পোশাক খাতেই একচেটিয়া ডিআইএফইর নজরদারি
আবুল বাশার
শিল্প-কারখানায় প্রমিকদের কল্যাণ ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিদর্শনের দায়িত্বে রয়েছে প্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই)। কিন্তু এ অধিদপ্তরের পরিদর্শন কর্মসূচির সিংহভাগই পোশাক খাতে। ফলে নজরদারির বাইরে থেকে যাচ্ছে অন্যান্য খাতের কারখানাগুলোর প্রমিকদের অধিকার, নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশের বিষয়টি। সম্প্রতি পুরান ঢাকার চকবাজারে অগ্নিকান্ডের পর ডিআইএফইর পরিদর্শন কার্যক্রমের এককেন্দ্রিকতার বিষয়টি সামনে এসেছে। দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে ঢাকায় অধিদপ্তরের মোট পরিদর্শনের ৪৬ শতাংশই হয়েছে পোশাক কারখানায়।
গত ২০ ফেব্রæয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকান্ডে ঘটনাস্থলেই ৬৭ জনের প্রাণহানি হয়। পরবর্তী সময়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭১। এ ঘটনার তদন্তসাপেক্ষে প্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের করণীয় নির্ধারণে ২২ ফেব্রæয়ারি পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। কমিটির প্রতিবেদনে ডিআইএফইর পরিদর্শন কার্যক্রমের একটি ফিরিস্তি উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৪-১৮ সাল পর্যন্ত ডিআইএফই মোট ২২ হাজার ৩৬২টি পরিদর্শন সম্পন্ন করেছে। এর মধ্যে কারখানা পরিদর্শন হয়েছে ১৬ হাজার ৮২৩টি। পরিদর্শনকৃত কারখানার মধ্যে পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান ৭ হাজার ৬৯৩টি। বাকি সব খাতের কারখানায় পরিদর্শন হয়েছে ৯ হাজার ১৩০টি। বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে পরিদর্শন করা মোট কারখানার ৪৫ দশমিক ৭২ শতাংশই তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের।
স্বাধীনতার পর গত ৪২ বছরে বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কল-কারখানা, দোকান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।
জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রেখে বিভিন্ন শিল্প খাতে কাজ করছেন লাখ লাখ প্রমিক-কর্মচারী। ক্রমবর্ধমান বিপুলসংখ্যক প্রমজীবী মানুষের আইনগত অধিকার, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব পরিপালনের কথা ডিআইএফইর। কিন্তু এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। সম্প্রতি পুরান ঢাকার চুরিহাট্টায় অগ্নিকান্ডে প্রাণহানির পড়িপ্রেক্ষিতেই দপ্তরটির কার্যক্রম শক্তিশালী করার বিষয় নিয়ে আবারো আলোচনা শুরু হয়েছে। অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক সরবরাহ ব্যবস্থার অংশ হওয়ায় ও একাধিক ঘটনায় প্রাণহানির পরিপ্রেক্ষিতেই গার্মেন্ট কারখানায় কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতে অধিদপ্তর বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছিল। কিন্তু সারা দেশে বিদ্যমান জনবল ও অবকাঠামো অপ্রতুল।
এ পরিস্থিতিতে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তরকে অধিদপ্তরে উন্নীত করে জনবল বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক জরিপে দেখা গেছে, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯৫ শতাংশ কারখানাই অনিবন্ধিত। নিবন্ধন না থাকায় ডিআইএফইর কাজগুলো সুচারুরূপে করা সম্ভব হয় না। ডিআইএফইর কার্যক্রম আরো গতিশীল করতে গত বছর তৃতীয় পক্ষ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একটি জরিপ করিয়েছে প্রম মন্ত্রণালয়। জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মোট কারখানা ৫ হাজার ৪৫৭টি। এর মধ্যে ডিআইএফইর নিবন্ধন রয়েছে এমন কারখানা প্রায় ৩৫০। এ হিসাবে ৯৫ শতাংশ কারখানারই কোনো নিবন্ধন নেই। জরিপে প্রাপ্ত ফলাফল সরেজমিন যাচাই-বাছাই করে একটি তথ্যভান্ডার করা হবে বলে জানিয়েছে ডিআইএফই।
জরিপের তথ্যমতে, ঢাকার দক্ষিণে খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারক কারখানা আছে ১৪০টি। পোশাক তৈরির কারখানা আছে ১ হাজার ৭২টি। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের কারখানা ৭২৭টি। কাগজ ও কাগজের পণ্য তৈরির কারখানা আছে ৫৬টি। প্রিন্টিং-প্যাকেজিং কারখানা আছে ৭৩১টি। ফার্মাসিউটিক্যাল মেডিসিনাল, কেমিক্যাল ও বোটানিক্যাল পণ্য তৈরির কারখানা ৫২টি। রাবার ও প�াস্টিক পণ্য উৎপাদনকারী কারখানা ১ হাজার ৪টি। বেসিক মেটাল কারখানা আছে ৫৫৮টি। মেশিনারি ও ইকুইপমেন্ট ছাড়া ফ্যাব্রিকেটেড মেটাল প্রডাক্টস তৈরির কারখানা আছে ৯২টি।
ইলেকট্রিক্যাল ইকুইপমেন্ট তৈরির কারখানা ৬৬টি। মেশিনারি ও ইকুইপমেন্ট তৈরির কারখানা ৩০৮টি। ভেহিকল, ট্রেইলারস ও সেমি ট্রেইলার্স কারখানা আছে নয়টি। আসবাব কারখানা আছে ২২২টি। রিপেয়ার ও ইনস্টলেশন অব মেশিনারি অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট কারখানা আছে ১১৩টি। এছাড়া রিসাইক্লিং কারখানা ২৪০, হস্তশিল্প কারখানা ৩৪ ও অফিস স্টেশনারি কারখানা আছে ৩৩টি।