বিশ্বসেরা পাঁচটি ব্যয়বহুল চিত্র
আবুল বাশার
একটি ভালো চিত্রকর্ম মানুষের মনে এনে দেয় অন্যরকম এক সুখ। ছবির দৃশ্যটি চোখে ধরা দেয়ার সাথে সাথে আমাদের ব্যস্ত করে ফেলে তার দুনিয়ায় ভ্রমণ করানোর জন্য। মাথা থেকে যেন নামতেই চায় না সেই গভীর দৃশ্যের মাতাল করা সৌন্দর্য। আমাদের বিখ্যাত সব চিত্রকরেরা আমাদের জন্য তাদের শিল্পকর্ম রেখে গেছেন। সেই সকল ছবি, বিভিন্ন দেশের শিল্পীপ্রেমীরা নিলামে কিনে নিজেরা ব্যক্তিগত সংরক্ষণ করেছেন অথবা বিক্রি করে দিয়েছেন বড় বড় অকশোনারিতে। এবার তাহলে দেখে নেওয়া যাক শিল্পর সামান্য ব্যাখ্যার সাথে ছবির দামটি।
‘নাফেয়া ফা ইপোইপো’ (হোয়েন উইল ইউ ম্যারি) : পল গঁগ্যা নামেই পরিচিত উনিশ শতকের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী ইউজিন হেনরি পল গঁগ্যা। ফরাসি এই শিল্পী জীবদ্দশায় অতটা পরিচিতি লাভ করেননি, যতটা মৃত্যুর পর পেয়েছেন। তার অংকিত ‘ঘধভবধ ঋধধ ওঢ়ড়রঢ়ড়’ বা হোয়েন উইল ইউ ম্যারি তৈলচিত্রটি বিশ্বের সবচাইতে দামী ছবি! ১৮৯১ সালে প্রথমবারের মতো তিনি ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়ার সবচেয়ে বড় দ্বীপ তাহিতি ভ্রমণে যান। সেখানে গিয়ে ছবি আঁকায় এক্সপেরিমেন্ট করেন তাহিতির প্রকৃতি, স্থানীয় নারী, তাদের জীবনযাপন, তাদের ঐতিহ্যবাহী পোষাক ইত্যাদি নিয়ে। দুই নারী তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে বসে আছেন। সামনের নারী প্রতিমূর্তির কানে গোঁজা ফুলটির অর্থ অনেকে বলে থাকেন যে, মেয়েরা যখন বিয়ের জন্য স্বামী খোঁজে, তারই চিহ্নস্বরূপ এই গোঁজা ফুলটি। তাই হয়তো ছবিটির নাম ‘হোয়েন উইল ইউ ম্যারি? ছবিটি ২০১৫ সালে কাতারের রাজপরিবার ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে কিনে নেয় বলে জানা যায়।
লে জুয়র দ্য কার্ত : পোস্ট ইম্প্রেশনিজম ধারার ফরাসি চিত্রশিল্পী পল সেজান, যাকে বিংশ শতাব্দীর আধুনিক শিল্পকলার পথপ্রদর্শক বলা হয় এবং যাকে পাবলো পিকাসো বলতেন, ‘দ্য ফাদার অফ অল অফ আস’। অনুকরণে অবিশ্বাসী এই চিত্রশিল্পীর ছবির বৈশিষ্ট্যই ছিলো স্থায়ী গড়ন নির্মাণের। ১৮৯০-৯৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে একই নামে পাঁচটি তৈলচিত্র নিয়ে ধারাবাহিক চিত্র অংকন করেছিলেন তিনি। পাঁচটি ছবির কোনোটায় পাঁচজন বা দুজন, একেক ব্যাকগ্রাউন্ডে, ভিন্ন মুখভঙ্গিতে কিংবা রঙের তফাতে অংকিত ছিল ছবিগুলো। এই ছবিতে দেখা যায় দুজন তাস খেলোয়ার গম্ভীর মুখে ডুবে আছে খেলায়। মুখভঙ্গিতেই ফুটে উঠেছে খেলায় তীব্র মনোযোগ এবং গুরুত্ব। এই ছবিতে সেজান মডেল হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তার বাগানের মালি আর এক কৃষককে। ২০১১ সালে কাতারের রাজপরিবার এই ছবিটি ২৫০ মিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়।
