সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ চিরনিদ্রায় শায়িত
মহিব আল হাসান : রাজধানীর বনানীর সম্মিলিত সামরিক বাহিনীর কবরস্থানে ২টা ৪০ মিনিটে চিরনিদ্রায় শায়িত হন বাংলা সংগীতের প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ। এর আগে গতকাল বাদ যোহর বারিধারায় বায়তুল আতিক কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দেশ বরেণ্য এই সংগীত শিল্পীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
শনিবার (২৩ মার্চ) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বারিধারার নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজেউন’ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। বরেণ্য এই শিল্পীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী এক শোকবার্তায় তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
কন্ঠশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এক শোকবার্তায় বলেন, দেশের বরেণ্য সঙ্গীত শিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহর মৃত্যুতে এক বড় ধরনের ক্ষতি হল। তিনি ছিলেন বাংলাদেশে প্রেরণামূলক দেশাত্ববোধক গানের এক অগ্রগণ্য শিল্পী।
শাহনাজ রহমতুল্লাহর মৃত্যুর খবর শুনে তার বাসায় ছুটে যান দীর্ঘদিনের সহশিল্পী ও সহকর্মীরা। প্রিয় শিল্পীকে শেষ বিদায় জানাতে আসেন অগণিত ভক্ত ও অনুরাগীরাও। রাজধানীর বারিধারায় জনপ্রিয় এই শিল্পীর বাসভবন পার্ক সেরিনাতে নেমে আসে শোকের ছায়া।
৫০ বছরের সঙ্গীত জীবনে কালজয়ী নানা গান উপহার দিয়েছেন শাহনাজ। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে গুণী এ শিল্পী দৃষ্টির সীমানা ছাড়িয়ে গেলেও, ভক্ত হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন হাজার বছর। ভক্ত সাধারণের কাছে শিল্পীর জন্য মাগফিরাত কামনা করেন স্বজনেরা। জানান, শেষ জীবনে একটি সুফি অ্যালবাম প্রকাশের ইচ্ছে ছিল তার।
শাহনাজ রহমতুল্লাহর স্বামী মেজর (অব.) আবুল বাশার রহমত উল্লাহ ব্যবসায়ী, ছেলে এ কে এম সায়েফ রহমত উল্লাহ কানাডায় থাকেন, মেয়ে নাহিদ রহমত উল্লাহ থাকেন লন্ডনে। ছেলেমেয়েদের ছাড়াই স্ত্রীর দাফন সম্পন্ন করেন শাহনাজ রহমতুল্লাহর স্বামী।
প্রখ্যাত এই সঙ্গীত শিল্পী ১৯৫২ সালে জন্ম নিয়ে মাত্র ১১ বছর বয়সে ১৯৬৩ সালে রেডিও এবং চলচ্চিত্রের মাধ্যমে গানের জগতে প্রবেশ করেন। টেলিভিশনে ১৯৬৪ সালে প্রথম গান করেন। পাকিস্তানে থাকার সুবাদে করাচি টিভিসহ উর্দু ছবিতেও গান করেছেন।
দেশীয় গানে সবার শীর্ষে আছেন শাহনাজ রহমত উল্লাহ। তার উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে আছে ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’, ‘আমার দেশের মাটির গন্ধে’, ‘আমায় যদি প্রশ্ন করে’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে আমায় বল’ ‘যে ছিলো দৃষ্টির সীমানায়’ প্রভৃতি।
এছাড়া বিবিসির ২০০৬ সালের মার্চ মাসের জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় শাহনাজ রহমত উল্লাহর চারটি গান স্থান পায়। এগুলো হলো, ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’ ও ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল’।
শাহনাজ রহমত উল্লাহ ১৯৯০ সালে ‘ছুটির ফাঁদে’ ছবিতে গান গেয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ১৯৯২ সালে পান একুশে পদক। ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’ এর সৌজন্যে তিনি পেয়েছেন আজীবন সম্মাননা। এছাড়া গান গেয়ে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, শাহনাজ রহমতুল্লাহর বড় ভাই সুরকার আনোয়ার পারভেজ এবং আরেক ভাই নায়ক ও গায়ক জাফর ইকবাল।