৩০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে ভারতীয় কনসোর্টিয়াম
শেখ নাঈমা জাবীন : বেসরকারি খাতে বিল্ড-ওন-অপারেট (বিওও) ভিত্তিতে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মুহুরী বাঁধ এলাকায় ৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে তিন কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত ভারতীয় কনসোর্টিয়াম। এরা হচ্ছেÑ কনসোর্টিয়াম অব ‘ব্যাংগোয়াটি প্রোডাক্টস লিমিটেড’, ‘রিজেন পাওয়ারটেক প্রাইভেট লিমিটেড’ ও ‘সিদ্ধান্ত উইন্ড এনার্জি প্রাইভেট লিমিটেড’। বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার পর এই বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২০ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ কিনবে সরকার। প্রতি কিলোওয়াট/ঘন্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ হার নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১১ সেন্ট। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ হচ্ছে ৮ টাকা ৮৮ পয়সা। বিশ বছর মেয়াদে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে সরকারের আনুমানিক ব্যয় হবে ৯৩৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ইতোপূর্বে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘টেলর ইঞ্জিনিয়ারিং’ ও ‘পিএইচ কনসালটিং ইঙ্ক’-এর যৌথ উদ্যোগে কক্সবাজার জেলায় ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এবং কনসোর্টিয়াম অব ‘পিআইএ গ্রæপ এলসিসি’ ও ‘বাংলাদেশ অল্টারনেটিভ এনার্জি সিস্টেম লিমিটেড’-এর উদ্যোগে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের দুটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। উল্লেখিত দুটি কেন্দ্রেই প্রতি কিলোওয়াট/ঘন্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ সেন্ট (৯ টাকা ৬০ পয়সা)।
সূত্র জানায়, সৌর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এ পর্যন্ত স্থাপিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট ক্ষমতা হচ্ছে ৩০৬ মেগাওয়াট। কিন্তু বায়ু শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে তেমন অগ্রগতি নেই। এ পর্যন্ত দেশে মাত্র ২ দশমিক ৯ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। দেশে বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য এ পর্যন্ত প্রায় ২২টি স্থান চিহ্নিত করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। এসব স্থানে বায়ু সম্পদ জরীপে উইন্ড মনিটরিং স্টেশন নির্মাণ করা হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মুহুরী বাঁধ এলাকায় ৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে গঠিত কনসোর্টিয়াম ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর প্রস্তাব দাখিল করে। কোম্পানি নিজ অর্থে ও নিজ ব্যবস্থাপনায় প্রকল্পের জন্য জমির সংস্থান, বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য ট্রান্সমিশন লাইন ও সাব-স্টেশন নির্মাণসহ সম্পূর্ণ প্রকল্প ব্যয় বহন করবে। প্রস্তাব দাখিলের পর নেগোসিয়েশন সভায় প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা, আর্থিক সক্ষমতা ও কারিগরি যোগ্যতা, জমি উন্নয়ন, প্রকল্প সাইট, প্রকল্পের ইনিশিয়াল এনভায়রনমেন্ট এসেসমেন্ট, পাওয়ার ইভ্যাকুয়েশন, ট্রান্সমিশন লাইন ও সাব-স্টেশন নির্মাণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর বিদ্যুতের চাহিদা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। সে হিসাবে আগামী ২০২১ সালে দেশে দৈনিক ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। এদিকে বর্তমানে দেশে দৈনিক মোট বিদ্যুৎ (ক্যাপটিভসহ) উৎপাদন ক্ষমতা হচ্ছে ১৬ হাজার ৪৬ মেগাওয়াট। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না থাকায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদিত হচ্ছে। আর সার কারখানাগুলো চালু থাকলে বিদ্যুতের উৎপাদন কমে যায় প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট।