লোকসভা নির্বাচনে কালো টাকার স্রোত সামলতে হিমশিম খাচ্ছে ভারতের নির্বাচন কমিশন
রাশিদ রিয়াজ : ভারতে ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের আগে তিরুপুরের অদূরে জাতীয় সড়কের ওপর তিনটি ট্রাক বোঝাই নগদ ৫৭০ কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনা খবরের শিরোনাম হয়েছিল। এরপর ২০১৭ সালে অর্থশক্তির অপব্যবহারের অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার মৃত্যুতে খালি হওয়া আর কে নগর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে হয়েছিল নির্বাচন কমিশনকে। এবার আগামী ১৮ এপ্রিল তামিলনাড়– এবং পুদুচেরিতে লোকসভা নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের প্রভাবিত করতে বেআইনি ভাবে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা খরচের ছক কষেছে বলে কমিশনের কর্মকর্তাদের একাংশের অনুমান। তাদের পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি চালু হওয়ার পরে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে এখনও পর্যন্ত হিসাব বহির্ভূত প্রায় ১০০ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। ভোটে ব্যবহারের জন্য মজুত কালো টাকার সন্ধান করতে আয়কর দপ্তর, রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্সের কর্মকর্তাদের সাহায্য নিচ্ছে কমিশন। গঠন করা হয়েছে, বেশ কয়েকটি ‘ফ্লাইং স্কোয়াড’। টাইমস অব ইন্ডিয়া
কিন্তু ধারাবাহিক অভিযান চালিয়েও অনেক রাজ্যের নির্বাচনেই কালো টাকার ¯্রােত পুরোপুরি আটকানো যাচ্ছে না। উদ্ধার হওয়া টাকার অঙ্কের হিসেবে অন্ধ্রপ্রদেশ এগিয়ে থাকলেও নিত্যনতুন অর্থ-শক্তির প্রয়োগ করে পদ্ধতিতে ভোটারদের প্রভাবিত করার প্রক্রিয়ায় অনেকটাই এগিয়ে তামিলনাড়–। তফসিল ঘোষণার সময়ই টাকার খেলা রুখতে ‘কড়া নজরদারি’র কথা জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। গত এক সপ্তাহের তথ্য-পরিসংখ্যান বলছে, ধারাবাহিক অভিযান চালিয়েও অনেক রাজ্যের নির্বাচনেই কালো টাকার ¯্রােত পুরোপুরি আটকানো যাচ্ছে না। আর উত্তর ও পশ্চিম ভারতকে পিছনে ফেলে এক্ষেত্রে উঠে এসেছে দাক্ষিণাত্যের দুই রাজ্য, তামিলনাড়– এবং অন্দ্রপ্রদেশ। উদ্ধার হওয়া টাকার অঙ্কের হিসেবে অন্ধ্রপ্রদেশ এগিয়ে থাকলেও নিত্যনতুন অর্থ-শক্তির প্রয়োগ পদ্ধতিতে ভোটারদের প্রভাবিত করার প্রক্রিয়ায় অনেকটাই এগিয়ে তামিলনাড়–। নগদ আর মদ বিলির সাবেকি পদ্ধতির বদলে কুপনের মাধ্যমে বাইকে তেল ভরে দেওয়া বা মোবাইল রিচার্জের অভিনব বন্দোবস্তে দিশেহারা কমিশনের পর্যবেক্ষকরা।
কালো টাকার ‘উৎসের’ সন্ধানের পাশাপাশি এবার তৃণমূল স্তরের টাকা বিলির প্রক্রিয়ার হদিস পাওয়ার বিষয়টিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কমিশন সূত্রে খবর, ভোটের কয়েকদিন আগে থেকে রাজনৈতিক দলের জেলা নেতৃত্বের মাধ্যমে বুথ স্তরের নেতাদের কাছে গোপনে টাকা পৌঁছায়। কমিশনের নজরদারি এড়াতে সেই টাকা সংশ্লিষ্ট দলের স্থানীয় দপ্তরে পৌঁছায় না। বরং স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা ‘অরাজনৈতিক’ সংগঠনের কার্যালয় থেকে ভোটারদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সাঙ্কেতিক কুপনের সাহায্যে বিভিন্ন দোকান থেকে মোবাইল বা অন্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, মদ, এমনকী পেট্রোল পাম্প থেকে তেলও মেলে। থাকে মোবাইল রিচার্জের ব্যবস্থাও। ভোট ‘কেনার’ জন্য টাকা বিতরণের পাশাপাশি জনসভায় ভিড় জোটাতেও মাথাপিছু দেড়শো -দু’শো টাকা খরচ করা হয় হামেশাই। নজরদারি এগিয়ে টাকা লেনদেনের জন্য অনেক ভোটপ্রার্থী হাওলা কারবারিদেরও সাহায্য নেন বলে তথ্য রয়েছে কমিশনের কাছে। সম্পাদনা : ইকবাল খান