চীনের ধীরগতিতে বিশ্বজুড়ে দুঃসংবাদ
আবুল বাশার
চীনের অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলার মানেই হলো ভারতের ওপর তার শোচনীয় প্রভাব আছড়ে পড়া। কিন্তু এবারের এ বিপর্যয়ের ধনুক থেকে ছুটে আসা তীর কেবল ভারতের দিকেই তাক করে নেই। বরঞ্চ তা সাড়া বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।
গত তিন দশকের কথা যদি স্মরণ করি, তবে দেখতে পাব দেশটি দুই অঙ্কের হারে নিজেদের প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছিল। অর্থাৎ চীনের অর্থনীতি ছিল দীর্ঘকালব্যাপী একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পরিপক্ব দশায়। এটাকে যে কোনো উন্নত দেশের অর্থনীতির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ ভাবতে কোনো দ্বিধা থাকে না। কিন্তু তা সহসা নিচের দিকে ধীরগতিতে নেমে যাচ্ছে। আগের দিনের সেসব প্রবৃদ্ধিকে আসলে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়: বস্তুত, তখন ছিল খুব স্বল্পমূল্যের মজুরি খরচ। এ উন্নয়নের জন্য চীন তুলনামূলক সস্তা শ্রমশক্তিকে অবশ্যই কৃতজ্ঞতা জানাবে।
চীন খুব সফলতার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেদের অভিযোজিত করতে পেরেছে এবং সব ক্ষেত্রে তার প্রয়োগও ঘটিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা উল্লেখ করার মতো কোনো প্রযুক্তি আবিষ্কারের সম্মান অর্জন করতে পারেনি। ২০১৫ সালের মধ্যে ‘মেইড ইন চায়না’ বাক্যটি এমন একটি পর্যায়ে উঠে আসবে, যখন চীনের প্রধান প্রধান শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তা একটি প্রতিচিত্র ধারণ করবে। প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বদরবারে চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও জাপানের মতো বড় প্রযুক্তি-নেতারা এটা নিয়ে বেশ বড় হুমকির মধ্যে পড়ে গেয়ে। তারা একাট্টা হয়েছে। তাদের সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তির বাজারে চীনের প্রবেশ কোনোভাবেই বরদাশত করতে চাইছে না। এ উদ্দেশ্যে চীনকে দমিয়ে দেওয়ার জন্য তারা এক হয়ে কাজ শুরু করেছে। যেহেতু চীন এখন পর্যন্ত তাদের অনেক অনেক হাই-টেক শিল্প খাতের প্রয়োজনে নানা রকম সূ²াতিসূ² প্রযুক্তি উপকরণ বিদেশ থেকে আমদানির ওপর প্রবলভাবে নির্ভর করছে, সেহেতু তারা ২০২৫ সালের মধ্যে তারা যে পরিকল্পনা নিয়েছিল, তাতে একটি বড় ধাক্কা খাবে।
অর্থনীতির এই প্রাকৃতিক শ্লথগতির পেছনের যে নিয়ামকটি আগুনে ঘি ঢালছে, তা হলো: যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই; তবে তার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলারের রফতানির ওপর ২৫ শতাংশ হারে ট্যাক্স বসানোর শেষ সীমা বাড়িয়েছে। ফলে বোঝা যায়, এই বাণিজ্যযুদ্ধের একটি রফাদফা মীমাংসাকর্ম সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মি. ট্রাম্প চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিংপিংকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে। এ মাসের শেষদিকে হয়তো তারা বসবে সম্ভাব্য কোনো লেনদেন বোঝাপড়া নিয়ে। চীনের রপ্তানি সাফল্য মূলত বৈশ্বিক সরবরাহ বলয়ে অংশগ্রহণের ভেতর দিয়ে গড়ে উঠেছে। তাছাড়া এর বিশ্বমানের অবকাঠামো বেশি সুবিধা দিয়েছে। এমনকি এখন পর্যন্ত যে শ্রমশক্তি রয়েছে, তাকে তুলনামূলকভাবে সস্তা ও দক্ষ বলতে হবে। অনেক বেশি মূল্যসংযোজন প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে তারা তাদের সরবরাহ বলয়কে কার্যকরভাবে বাড়িয়ে চলেছে। পাশাপাশি তারা উন্নত সহযোগী দেশের আরও বেশি সুবিধাজনক প্রযুক্তিকে অধিকার করতে সক্ষম হচ্ছে। তবে এসব সরবরাহ বলয় নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের হাতে। ফলে আরোপিত উচ্চ করের তালিকা নতুন নতুন সম্ভাবনার ওপর দারুণভাবে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে সক্ষম হচ্ছে।
প্রশ্ন চলে আসেÑএই উদ্ভুত আর্থিক সংকটের সময় রাজনৈতিক ধারা কোন দিকে গোঁ ধরবে? একটি রাজনৈতিক ধারাপ্রবণতায় যে কোনো জনপ্রিয় মতামত খুব দ্রæততার সঙ্গে জাগরণ সৃষ্টি করতে পারে এবং রাষ্ট্রকে একটি বড় হুমকির মধ্যে ফেলে দেয়। আর এভাবেই রাষ্ট্রীয় প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর সক্ষমতা দিতে একটি বিশেষ বিধান সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং তার শক্তিকে এভাবেই পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন এবং তার দুর্নীতিবিরোধী প্রচারে অনেক নিন্দুকের জš§ হয়েছিল, যারা মুখ বুজে সবকিছু সহ্য করে চলেছেÑযা একটি অর্থনৈতিক সংকটবিরোধী পক্ষকে সাধু বানিয়ে দিতে পারে। এতে শেষ পর্যন্ত চীনের যে কাঠামো দাঁড়াবে, সেটা হবে চীনের ধ্বংসযজ্ঞের পেট থেকে বেরিয়ে আসা নতুন চীন।
এ নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। এর প্রভাব ভারতের ওপর প্রবলভাবে হামলে পড়বে, কিন্তু দৃশ্যপটটি কোনো বিশেষ জাতিগত নির্দেশকে পরিণত হবে না।