টানা তিন বছর মন্দ শ্রেণিতে থাকা ঋণ অবলোপন করতে পারবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো
সোহেল রহমান : টানা তিন বছর মন্দ শ্রেণীতে রয়েছে ও নিকট ভবিষ্যতে আদায়ের সম্ভাবনা নেই Ñএমন ঋণ/লীজ/বিনিয়োগগুলো অবলোপন করতে পারবে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে এর জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিতে হবে এবং কোনো হিসাব আংশিকভাবে অবলোপন করা যাবে না। এছাড়া অবলোপনের আগে ‘অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩’ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে হবে এবং বিধান অনুযায়ী, স্থগিত সুদ বাবদ সংরক্ষিত অর্থ বাদ দেয়ার পর অবশিষ্ট ঋণস্থিতির সম-পরিমাণ প্রভিশন রাখতে হবে।
অতি সম্প্রতি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রণীত ‘ঋণ/লীজ/বিনিয়োগ অবলোপন নীতিমালা’য় এসব কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে এ-সংক্রান্ত ইতোপূর্বে জারিকৃত সকল নির্দেশনা বাতিল করা হয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, অবলোপনযোগ্য ঋণ/লীজ/বিনিয়োগ-এর বিপরীতে সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বন্ধকীকৃত সম্পত্তি (যদি থাকে) নিয়মানুযায়ী বিক্রয়ের চেষ্টা করতে হবে। বিক্রয়ের চেষ্টা ব্যর্থ হলে কিংবা গ্যারান্টারের কাছ থেকে পাওনা অর্থ আদায়ে ব্যর্থ হলে চিহ্নিত ঋণ/লীজ/বিনিয়োগ অবলোপনের আওতায় আসবে। অবলোপনের জন্য চিহ্নিত ঋণ/লীজ/বিনিয়োগ হিসাবের ক্ষেত্রে পূর্বে আইনগত কোনো ব্যবস্থা গৃহীত না হয়ে থাকলে অবলোপনের পূর্বে অবশ্যই ‘অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩’ অনুযায়ী মামলা দায়ের করতে হবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, ক্ষুদ্র অঙ্কের ঋণের ক্ষেত্রে ‘অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩’-এর আওতায় অত্যাবশ্যকীয় মামলাযোগ্য না হলে কিংবা প্রয়োজনে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ মামলা দায়ের ছাড়াই অবলোপন করা যাবে। এছাড়া মৃত ব্যক্তির নিজ নামে বা তার একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ/লীজ/বিনিয়োগ হিসাব ঋণ-শ্রেণীমান নির্বিশেষে ও ‘অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩’ অনুযায়ী মামলা দায়েরযোগ্য না হলে মামলা দায়ের ছাড়াই সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান তার নিজস্ব বিবেচনায় অবলোপন করতে পারবে। তবে একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির উপার্জনক্ষম উত্তরসূরী রয়েছে কি নাÑ তা বিবেচনায় নিতে হবে।
অবলোপন-পরবর্তী আদায় কার্যক্রম: ঋণ অবলোপনের পরও সংশ্লিষ্ট ঋণ/লীজ/বিনিয়োগ-এর ওপর আর্র্থিক প্রতিষ্ঠানের দাবি অব্যাহত থাকবে এবং অবলোপনকৃত ঋণ/লীজ/বিনিয়োগ আদায়ের লক্ষ্যে আইনী প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার পাশাপাশি প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ‘ডেট কালেকশন ইউনিট’ গঠন করে আদায়ের পদক্ষেপ নিতে হবে। দায়েরকৃত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং অর্থ আদায়ের লক্ষ্যে প্রয়োজনে তৃতীয় পক্ষ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করা যাবে।
অবলোপনকৃত ঋণ/লীজ/বিনিয়োগ হিসাব রিপোর্টিং পদ্ধতি: সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবলোপনকৃত ঋণের হিসাব একটি পৃথক লেজারে সংরক্ষণ করতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক প্রতিবেদনে ক্রমপুঞ্জিভূত ও চলতি বছরে অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ পৃথকভাবে ‘নোট্স টু দ্য একাউন্টস’-এ উল্øেখ করতে হবে।
অন্যদিকে খেলাপি ঋণ গ্রহীতার ঋণ/লীজ/বিনিয়োগ হিসাব অবলোপন করা হলেও ঋণের দায় সম্পূর্ণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা যথানিয়মে ‘খেলাপী’ হিসেবে চিহ্নিত হবেন এবং অবলোপনকৃত ঋণ/লীজ/বিনিয়োগ-এর তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো’-তে ‘বিএলডব্লিউ’ হিসেবে যথরীতি রিপোর্ট করতে হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের ঋণ/লীজ/বিনিয়োগ অবলোপন সংক্রান্ত তথ্য প্রতি তিন মাস পরপর বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে।
অন্যান্য বিধি-নিষেধ: অবলোপনকৃত ঋণ/লীজ/বিনিয়োগ হিসাব পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠন করা যাবে না। শুধুমাত্র এক্সিট প্ল্যানের আওতায় এসব ঋণ/বিনিয়োগ হিসাব এর পরিশোধসূচী নির্ধারণ করা যেতে পারে। কোনো অবস্থাতেই মূল ঋণের আসল বা আসলের অংশ বিশেষ মওকুফ করা যাবে না। পরিচালক পদে থাকাকালীন কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের নিজ নামে কিংবা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে গৃহীত ঋণ/লীজ/বিনিয়োগ হিসাব অবলোপনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নিতে হবে। সম্পাদনা : ইকবাল খান