জরিমানার পরও ক্যান্সারের ঝুঁকিসম্পন্ন আগাছানাশক কীটনাশক বাজারে
আবুল বাশার
ুচার দশকের বেশি সময় ধরে ব্যবহার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মনসান্টো কোম্পানির আগাছানাশক রাউন্ডআপ। আগাছানাশকটির উপাদান গøাইফোসেটকে ক্যান্সারের জন্য দায়ী করে গত বছরের আগস্টে কোম্পানিটিকে জরিমানা করেন মার্কিন আদালত। চলতি মাসে দ্বিতীয় রায়েও এটি ক্যান্সারের জন্য দায়ী বলে প্রমাণ পেয়েছে জুরি বোর্ড। ক্যান্সারের জন্য দায়ী উপাদানটি এরই মধ্যে নিষিদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যের বেশকিছু অঞ্চল। গøাইফোসেটযুক্ত রাউন্ডআপ নিষিদ্ধ করেছে রাশিয়া, পর্তুগাল, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন ও ভিয়েতনামের মতো দেশও। যদিও বাংলাদেশের বাজারে এখনো বিক্রি হচ্ছে ক্যান্সারের উপাদানযুক্ত মনসান্টোর আগাছানাশকটি।
আগে সরাসরি মনসান্টোর মাধ্যমে আগাছানাশকটি বিপণন করা হতো দেশে। পাশাপাশি কয়েকটি ট্রেডার্স প্রতিষ্ঠানও বিপণনকারী হিসেবে বাজারজাত করত। কয়েক মাস আগে মনসান্টোকে অধিগ্রহণ করে জার্মান কৃষিভিত্তিক কোম্পানি বায়ার ক্রপ। এ অধিগ্রহণের পর বাংলাদেশে রাউন্ডআপের বিক্রি কিছুটা কমলেও এখনো সারা দেশেই এটি বিক্রি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে এর সত্যতা মিলেছে। আগাছানাশকের জন্য রাউন্ডআপ সবচেয়ে কার্যকর ও প্রথম সারির ব্র্যান্ড। তবে সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে ব্র্যান্ডটি নিয়ে চলমান মামলা আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। কোম্পানি অধিগ্রহণের পর রাউন্ডআপের বিপণন অনেকটাই কমে গেছে। তবে বহির্বিশ্বে রাউন্ডআপ ঝুঁকিপূর্ণ বলে চূড়ান্ত স্বীকৃতি এলে বাংলাদেশেও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে কি।
বিসিপিএর তথ্যমতে, দেশে মূলত ইনসেক্টিসাইডস, ফাঙ্গিসাইড, হারবিসাইড, মিটিসাইড ও রোডেনটিসাইড এর পাঁচ ধরনের আগাছানাশক ও বালাইনাশক আমদানি ও ব্যবহার হয়। ২০১০-১৭ সাল পর্যন্ত আগাছানাশক হিসেবে হারবিসাইড আমদানি হয়েছে ৩৮ হাজার ৭০০ টন। দেশে বালাই ও কীটনাশক বাজারজাত করছে দেড় শতাধিক দেশী ও বহুজাতিক কোম্পানি। বর্তমানে এর বাজার ছাড়িয়েছে ২ হাজার কোটি টাকার। কীটনাশক, বালাইনাশক কিংবা আগাছানাশক আমদানি ও বিপণনের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের অনুমতি নিতে হয়। যাচাই-বাছাই করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমদানি ও বিপণনের অনুমতি দেয় উইংটি। তবে ক্যান্সারের জন্য দায়ী প্রমাণ হওয়ায় বাংলাদেশে দ্রæত রাউন্ডআপ নিষিদ্ধের দাবি করেছেন অনেকে। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে বিশ্বের উন্নত তিনটি দেশে যদি আগাছানাশকটি নিষিদ্ধ হয়, তাহলে বাংলাদেশও এটি নিষিদ্ধ করতে পারবে।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর অর্গানিক এগ্রিকালচার মুভমেন্টের (আইএফওএম) সদস্য ও বাংলাদেশ জৈব কৃষি নেটওয়ার্কের (বিওএএন) সাধারণ সম্পাদক ড. মো. নাজিম উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, রাশিয়া, পর্তুগাল, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন ও ভিয়েতনামের মতো দেশ গøাইফোসেটযুক্ত আগাছানাশক রাউন্ডআপ এরই মধ্যে নিষিদ্ধ করেছে। ক্যান্সারের মতো রোগের কারণ ছাড়াও মাটির স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি করছে গøাইফোসেটযুক্ত আগাছানাশক। পানির গুণাগুণও নষ্ট করছে আগাছানাশক। ফলে মানুষের পাশাপাশি পরিবেশের জন্য নীরব ঘাতক হয়ে উঠেছে এটি। জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাই এখনই এটি নিষিদ্ধ করতে হবে।
উল্লেখ্য, ক্যালিফোর্নিয়ার একটি স্কুলের কর্মচারী ডিউয়েন জনসনের দায়ের করা মামলায় সান ফ্রান্সিসকোর একটি আদালত প্রথম মামলা নিষ্পত্তি হলে গত বছরের আগস্টে মনসান্টোকে ২৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দেন। পরবর্তী সময়ে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ কমিয়ে ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার করা হয়। রায়ে বলা হয়, মনসান্টোর আগাছানাশক রাসায়নিক ‘রাউন্ডআপ’ ও ‘রেঞ্জারপ্রো’তে রয়েছে গøাইফোসেট। এ দুই পণ্য স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হলেও কোম্পানিটি এ বিষয়ে গ্রাহকদের সতর্কবার্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। মনসান্টোর আগাছানাশক রাউন্ডআপে গøাইফোসেট নামে এক ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে, যা ক্যান্সারের মূল কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আদালতকে ভুল তথ্য দিয়ে প্রভাবিত করা হয়েছে বলে দাবি কোম্পানিটির। বর্তমানে মামলাটির আপিল শুনানি চলছে।
সাম্প্রতিক রায়েও একই বিষয়ে একই ধরনের মতামত দিয়েছেন আদালত। গøাইফোসেটভিত্তিক এ আগাছানাশকই ওই ব্যক্তির ক্যান্সার সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে বলে প্রমাণ পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের জুরিরা। সান ফ্রান্সিসকো আদালতের জুরিরা সর্বসম্মত রায়ে জানান, ক্যালিফোর্নিয়ার এডউইন হার্ডম্যানের নন-হজকিনস লিম্ফোমায় আক্রান্ত হওয়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছে গøাইফোসেট। বিচারের পরবর্তী ধাপে বায়ারের দায় ও ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। যদিও কীটনাশক জায়ান্ট বায়ার এ দাবি নাকচ করে বলেছে।
, তাদের গøাইফোসেটভিত্তিক রাউন্ডআপ ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ নয়। জার্মানিভিত্তিক বায়ার প্রাথমিকভাবে জুরিদের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। বায়ারের যুক্তি, গত কয়েক দশকের গবেষণা ও নীতিনির্ধারকদের মূল্যায়নে দেখা গেছে, মানুষের ব্যবহারের জন্য আগাছানাশকটি নিরাপদ।