গোড়াতেই কাটছাঁট হচ্ছে নতুন এডিপি, আকার দাঁড়াচ্ছে ১,৯৮,৩০০ কোটি টাকা
সোহেল রহমান : বাজেটে প্রক্ষেপিত মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) কখনোই পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে না পারলেও প্রতিবছরই বাজেটে এডিপি’র আকার বাড়ছে। এ ধারাবাহিকতায় আসন্ন বাজেটেও এডিপি’র আকার চলতি অর্থবছরের মূল এডিপি’র তুলনায় প্রায় ২৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বাড়ছে। তবে এটি আরও বাড়তে পারে। বিশেষত: চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রাক্কলিত হওয়ায় এবার মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর চাহিদা ও চাপ বাড়ছে। এদিকে চাহিদা, চাপ ও নতুন এডিপি’র আকার বাড়লেও গোড়াতেই ৭ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়েছে নতুন প্রস্তাবিত এডিপি থেকে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য প্রাথমিকভাবে এডিপি’র আকার প্রক্ষেপণ করা হয়েছিল ২ লাখ ৫ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। এটি আগামী অর্থবছরের প্রাক্কলিত জিডিপি’র ৭ শতাংশ। কিন্তু রাজস্ব আয় বাড়ার গতিধারা পর্যালোচনায় সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আসন্ন বাজেটে এডিপি’র আকার প্রস্তাব করা হয়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এটি জিডিপি’র ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। এদিকে, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটে এডিপি’র আকার ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এটি ছিল বাজেটে প্রাক্কলিত জিডিপি’র ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটে এডিপি’র আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, গত ছয়টি অর্থবছরে মূল এডিপি’র আকার বেড়েছে প্রায় ২১৪ শতাংশ। গত পাঁচ বছরে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে, সেগুলোর মোট ব্যয় ১৫ লাখ কোটি টাকার অধিক। সে হিসাবে বছরে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা এডিপি বরাদ্দ প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবায়ন সক্ষমতার অভাবে প্রতি বছরই মূল বাজেটের এডিপি কাটছাঁট করে সংশোধিত এডিপি প্রণয়ন করা হয়। আর সংশোধিত এডিপি-ও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয় না।
জানা যায়, নতুন এডিপি-তে অন্তর্ভূক্তির জন্য সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগ যেসব প্রস্তাব পাঠিয়েছে সেগুলোর মোট আর্থিক ব্যয় প্রায় ২ লাখ ৮৩ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর উন্নয়ন ব্যয়ের এই অতিরিক্ত চাহিদার যৌক্তিকতা পর্যালোচনা করে দেখছে অর্থ বিভাগ। পরিকল্পনা কমিশনের একটি সূত্রমতে, চাহিদার যৌক্তিকতা থাকলে বরাদ্দ বাড়ানো হতে পারে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এডিপি-তে মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোর ব্যয়সীমা নির্ধারণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের ক্ষেত্রে বছরভিত্তিক ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ বা এর বেশি, মধ্যম প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে ৮ থেকে ৯ শতাংশ এবং সাধারণ প্রকল্পের ক্ষেত্রে ৫ থেকে ৭ শতাংশ ব্যয় প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে।
জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই ২০১৮-জানুয়ারি ২০১৯) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) খাতে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ২৮২ কোটি টাকা, এটি মূল বরাদ্দের মাত্র ৩৬ শতাংশ। তবে গত অর্থবছরের তুলনায় এবার ব্যয় বেড়েছে। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে একই সময়ে এডিপি ব্যয় হয়েছিল ৫৪ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা।
এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়াতে গত বছর শেষের দিকে অনুষ্ঠিত বাজেট মনিটরিং কমিটির বৈঠকে কিছু সুপারিশ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ অনুমোদিত ব্যয়সীমার মধ্যে প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগের অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্পসমূহের বিপরীতে অর্থায়ন নিশ্চিত করা; নতুন অগ্রাধিকার প্রকল্পের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অর্থের সংস্থান না হলে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে বা স্থগিত রেখে নতুন প্রকল্পে অর্থায়ন করা; সর্বোচ্চ বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্ত ১০০টি প্রকল্পে বৈদেশিক সাহায্যের ছাড় ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ কর্তৃক নিয়মিত পরিবীক্ষণ সভা করা; দক্ষ প্রকল্প পরিচালকের অভাব পূরণে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে চুক্তিভিত্তিক প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করা এবং প্রবৃদ্ধি সহায়ক ১০টি বড় প্রকল্প সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করা ইত্যাদি। সম্পাদনা : ইকবাল খান