সম্ভাবনার চা রপ্তানিতে অগ্রগতি কম
আবুল বাশার
পানীয় হিসেবে বিশ্বে পানির পরেই চায়ের অবস্থান। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চায়ের চাহিদা এবং ভোক্তাদের কাছে এর জনপ্রিয়তা দিনকে দিন বাড়ছেই। ‘প্রাথমিক পণ্য’ হিসেবে চাকে রফতানি আয়ের একটি বড় উৎস হিসেবে গণ্য করা হলেও এখনও এ খাত থেকে আশাব্যঞ্জক রফতানি আয় দেশে আসছে না।
২০১৬-১৭ অর্থবছরেও যেখানে চা রফতানি থেকে দেশ ৪৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার আয় করেছিল, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সেখানে আয় হয়েছে ২৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। আর চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) চা রফতানি থেকে আয় হয়েছে ১৭ লাখ ১০ হাজার ডলার, যা মোট প্রাথমিক পণ্য রফতানি আয়ের শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ। অর্থবছরের শেষ পর্যন্ত এই ধারাবাহিকতায় এ খাতের রফাতানি আয় আগের অর্থবছরের তুলনায় বাড়লেও প্রাথমিক পণ্যের রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধির তুলনায় তা কম থাকবে।
চা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের তৈরি করা সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দেশ থেকে ৮৯ কোটি ৭৮ লাখ ৬০ হাজার ডলারের প্রাথমিক পণ্য রফতানি হয়েছে। এর মধ্যে ৫১ কোটি ৫৯ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য, ৩০ কোটি ৫২ লাখ ডলারের হিমায়িত খাদ্য, ছয় কোটি ৫৫ লাখ ডলারের কাঁচা পাট, ১৭ লাখ ১০ হাজার ডলারের চা এবং ৯৫ লাখ ৫০ হাজার ডলারের অন্যান্য প্রাথমিক পণ্য বিদেশে রফতানি রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সার্ক অঞ্চলের কয়েকটি চা রফতানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বনিন্মে রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশের চেয়ে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও শ্রীলঙ্কা থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভারতের সামগ্রিক রফতানি আয়ের শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ এসেছিল চা থেকে। আর শ্রীলঙ্কায় এই হার ছিল ১৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
চায়ের চাহিদা, উৎপাদন ও রফতানি: গত অর্থবছরে দেশে ৭৮ হাজার ১৩০ মেট্রিক টন চা উৎপাদিত হয়, যা এর আগের অর্থবছরের উৎপাদনের তুলনায় দুই দশমিক ২২ শতাংশ কম। এছাড়া বিগত বছরের উৎপাদিত চায়ের মধ্য থেকে ৪৭ হাজার ৭৩০ টন চা মজুত ছিল। গত অর্থবছরে ৭৮০ টন চা ২২ লাখ ৮০ হাজার ডলারে রফতানি হয়। প্রতি কেজি চায়ের রফতানি মূল্য পড়ে দুই দশমিক ৯২ ডলার। চায়ের বৈশ্বিক উৎপাদন: ২০১৬ সালে সারা বিশ্বে ৫৪৬ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়। আগের বছরের তুলনায় উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি ছিল তিন দশমিক ৪৩ শতাংশ। ওই বছর বৈশ্বিক চা উৎপাদনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ছিল এক দশমিক ৫৬ শতাংশ। চা উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে চীন। এর পরই ভারত, কেনিয়া ও শ্রীলঙ্কার অবস্থান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে বাংলাদেশের চায়ের প্রাথমিক আমদানিকারক দেশ ছিল পাকিস্তান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চা আমদানি করেছে পাকিস্তান, ৩১ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের অভাব: বাংলাদেশ চা বোর্ডের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও এবং অন্য তিনটি পার্বত্য এলাকার জমি ও আবহাওয়া চা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বর্তমানে চা চাষের জন্য যে পরিমাণ জমি রয়েছে, তার ৫৫ শতাংশও যদি ব্যবহার করে যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে দেড় টন করে গুণগত মানসম্পন্ন চা উৎপাদন করা যায়, তাহলে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে বছরে এক হাজার টন চা উৎপাদন করা সম্ভব হবে। বর্তমানে ৫০ শতাংশ জমিতে চা উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে এক দশমিক ৩২ টন চা উৎপাদিত হচ্ছে।
চা বোর্ড বলছে, চা উৎপাদন কমে আসছে মূলত বিনিয়োগের অভাবে।
চা বাগান ও কারখানার উন্নয়নে স্বল্প সুদে এবং সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ প্রয়োজন। কেননা চা উৎপাদনে যাওয়ার আগে চা চাষের পেছনে অন্তত পাঁচ-সাত বছরের বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। (বণিক বার্তা থেকে)