৬ মিলিয়ন ঘনফুট। আগামী সাত থেকে আট বছর পর দেশের গ্যাস ফুরিয়ে গেলে এসব কেন্দ্রের জন্যও এলএনজি আমদানি করতে হবে।