দেশের সব সিনেমা হল বন্ধ ঘোষণার নেপথ্যে রয়েছে হলমালিক ও পরিচালক সমিতির দ্বন্দ্ব!
দেবদুলাল মুন্না : ২. সিনেমা হল মালিকরা সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন আগামী ১২ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সব সিনেমা হল বন্ধ করে দেওয়ার। উল্টোদিকে পরিচালক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে হল বন্ধ করা হলে প্রয়োজনে তারা রাজপথে সামবেন। সংলাপে বসতে আগ্রহী। এই দুপক্ষের অনঢ় অবস্থানের নেপথ্য কারণ কী? হল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে অনেকদিন আগে থেকেই বলা হচ্ছিল, দেশের সিনেমা হল টিকিয়ে রাখার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবসা সফল সিনেমা নেই। দীর্ঘদিন ধরে লোকসান গুনতে গুনতে হলের মালিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সিনেমা হলগুলোকে বাঁচানোর কিংবা দেশের ছবির উৎপাদন বাড়ানোর এবং উপমহাদেশের ছবি আমদানির বাধা-নিষেধ অপসারণে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না পাওয়ায় দেশের হল বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হল মালিক নেতাদের। কিন্তু এ বিষয়ে পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘ভালো কন্টেন্ট আমরা দেই না? আমরা মনপুরা, আয়নাবাজি, ঢাকা অ্যাটাক-এর মতো সুপার হিট ছবি দেইনি? এগুলোর টাকা দেয় না কেন হল মালিকরা? টাকা ফেরত না দিলে ভালো কন্টেন্ট তৈরি হবে কীভাবে? যে প্রযোজক মনপুরা, আয়নাবাজি, ঢাকা অ্যাটাক কিংবা এরকম আরো বেশকিছু হিট ছবি নির্মাণে অর্থ লগ্নি করলেন তারা কি হলের টাকাটা বুঝে পেয়েছেন? কেউ পাননি। আর পায়নি দেখেই ভালো কন্টেন্ট নির্মাণ করেও পরবর্তীকালে তারা আর সিনেমাতে লগ্নি করতে আসেনি। এতে সার্বিকভাবে ক্ষতি হয়েছে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির। সিনেমা হল বন্ধ হলে আমরাও বিকল্প ব্যবস্থায় সিনেমা দেখানোর কথা ভাবছি। শিল্পকলা একাডেমির সাথে কথা বলেছি, সরকারিভাবে জেলাগুলোতে সিনেপ্লেক্স হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা শিল্পকলার অডিটোরিয়ামকে মিনি সিনেমা হলে রূপান্তর করে আমাদের সিনেমা দেখাবো।’
৩. পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন বলেন, ‘ই-টিকেটিং ব্যবস্থা চালু করতে রাজী নয় কেন হল মালিকরা? বর্তমান সংকট পরিস্থিতির সমাধান এনে দিতে পারে ই-টিকেটিং ব্যবস্থাই। ধরেন মধুমিতা হলে ডিসি টিকিটের দাম দেড়শ টাকা। এই ১৫০ টাকার মধ্যে মাত্র ৩০ টাকা দেন ছবির প্রডিউসার। এই দেড়শো টাকার মধ্যে ৩০ টাকা পেয়ে প্রডিউসার মেশিন ভাড়া নেন, পোস্টার বানান, ব্যানার বানান, প্রমোশন চালান, একজন রিপ্রেজেন্টেটর নেন। এই অবস্থায় আমি বহুদিন ধরে বলছি রিপ্রেজেন্টেটর না নিয়ে ই-টিকেটিং ব্যবস্থা চালু করতে, কিন্তু হল মালিকরা ই-টিকেটিং ব্যবস্থায় রাজি না। কেন রাজি না কারণ ই-টিকেটিং ব্যবস্থা হলে আর কোনো মারপ্যাঁচ থাকে না। ই-টিকিটিং হলে কিন্তু সারাদিনে ওই হলটাতে কতোজন লোক সিনেমা দেখল, শোতে কতজন লোক হলো সব খবর অটোমেটিকলি মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে প্রডিউসারও খবর পেয়ে যাবেন। কিন্তু ই-টিকেটিং ব্যবস্থায় তারা যেতে চান না কেন ?’
৪.পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘এ বিষয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না। হল মালিকরা কেন ভারতীয় ছবি আমদানি করতে বলছেন, এ বিষয়ে বিশদ কিছু তারা বলেনি। আরেকটি কথা হল মালিকরা বলেছেন যে, আমাদের এখানে ভালো ছবি হচ্ছে না। এই কথাতো কিছুটা সত্যই। আমি মনে করি, হল চালানোর জন্য গুনে মানে যতগুলো ছবি প্রতি বছর হওয়া দরকার তা আমাদের হচ্ছে না। আমার কাছে মনে হয়, সপ্তাহে আমাদের দেশের হলগুলোতে একটা নতুন ছবি দরকার। সেটা যে ধরনের হোক। সে ক্ষেত্রে বছরেই আমাদের এখানে ছবি হচ্ছে ৩০/৪০টি। নানামুখী অভিযোগের কথা তুলে ধরে গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, আমাদের এখানে সিনেমা নির্মাণ করতে গেলেও নানা সমস্যা আছে। তারমধ্যে বাজেট স্বল্পতা সবার ওপরে। তাও ছবিটা যদি হয় কোনোভাবে, তারপর দেখা যায় হল মালিকরা টাকা দেয় না ঠিক ঠাক মতো। হলের পরিবেশ ভালো না, দর্শক সাধারণ হলে সিনেমা দেখতে এসে কোনো কমফোর্ট পায় না। সারা দেশের কোনো সিনেমা হলে ভালো ব্যবস্থাপনা নাই। সব মিলিয়ে একটা নাজুক অবস্থা বেশ কয়েক বছর ধরেই। হল মালিকদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তো অসত্য নয়, তাহলে দর্শক কেন যাবে ওইসব সিনেমা হলে?’
তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মালেক বলেন, ‘আমরা আশু সমাধানের চেষ্টা করছি। আশা রাখি দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতা হবে।’ সম্পাদনা : আনিস রহমান