ওম্যান অফ আলজিয়ার্স : ১৯৫৪-৫৫ এর শীতকালগুলো পাবলো পিকাসোর কেটেছে ছবি এঁকে এঁকে। ফরাসি চিত্রশিল্পী ইউজিন ডেলাক্রইক্সের দ্য ওম্যান অফ আলজিয়ার্স ইন দেয়ার অ্যাপার্টমেন্ট চিত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পাবলো পিকাসো ১৫টি ধারাবাহিক চিত্র অংকন করেন, যার নাম দেন ওম্যান অফ আলজিয়ার্স। এখানে চোখা আকৃতিতে কয়েকটি নারীদেহ খুঁজে পাওয়া যায়। লাল ও নীল রঙের মিশেলে ছবিটি এখনকার সময়ে সমান ব্যবহৃত। গোটা সিরিজটাই কিনে নিয়েছিলেন ভিক্টর ও স্যালি গোমেজ, ১৭৯.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে।
ল্যা রিভ : ল্যা রিভ, যার অর্থ ‘দ্য ড্রিম’ বা স্বপ্ন। ছবিতে আমরা দেখতে পাই এক অনিন্দ্য সুন্দরী নারী মূর্তি, যে গলায় মুক্তার মালা পরে একটি টকটকে লাল কেদারায় বসে স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে। লাল রঙের ব্যবহার আর নারীর মুখভঙ্গি ছবিটিকে আর দশটি ছবির চেয়ে আলাদা করে তোলে। বিশ শতকের চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসোর ছিল একজন উপস্ত্রী, নাম ম্যারি থেরেস ওয়ালটার। সেই উপস্ত্রীর পোর্ট্রেটই এঁকেছিলেন পিকাসো এক মধ্যদুপুরে, এক বেলাতেই শেষ করেছিলেন বলে জানা যায়। দিনটি ছিলো ১৯৩২ সালের ২৪ জানুয়ারি। পিকাসোর চিত্রশৈলী যাদের মুগ্ধ করে, তারা এই চিত্রকর্মটিকে অগ্রাহ্য করতে পারেন না। ২২ বছর বয়সী এই তরুণীর কামুক দৃশ্যটি তৈলচিত্রকে আকর্ষণীয় করে তোলে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর তাই, সুযোগ পাওয়ার সাথে সাথে ২০১৩ সালে ছবিটি ১৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে কিনে নেন স্টিভেন এ কোহেন।
থ্রি স্টাডিস অফ লুসিয়ান ফ্রয়েড : বিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ-আইরিশ শিল্পী ফ্র্যান্সিস ব্যাকন এবং লুসিয়ান ফ্রয়েড দুজনই চিত্রশিল্পী ছিলেন।
তারা বন্ধু হলেও শিল্পের দিক দিয়ে প্রতিযোগী ছিলেন দুজন দুজনের। ধীরে ধীরে তাদের বন্ধুত্ব গাঢ় হয়। দুজনেই বহুবার তুলির আঁচড়ে একে অপরকে এঁকেছেন। এরপর ১৯৬৯ সালে ব্যাকন ফ্রয়েডের পোর্ট্রেট আঁকেন। একটি নয়, তিনটি ছবি আঁকেন ব্যাকন তার নিজস্ব চিত্রশৈলীতে।
তিনটি ছবিই বিমূর্ত, বিকৃত এবং ভিন্ন মাত্রার। তিনটি ছবিই একই আকারের, তবে আলাদা ফ্রেমিং করা। গাঢ় কমলা রঙে বাঁশের পটভূমিতে ছবিটি সমসাময়িক চিত্রকর্মের মধ্যে অন্যতম। নিলামে ওঠা সবচেয়ে দামি চিত্রকর্মের একটি এই ‘থ্রি স্টাডিস অফ লুসিয়ান ফ্রয়েড’। ২০১৩ সালে ১৪২.৪ মিলিয়ন ডলারে ছবিটি বিক্রি হয়। প্রকৃত ক্রেতা কে ছিল, তা জানা যায়নি। কারণ তার তরফ থেকে উইলিয়াম অ্যাকুয়াভেলা ছবিটি কেনেন বলে জানা যায়।