যে ১০টি নীতি সাফল্য এনেছিলো বিল গেটসের জীবনে
আনিস রহমান
প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্বস সাময়িকী বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের একটি তালিকা প্রকাশ করে। গত বাইশ বছরে যার নাম সতেরো বার শীর্ষে ছিল তার নাম বিল গেটস। সূত্র : ইন্টারনেট
৭৮.৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ নিয়ে সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বিশ্বের শীর্ষ ধনীর স্থান দখল করেছেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর সাফল্যের পেছনে অনেক উত্থান পতন আছে; আছে খারাপ সময়ে হতাশা কাটিয়ে আবার নতুন করে সবকিছু শুরু করার উদ্যোগ। বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও ভাষণে তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে চমৎকার সব পরামর্শ দিয়েছেন। বিশ্বের শীর্ষ ধনী এই ব্যক্তির তরুণদের উদ্দেশ্যে দেয়া উল্লেখযোগ্য ১০টি পরামর্শ তুলে ধরলাম এ লেখায়।
যত দ্রæত সম্ভব শুরু করে দিন : বিল গেটস সব সময় একটি কথা বলেন, ‘এখনই শুরু করে দিন’। কারণ আজ যে আইডিয়া মাথায় নিয়ে আপনি ঘুরছেন, তা যদি বাস্তবায়ন করতে না পারেন তাহলে ঠিক কয়েক বছর পর দেখবেন আপনার আইডিয়াটি কাজে লাগিয়ে ঠিকই আরেকজন সফল হয়ে গেছে। তখন আফসোস ছাড়া আর কিছুই আপনার করার থাকবে না।
প্রতিদিন নিজের ‘সেরা’ টা দিতে হবে : বিল গেটসের ভাষায় জীবনটা সেমিস্টার হিসেবে ভাগ করা নেই যে কয়েক মাস পর পর চাইলেই আপনি আগের ভুলগুলো শুধরে নেয়ার সুযোগ পাবেন। এমনকি এখানে ব্রেক বলেও কিছু নেই। আপনাকে প্রতিটি সেকেন্ডের যথার্থ ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ প্রতিদিনই আপনাকে আপনার সেরাটাই দিতে হবে।
আপনি নিজেই নিজের ‘বস’: স্বপ্ন পূরণের পথে অন্যকে অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকুন। নিজেই এমন কিছু করুন যাতে অন্যরা আপনাকে অনুসরণ করে। প্রতিটি মানুষের স্বকীয় সত্তা ও চিন্তাশক্তি রয়েছে। নিজের স্বকীয়তাকে কাজে লাগান। দেখবেন, একটা সময় যাকে আপনি অনুসরণ করার কথা চিন্তা করেছিলেন, জীবন যুদ্ধে তার থেকেও আপনি অনেক এগিয়ে গেছেন।
না বলতে শিখুন : আপনি যত প্রতিভাবানই হয়ে থাকুন, প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টার বেশি কিন্তু আপনার হাতে নেই। এই ২৪টি ঘণ্টাকে কে কীভাবে ব্যবহার করলো সেটাই নির্ধারণ করে দেয় একজন সফল ও ব্যর্থ মানুষের মধ্যে পার্থক্য। বিল গেটস হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘জীবনের সেরা উপদেশটি আমি পেয়েছি বন্ধু ওয়ারেন বাফেটের কাছে থেকে। সে বলেছিলেন, তোমাকে ‘না’ বলতে জানতে হবে’। বিল গেটস মনে করেন, কখনো কখনো আপনার ‘না’ বলতে পারাটা আপনাকে আপনার লক্ষ্যে অবিচল রাখতে সাহায্য করে।
দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হোন : প্রত্যেক সফল উদ্যোক্তাই একটি ব্যাপারে জোর দিতে বলেন। তা হচ্ছে- ‘দৃঢ় প্রতিজ্ঞ’ হওয়া। প্রতিজ্ঞা আসে ভালোবাসা থেকে। কাজের প্রতি প্রচÐ ভালোবাসা তৈরি করুন। আপনি যে কাজটি করছেন, তার প্রতি আপনার ভালোবাসা থাকতে হবে। সফল মানুষেরা একমাত্র ভালোবাসা দিয়েই প্রতিটি কঠিন কাজকে সহজ করে ফেলে।
জীবন আপনার সেরা স্কুল : শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয় বরং জীবনই আপনার সেরা স্কুল। আপনি যত বই-পুস্তকই পড়ে থাকেন না কেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যত পরীক্ষাই দেন না কেন এসবের কোনোটাই আপনাকে শেখাতে পারবে না কীভাবে জীবনের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। আপনাকে নিজের জীবন থেকে শিখেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত হতে হবে।
আশা হারাবেন না : বিল গেটস বলেন, ‘লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে হতাশাবাদী হলে চলবে না বরং সব সময় আশাবাদী হতে হবে’। ২০১৩ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এর এক ভাষণে তিনি শিক্ষার্থীদের বলেছিলেন, ‘আশাবাদ অনেক সময় মিথ্যে আশায় পরিণত হয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, মিথ্যে হতাশা বলেও কিছু আছে’।
সমালোচনাকে স্বাগত জানান : বিল গেটস তাঁর ‘ইঁংংরহবংং ড়ভ ঞযব ঞযড়ঁমযঃ’ বইয়ে সমালোচনার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন অভিযোগ আর অসন্তুষ্টি মানুষকে যে কোনো কাজে আরও ফলো করার সুযোগ করে দেয়। তিনি লিখেছেন, “আপনার সব থেকে অসন্তুষ্ট কাস্টমারই আপনার শেখার সবচেয়ে বড় উৎস’।
সাফল্যের হিসাব করুন : ২০০৩ সালে বিল গেটস তাঁর ‘ঞযব গড়ংঃ চড়বিৎভঁষ ওফবধ ওহ ঞযব ডড়ৎষফ’ বই থেকে তাঁর কাছে ‘শিক্ষা’ কী তা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি সব সময় একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করে, একটা নির্দিষ্ট সময় পরে তার হিসাব করেন যে, আপনি কতটুকু আগালেন তাহলেই লক্ষ্যে অবিচল থাকতে পারবেন’। এর সঙ্গে তিনি এও যোগ করেছেন- ‘এটা বলা যতটা সহজ, করা ঠিক ততটাই কঠিন’।