নতুন সুবিধা নিতে ঋণখেলাপিদের বাংলাদেশ ব্যাংকে দৌড়ঝাঁপ
রমজান আলী : রাজনৈতিক গোলযোগের সুর ও কারখানা বন্ধ হলে বেকারত্ব বাড়বে দাবি তুলে বিভিন্ন সময় ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা নিয়ে আসছেন খেলাপি হওয়া ব্যবসায়ীরা। নানা অজুহাতে ঋণ পরিশোধ না করায় বর্তমানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকার ওপরে। অর্থ আদায়ে খেলাপিদের তালিকা ব্যাংকের শাখায় শাখায় টানানোর সুপারিশ করেছিলো অর্থ মন্ত্রণালয়। সে উদ্যোগ বাস্তবায়িত না হলেও খেলাপিরা নতুন সুবিধা নিতে তোড়জোড় শুরু করেছেন।
সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের উচ্চহার কমাতে অর্থ মন্ত্রণালয় একটি উদ্যোগ নিয়েছিল গত বছর। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যাংকার, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর মতামতের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছিলো। সেখানে ব্যাংক খাতের সমস্যা চিহ্নিতের পাশাপাশি সমাধানে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদের পরিকল্পনা নেয়া হয়।
এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ের চাহিদায় দেশের শীর্ষ ১০০ খেলাপির তালিকা তৈরি করেছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক, যা জাতীয় সংসদে প্রকাশ করেছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। যদিও ওই তালিকা তৈরির সময় অনেক খেলাপি ঋণ রাজনৈতিক তদবিরের মাধ্যমে পুনঃতফসিল করা হয়েছে। এতে বড় বড় বেশ কিছু খেলাপির নাম বাদ পড়ে যায় তালিকা থেকে।
বিশেষ করে ২০১৫ সালে ১১টি গ্রুপ ১৪ হাজার ৫৭১ কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠন করেছিল বিশেষ সুবিধায়। এসব খেলাপির নাম ওই তালিকায় আসেনি। সেসব ঋণও বর্তমানে ফের খেলাপি হয়েছে। বর্তমানে এসব ঋণে নতুন করে খেলাপি যুক্ত হয়েছে দুই হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। বর্তমানে ১১টি গ্রুপের খেলাপির পরিমাণ ছাড়িয়েছে ১৭ হাজার ১০৩ কোটি টাকার বেশি।
ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়সহ করপোরেট শাখা পর্যায় যেগুলোর স্ট্যাটাস ১, সেগুলোর দর্শনীয় স্থানে তালিকা টাঙিয়ে দেয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছিলো। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো এসব পরামর্শ বাস্তবায়নে উদ্যোগও নিয়েছিলো। এ বিষয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে ঋণখেলাপিরা কিছুটা হলেও লজ্জায় পড়বে। অনেক ব্যবসায়ীর নাম পত্রিকায় এলেও তা পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের কাছে বিশ্বাসযোগ্য না করতে নানা উদ্যোগ নেন তারা।
ব্যাংকে তাদের নাম টাঙানো হলে সমাজে সচেতনতা বাড়বে। সামাজিকভাবে কিছুটা হলেও খেলাপিরা প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন। এতে তাদের ঋণ ফেরত দেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু এটি বাস্তবায়নে রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো ব্যাংকই এখনও কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান
এখন খেলাপিরা দাবি তুলছেন, ঋণখেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্ত করার এ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার। এতে বর্তমানে যেসব খেলাপি আছেন, তাদের অনেকেই এ তালিকা থেকে বাদ পড়বেন। একই সঙ্গে সুদহার নির্ধারণ ও কিস্তির পরিমাণ বৃদ্ধির পুরোনো পদ্ধতি সংস্কারেরও দাবি তাদের।
প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি হওয়া ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। এর বাইরে খেলাপি ঋণ অবলোপন করা হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এ দুটি তথ্য যোগ করলে আনুষ্ঠানিক হিসাবেই খেলাপি হওয়া ঋণের পরিমাণ হচ্ছে প্রায় এক লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা।