বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারে বাধা দূর করবে চীন
আবুল বাশার
অবকাঠামো উন্নয়নে চীন তার ভর্তুকি বিষয়ে বিভিন্ন পরিমার্জন নিয়ে এসেছে। এটা প্রশংসনীয়, কিন্তু বাস্তবায়নই মোক্ষ। বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারে অবকাঠামোগত নানা ধরনের বাধা রয়েছে। এটা দূর করতে প্রয়োজন ছয় ট্রিলিয়ন ডলার। আর্থিক সংকটটাই এখনে মুখ্য। তাই চীন তার ভর্তুকিতে পরিমার্জন নিয়ে আসতে যাচ্ছে। তারা এ জন্য ছয় ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। চীন আসলে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি ব্যবহারে অভিযোজিত হতে চায় বিস্তৃত পরিসরে।
বলতেই হবে, এটা তাদের বহু প্রতীক্ষিত ‘এনার্জি পলিসি’ বা ‘জ্বালানিনীতি’র একটি অংশ। গত ২৪ মার্চ চীন তার ভর্তুকি পরিবর্ধন করে নিল। তারা মূলত বিদ্যুৎচালিত যানবহনের কর্মদক্ষতা আগের চেয়ে বহুগুণ বাড়িয়ে তোলার কঠিন চ্যালেঞ্জ নিল এদিন। বেইজিং তার ব্যয় বরাদ্দ আগামী দিনগুলোতে ৬০ শতাংশ কমিয়ে নেবে। তবে এক্ষেত্রে চূড়ান্ত পরিবর্তন আনতে সামনের জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। এরই মধ্যে স্থানীয় সরকারের যাবতীয় বিলপত্র শেষ হয়ে আসবে। স্থানীয় সরকারের এসব ফান্ড তখন চার্জিং স্টেশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় করা হবে।
অবকাঠামো নির্মাণের এই খরচ যৌক্তিকভাবেই অতি বিশাল বলা যায়। এই বিশাল মাপের খরচটাই হলো বিদ্যুৎচালিত গাড়ির অভিযোজনের পেছনে সবচেয়ে বড় বাধা। এই খরচটা করা হবে বিশ্বব্যাপী। এমনকি সারা বিশ্ব থেকেই এই খরচটি উঠে আসবে। চার্জার অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগ করা হবে দুই লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলার। গ্রিডে এই মূলধনি খরচ থেকে নবায়ন ও নতুন সংযোগের জন্য দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার ফিরে আসবে। যাহোক এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সময় লেগে যাবে কয়েক দশক।
সরকার শেষ পর্যন্ত বেসরকারিভাবে এই চার্জার অবকাঠামোকে কীভাবে টিকিয়ে রাখা যায় এবং বিস্তার ঘটানো যায়, সেই পথও দেখিয়ে দেবে। ফলে বেসরকারি পর্যায়ে এর ব্যবহারে আরও গতি আসবে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন কোম্পানি ভর্তুকি নিয়ে নানা ঝামেলায় পড়বে না। এমনকি সবকিছুই তখন খুব সহজ হয়ে যাবে। তবে এই চার্জিং অবকাঠামো নির্মাণের জন্য এই বিশাল মাপের খরচের পাশাপাশি সবুজ গাড়ি ক্রয়ের জন্য অনেক বড় খরচের হিসাবটাও করতে হবে। সেই সিদ্ধান্তটা নিশ্চয় ছোট নয়। আসলে জনগণ জানতে চায় একবার চার্জ দিয়ে এই গাড়ি কতদূর চলতে পারবে। অর্থাৎ চার্জ দেওয়ার পরে আরেকটি চার্জিং স্টেশনে পৌঁছাতে কী ধরনের সংকটে পড়তে হবে, সে বিষয় জনগণ খোলাখুলি জানতে চায়। কলমবিয়া ইউনিভার্সিটির সেন্টার অন গে�াবাল এনার্জি পলিসির প্রতিবেদন অনুসারে বলতে হয়, ৪০ শতাংশেরও কম চীনা নাগরিকের স্বাধীন পার্কিং সুবিধা রয়েছে। তবে জনমনে প্রশ্ন রয়ে যায়, তারা কীভাবে বাড়িতেই চার্জিং ব্যবস্থা চালু করতে পারবে। এমনকি এটা নিয়ে ওই প্রতিবেদনেও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে এসেছে।
তবে চীন এতসব হিসাব-নিকাশ আর প্রশ্নের ধার ধারছে না। তারা যে কোনো উপায়েই হোক এই কাজে এগিয়ে চলেছে। এমনকি অতি দ্রæত বেগেই তারা এগিয়ে চলেছে। এমনকি ইতোমধ্যে চীন আট লাখ চার্জার স্টেশন স্থাপন করে ফেলেছে। এর মধ্যে অর্ধেকই স্থাপন করা হয়েছে টায়ার ১ নগরীগুলোতে। এর মধ্যে রয়েছে বেইজিং ও শাংহাই। বেইজিং ইতোমধ্যে ৪৮ লাখ চার্জিং পোস্ট স্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি তারা ২০২০ সালের মধ্যে এক লাখ স্টেশন স্থাপন করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই চলমান নীতি নতুন আবাসন পরিকাঠামোকে আরও বেশি শক্তিশালী করবে। তারা এই চার্জার সুবিধা পাবে। এর পাশাপাশি আরও অনেক সুবিধা তো থাকছেই। এসব কারণেই সম্ভবত চায়না এভারগ্রান্ডে গ্রুপের মতো কোম্পানি তাদের বৈদ্যুতিক গাড়ির বিস্তৃতি বাড়িয়ে চলেছে। বৈশ্বিকভাবে তেল ও নিত্যব্যবহার্য পণ্যের কোম্পানিও ইদানীং বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রপাতি কেনা শুরু করেছে।
চীন চেষ্টা করেছে বাজারকে কোণঠাসা করতে। যখনই তারা এই কাজটি করেছে, তখনই তাদের বৈদ্যুতিক গাড়ির নীতি-কৌশল বিস্তৃত পর্যায়ে সরকারের হাত ধরে এগিয়ে চলেছে। আসলে সরকারই এই বিদ্যুৎচালিত গাড়ির মদদ দিয়ে আসছে।
এই সর্বশেষ পদক্ষেপ বাজারকে একটি আদর্শ পর্যায়ে পৌঁছে দিতে হয়তো সম্ভব হবে। ফলে গাড়ির বাজারের উš§ত্ততা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে অতি দ্রæততার সঙ্গে। এখানে কোন ভোক্তা কী কিনতে চাচ্ছে, সেটি বিবেচনার বিষয় নয়। সরকার তাদের ভর্তুকি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দেবে, কিন্তু প্রস্তুতকারীদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের মানদন্ড বজায় রাখতে হবে। নিও ইঙ্ক অ্যান্ড গ্রেটওয়াল মোটর কোম্পানির মতো কোম্পানি সামনের দিনগুলোতে একটি কঠিন সময় পার করবে। তারা আসলে তাদের পণ্যের ভোক্তাদের রুচি ও পছন্দের গুরুত্ব দিতে পারবে না। ক্রেতাকে প্রলুব্ধ করতে তারা স্বাধীনতা হারাবে। কিন্তু সরকারি বিলিপত্র এসব বাধা আরও বেশি বাড়িয়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নিয়ে চলেছে। কিন্তু এটাই হয়তো এই বিদ্যুৎচালিত গাড়ির জন্য হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়াবে।