বিনিময় প্রথা কিংবা অর্থের প্রচলন আসলো যেভাবে
ইয়াছির আরাফাত
অর্থনীতি নিয়ে জানতে সবসময়ই ভালো লাগে। তাই যখনই কোন লাইব্রেরীতে যাই তখনই অর্থনৈতিক বই খুঁজে বেড়াই। আর অনলাইনের জগতে তো আরও সুবিধা। অবসর পেলেই ঢুঁ মারি অর্থনীতি নিয়ে মজার মজার তথ্য জানতে। এই যেমন ধরুন, মুদ্রার প্রচলন আসলো কিভাবে , মানুষ আগে কিভাবে টাকার মান নির্ধারণ করতো এগুলো। পৃথিবীতে কতো দিন আগে মুদ্রার প্রচলন হয়েছিলো বলতে পারবেন? দাঁড়ান আমিই বলে দিচ্ছি। এখন থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার বছরেরও আগে মিশরে বিনিময় প্রথার প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায়।
এর আগে মানুষ অনেক কিছুই টাকা হিসেবে ব্যবহার করেছে। লবণ, কফি বিন, শস্যদানা, গরু ও হাঙরের দাঁত, মূল্যবান পাথরও বাদ যায়নি। তবে প্রথম মুদ্রার প্রচলন করেন লিডিয়ার রাজা। বর্তমানে যে অংশটি তুরস্কের। এই লিডিয়ার হাত ধরেই প্রথম মুদ্রার দেখা পেয়েছিলো পৃথিবীর মানুষ।
তিনি ছিলেন একজন ধনকুবের। কিন্তু আজকে আমরা যে ধরনের মুদ্রা দেখতে পাই শুরুতে এগুলো এরকম ছিলোনা। ২০ কেজি ওজনের মুদ্রার দেখাও মিলেছে। সুইডেনে একসময় মুদ্রার ওজন ছিলো প্রায় ২০ কেজি! অবাক লাগছে তাই না ? লাগারই কথা।
এতো ওজনের মুদ্রা মানুষ কিভাবে কিভাবে বহন করতো সেটাও চিন্তার বিষয়। আর বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম মুদ্রার প্রচলন করে নেপাল। যার ওজন ছিলো মাত্র ০.০০২ গ্রাম! মুদ্রার উপর যে ধরনের লেখা থাকতো সেগুলো মূলত এক ধরনের কোড হিসেবে ব্যবহারের জন্য। কারণ, জায়গার অভাবে এতো লেখা সম্ভব ছিলোনা। আগের আমলে বেশির ভাগ মুদ্রার প্রান্তে খাঁজ কাটা থাকতো। নাহলে অসাধু ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়তে হতো মুদ্রাকে! অসাধু ব্যবসায়ীরা মূল্যবান ধাতু বের করে ফেলতো বলে শোনা যায়।
কিন্তু এখন আর সে সুযোগ নেই। তা আমরা সবাই জানি। ব্যাংক নোট আসার পর ধাতব মুদ্রার প্রচলন একেবারেই কমে গেছে। আর আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়েছে। বিশেষ কাগজ দিয়ে বানানো এসব নোটে জলছাপ দেয়া থাকে। আলোর কাছে ধরলেই যে জলছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বিশেষ এক ধরনের নিরাপত্তা সুতা থাকাতে নোট জাল করার সুযোগও কম থাকে। মুদ্রার মতো ভেতর থেকে মূল্যবান ধাতু বের করার অবকাশও থাকেনা।
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, মুদ্রার মতো কাগজের নোট নিয়েও আমরা কম বিশ্লেষণ করিনি। ডাকটিকিটের সমান করেও নোট ছাপানো হয়েছে! যার প্রচলন ঘটিয়েছে মরক্কো।
মুদ্রার প্রচলন যখন জয়জয়কার ছিলো তখন খুব বেশি বড় লেনদেন সম্ভব ছিলোনা। টাকা আসাতে যা অনেকাংশেই বদলে গেছে। চা-বিড়ি খাওয়া থেকে শুরু করে হাজার হাজার টাকার বাজার করি কাগজের নোট দিয়ে। মুদ্রা দিয়ে যা করা সম্ভব হতো না। কাগজের নোট আসাতে বিনিময় প্রথায় নতুন মাত্রা পেয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু লেনদেনে আরোও বড় অংক বসানোর সুযোগ করে দিয়েছে চেক। চেকের মাধ্যমে কি পরিমাণ অর্থ লেনদেন করা মুশকিল তা বলা মুশকিল। ভারত সরকারের উদ্দেশ্যে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত একবার ২৭ কোটি ৯১ লাখ ৮৭ হাজা ৪৯০ ডলারের একটি চেক লিখেছিলেন। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা ! ভাবা যায়! এতো বড় অংকের টাকা কেবল একটি কাগজের মাধ্যমে লেনদেন হয়ে গেলে!
আগের আমলে যে চেকের প্রচলন ছিলোনা ব্যাপারটি এমন নয়। এখনকার মতো কাগজের প্রচলন না থাকায় মানুষ যে কোন কিছুর উপরই চেক লিখতো। পাথর, কলার খোসা এমনকি গরুর চামড়াকেও বেছে নিতো চেকের কাগজ হিসেবে!