১৬ হাজার কোটি টাকার আখাউরা সিলেট ডুয়েলগেজরেললাইন প্রকল্প একনেকের অনুমোদন পাচ্ছে কাল
শাহীন চৌধুরী : রেলওয়েকে আধুনিকায়ন করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের আখাউড়া সিলেট সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করার প্রকল্প অনুমোদনের জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার একনেকের বৈঠকে তোলা হচ্ছে। বাংলাদেশ চায়না জি টু জি প্রকল্পের আওতায় এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ১০৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। এই প্রকল্প গ্রহণের জন্য ২০০ দশমিক ৩০ একর ভূমি অধিগ্রহণ এবং সুপারভিশন পরামর্শক সেবা সংগ্রহ করা হবে। বর্তমানে রেলওয়ের এই সেকশনে প্রতিদিন ১৩ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে ২৬ জোড়া ট্রেন চলতে পারবে। এ ছাড়া ঢাকা-সিলেট ও চট্টগ্রাম-সিলেট পথে যাত্রাসময় প্রায় আড়াই ঘন্টা হ্রাস পাবে। একইসঙ্গে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি যাত্রী ও পণ্য পরিবহন বৃদ্ধি পাবে এবং এটি আসামের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করবে।
সূত্রমতে, রেলওয়ের আখাউড়া সিলেট সেকশনটি অত্যন্ত পুরাতন। অবিলম্বে ডুয়েল গেজে রুপান্তর করা না হলে ঢাকা-সিলেট ও সিলেট চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি ট্রেন সার্ভিস পরিচালনা বাধাগ্রস্থ হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের সকল মিটারগেজ রেললাইনকে ব্রডগেজ/ ডুয়েল গেজে রুপান্তরের অংশ হিসেবেই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। আখাউড়া সিলেট সেকশনকে ডুয়েলগেজ রুপান্তর প্রকল্পের আওতায় সিলেটে অত্যাধুনিক টার্মিনাল বিল্ডিং, লোকোসেড, ওয়াশপিট ও ডিপো নির্মাণ করা হবে। এর ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রামে লোকোমোটিভ ও ক্যারেজের বেজ স্টেশন সিলেটে স্থানান্তর করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের বিদ্যমান নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং উপ-আঞ্চলিক রেল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য দেশের সকল মিটার গেজ সেকশনকে পর্যায়ক্রমে ডুয়েলগেজে রূপান্তরের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরের আখাউড়া-লাকসাম সেকশনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তরের কাজ চলমান রয়েছে। অবশিষ্ট অংশের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও ডিটেইল ডিজাইন প্রণয়ণের কাজ চলমান রয়েছে।
অধিকন্তু ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প ভারতীয় এলওসি অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে, যার অধীনে কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ রেল লাইন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ট্র্যান্স এশিয়ান রেলওয়ে রুট-১ ‘গেদে (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)- দর্শনা- ঈশ্বরদী- জয়দেবপুর- টঙ্গী- আখাউড়া- চট্টগ্রাম- দোহাজারী- গুনদুম (মিয়ানমার বর্ডার)’ এর অনুমোদিত সাবরুট-২ হিসেবে আখাউড়া- কুলাউড়া- শাহবাজপুর-মহিশাসন (ভারত) অংশ অন্তর্ভুক্ত। কুলাউড়া হতে আখাউড়া এবং সিলেট পর্যন্ত বর্তমানে মিটারগেজ রেললাইন রয়েছে। আখাউড়া-সিলেট সেকশন ডুয়েলগেজে উন্নীত করা না হলে ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম থেকে সিলেটে সরাসরি ব্রডগেজ ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হবে না এবং নিরবিচ্ছিন্ন রেল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। এ প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য আখাউড়া-সিলেট সেকশন ডুয়েলগেজে রূপান্তর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে আখাউড়া-সিলেট সেকশনটি জরাজীর্ণ। ট্র্যাক স্ট্রাকচার, পাহাড়ি এলাকার আকাবাকা এলাইনমেন্ট ও অপারেশনাল জটিলতাজনিত কারণে এ সেকশনে ট্রেনের গড় গতিবেগ প্রতিঘন্টা ৪৫-৫০ কিঃ মিঃ। সেকশনটি ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হলে ব্রড গেজ ট্রেন ১২০ কিঃ মিঃ/ঘন্টা ও মিটার গেজ ৮০ কিঃ মিঃ/ঘন্টা বেগে পরিচালিত হবে। ফলে ঢাকা-সিলেট ও চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে ট্রেনের রানিং টাইম ২.৫০ ঘন্টা সাশ্রয় হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে আখাউড়া-সিলেট সেকশনের বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইন ডুয়েলগেজে রূপান্তরের জন্য “চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন ব্রীজ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানী লিমিটেড (সিআরবিজি)”এর সাথে ১৫.৯.১৫ তারিখে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। ২১.৩.১৬ তারিখে এ প্রকল্পের প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিপি) অনুমোদিত হয়।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও গণচীনের প্রেসিডেন্টের উপস্থিাতিতে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী ও চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর দু’দেশের মধ্যে জি টু জি বিষয়ক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এই প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ১৬ হাজার ১০৪ দশমিক ৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে জিওবি ৫ হাজার ৪৫০ দশমিক ০৮ কোটি এবং প্রকল্প সাহায্য ১০ হাজার ৬৫৪ দশমিক ৩৬ কোটি টাকা।