ড. আবদুল মজিদ বললেন, ব্যাংকিং বিষয়ে জ্ঞানী ও অবদান রাখারক্ষমতা আছে এমন ব্যক্তিকে ব্যাংকের পরিচালক বানানো উচিত
আমিরুল ইসলাম : সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। ফলে তারা ব্যাংকগুলোকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে বা প্রতিযোগিতামূলকভাবে পরিচালনা করতে পারছেন না। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ আসলে কেমন হওয়া উচিত? জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ বলেন, ব্যাংক ব্যবসাসংশিষ্ট একটি সর্বোচ্চ আর্থিক প্রতিষ্ঠান। মানুষের আমানত ও সরকারের টাকা লেনদেনের আর্থিক কার্যক্রমের একটা অন্যতম হৃদপি- টাইপের প্রতিষ্ঠান। সুতরাং যিনি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম, ব্যাংকের নীতিমালা বা ব্যাংক বিষয়ক জ্ঞানী ও অভিজ্ঞ, যার ব্যাংকিং খাতে অবদান রাখার ক্ষমতা আছে, এমন ব্যাক্তিকে পরিচালনা পর্ষদের সদ্যস্য বা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া উচিত।
সরকারি ব্যাংকগুলো পুরোপুরি অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং এবং ফাইনান্সিয়াল ইনস্টিিিটউশন বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করে। সে হিসেবে কারা ব্যাংকিং পর্ষদগুলোর পরিচালক হবে সেটা অর্থ মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করে। এটা নতুন না, অনেকগুলো সরকারের আমলেই এমনটা হয়েছে। বেশ কয়েকটা সরকারের আমলেই লক্ষ করা যাচ্ছে সরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক সরকারের নিজস্ব রাজনৈতিক ব্যক্তিরাই হচ্ছেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তারা ব্যাংকমনষ্ক ও ব্যাংকের বিষয়ে তাদের অবদান আছে কিনা সেটা দেখা হয় না। যদিও চেষ্টা করা হয়, ব্যাংকমনষ্ক ও যারা ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছুটা বুঝে তাদের পরিচালক করার জন্য কিন্তু তা আর হয়ে ওঠে না। ব্যাংক যেহেতু একটা বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক পরিচালনার জন্য একটা বিশেষ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন পরে। পরিচালনা পর্ষদ যেহেতু হাইয়েস্ট বডি অব দ্য ব্যাংক সেহেতু পরিচালনা পর্ষদ নিজেই যদি প্রফেশনাল না হয়, তাদের যদি ব্যাংকিং বিষয়ে জ্ঞান না থাকে তাহলে অন্য অভিজ্ঞতা থেকে যারা আসেন তারা ভালো অবদান রাখতে পারেন না। কারণ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের অবশ্যই ব্যাংকিং বিষয়ে একটা অবদান থাকতে হবে বিদ্যা দিয়ে হোক আর বুদ্ধি দিয়ে হোক। সেটা না হয়ে যারা সরকার পক্ষ থেকে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হন তখন দেখা যায় তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। ব্যাংক একটা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, আর্থিক লেনদেন এবং সরবরাহের প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকের সিদ্ধান্তগুলো যেহেতু অর্থনীতির কতোগুলো বিষয়কে স্পর্শ করে সেহেতু পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ না হলে এবং প্রফেশনাল না হলে এ সদস্যরাই এমন এমন সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ করেন যার ফলে ব্যাংকের নিজস্ব উন্নতি না হয়ে সেটা ভিন্ন ব্যবসা বা ভিন্ন খাতে চলে যায়। স্বাভাবিকভাবে ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের কাছ থেকে উপকৃত না হয়ে ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়ে যায়। ব্যাংকের যারা পরিচালক হবেন তাদের অবশ্যই ব্যাংক ব্যবসায়ে ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রাখার মতো ক্ষমতা থাকতে হবে। সেই ধরনের ব্যক্তিরা যদি ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে না এসে অন্য ডিসিপ্লিন থেকে আসে তখন তাদের দ্বারা ব্যাংক আর উপকৃত হয় না। তারা ব্যাংকের পুঁজি, আমানত গ্রহণ ও ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে একটা পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করে। যার ফলে ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারি ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডার তো সরকার নিজে। সুতরাং সে অর্থেই সরকার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য দেয়ার ব্যাপারে।