ইলিশের বাজারে বৈশাখী হাওয়া
আবুল বাশার
বাঙালির দুয়ারে কড়া নাড়ছে প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। আর মাত্র ১৫দিন পরেই বাঙালির ঐতিহ্যময় এ উৎসব। ইলিশের সঙ্গে পান্তা না হলে বাঙালিয়ানাই যেন বৃথা! তাই উৎসবকে সামনে রেখে রাজধানীতে ইলিশের বাজারে লেগেছে বৈশাখী হাওয়া। বর্ষবরণ উৎসবের দিন যতো এগিয়ে আসছে, ততোই উত্তাপ বাড়ছে রুপালি ইলিশের দামে। ক্রেতাদের অভিযোগ, পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশের প্রধান অনুষঙ্গ ইলিশের এই ‘নগরকেন্দ্রিক’ চাহিদাকে পুঁজি করে ফায়দা লুটছেন এক শ্রেণির পাইকারি ও খুচরা মাছ ব্যবসায়ী। এজন্যই ইলিশের দাম চড়া।
ইলিশের উপস্থিতি ও বিক্রি দুটোই বেড়েছে। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি ইলিশের দাম চাওয়া হচ্ছে এক হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার টাকা। এই ওজনের ইলিশ কিছুদিন আগেও এক হাজার থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া নদীর ৯০০ থেকে ১ কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। ৮০০ গ্রামের ইলিশ প্রতি কেজি এক হাজার ৬০০ টাকা এবং ৭০০ গ্রামের প্রতি কেজি এক হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এক কেজি ১০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের বড় ইলিশও কিছু বাজারে দেখা গেছে। দাম চাইছে প্রতি কেজি দুই হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার টাকা। আর দেড় কেজি বা দুই কেজির কাছাকাছি ওজনের ইলিশের প্রতি কেজির দাম চাওয়া হচ্ছে সাড়ে চার হাজার টাকায়। তবে ৫০০ গ্রামের নিচে এক হালি ইলিশের দাম দুই হাজার টাকা। তবে বার্মিস ও সাগরের ইলিশের দাম তুলনামূলকভাবে কম।
বৈশাখ এলে ইলিশের চাহিদা বাড়ে। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। সরকার মার্চ ও এপ্রিল এ দুই মাস জাটকা ধরা নিশেষ করায় নদীতে শুধু বড় মাছ ধরতে জাল ফেলছে জেলেরা। কিন্তু বৈশাখী বাজার ধরার জন্য তারা আপাতত ইলিশ মজুদ করে রাখছে। বৈশাখের দুইদিন আগে তারা বাজারে মাছ ছাড়বে ভালো দাম ও বেশি লাভের আশায়। তাই বাজারে এখন বার্মিস ও সাগরের ইলিশে ভরা। এই ইলিশ নদীর ইলিশের তুলনায় স্বাদ ও গন্ধ কম হওয়ায় এদের চাহিদা কম। তারপরও এবার এই ইলিশ দিয়ে পহেলা বৈশাখ পার করতে হবে বাঙালিদের। বৈশাখের আগে নদীর ইলিশ আসলেও দাম থাকবে আকাশচুম্বি। এছাড়া বাজারে ইলিশের ক্রেতাও অনেক কম। কারণ এখন আগে থেকেই সবাই ইলিশ সংরক্ষণ করে রাখে।
মাছের বিক্রি এখনও প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়েনি। তবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এ দাম আরও বেড়ে যাবে। এখন ব্যবসায়ীরা আড়তের আগের মালই কিনতে পারছে। তাছাড়া এখন সেই হারে মাছ ধরা পড়ছে না।
তাই আড়তদাররা আগের মাছ দিয়ে বাজার ধরার চেষ্টা করছে। ব্যবসায়ীরা সেই আগের মাছ বিক্রি করছে। রাজধানীতে ইলিশ মূলত তিন ধাপ পেরিয়ে ক্রেতার হাতে পৌঁছে। প্রথম দফায় মালিকদের কাছ থেকে আড়তে আসে। তারপর আড়ত থেকে পাইকাররা মাছ কিনে নেয়। সেখান থেকে পরবর্তীতে খুচরা বাজারে মাছ বিক্রি হয়। এতো হাতবদলের কারণে দেখা যায় ইলিশের দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়তি যোগ হয়ে যায়। (বাংলানিউজ থেকে)