আমাদের বিশ্ব • আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
পহেলা বৈশাখকে ২০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যের সম্ভাবনা
স্বপ্না চক্রবর্তী : বছরের সব জরাজীর্ণতাকে ধুয়ে দিতেই নতুনের বার্তা নিয়ে দরজায় উঁকি দিচ্ছে পহেলা বৈশাখ। কালের পরিক্রমায় দিনটি হয়ে উঠেছে বাঙ্গালির প্রাণের উৎসবের দিন। প্রকৃতির পাশাপাশি নিজেদেরকেও সাজাতে সমাজের সব স্তরের মানুষ চেষ্টা করেন নিজের সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়ে। তাইতো দিনটি শুধু উৎসবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। বাণিজ্যের হিসাবেও মহিমান্বিত হয়ে উঠে বৈশাখ শুরুর আগের দিনগুলো। কাছাকাছি সময়ে ঈদ বা দুর্গাপূজা না থাকলেও রাজধানীসহ দেশের সব জায়গার শাড়ির দোকান, বুটিক হাউজ বা ডিজাইনার হাউজগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। চলতি বছরে পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে ১৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকার পোশাকের ক্রয়-বিক্রয়সহ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার অন্যান্য পণ্যের বাণিজ্য হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের ছাড় দিয়েছে দোকান মালিকরা। ফ্যাশন প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফ্যাশন উদ্যোক্তা সমিতি (এফইএবি বা ফ্যাশন উদ্যোগ) এর তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশের ফ্যাশন হাউজে সারা বছরে ৬ হাজার কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। তার মধ্যে ৫০ শতাংশই হয় রোজার ঈদে। ২৫ শতাংশ হয় পয়লা বৈশাখে। বাকিটা সারা বছর। সারাদেশে পাঁচ থেকে ছয় হাজার ফ্যাশন হাউজ আছে। তার মধ্যে ঢাকাতেই ৬০ শতাংশ। ফ্যাশন হাউজগুলোতে এবার নববর্ষের বেচাকেনা ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা হবে বলে দাবি করেন এফইএবি এর নেতারা। এ প্রসঙ্গে ফ্যাশন এন্টারপ্রেনর অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি এবং সাদাকালোর স্বত্বাধিকারী আজহারুল হক আজাদ বললেন, দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোর বছরে বিক্রি আনুমানিক সাত হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। এর মধ্যে দুই ঈদ মিলে বিক্রি হয় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। আর শুধু বৈশাখে বিক্রি হয় প্রায় এক হাজার ৭০০ কোটি টাকার পোশাক। সে হিসাবে বৈশাখে বিক্রি একটি ঈদের প্রায় সমান। এর বাইরে কসমেটিকস, জুয়েলারি, জুতাসহ অন্যান্য অনুসঙ্গ মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার ক্রয়-বিক্রয় এই বৈশাখে হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ব্যাংক ও এটিএম বুথে পর্যপ্ত টাকা রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত দুই বছর বছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামোতে এই বৈশাখী বোনাস বা নববর্ষ ভাতা রাখা হয়। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বৈশাখী বোনাস হিসেবে ৩১৭ কোটি টাকা পেলেও বাজারে পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে লেনদেন হয়েছে তার কমপক্ষে ১০ গুণ। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও পহেলা বৈশাখের ভাতা দিতে শুরু করেছে। ফলে বাজারে টাকার সরবরাহ বেড়েছে। বেড়েছে দোকানগুলোতে শেষ মুহূর্তের কেনা-কাটাও। রাজধানীর মৌচাক মার্কেটে পরিবারকে নিয়ে কেনাকাটা করতে আসা সালমা আক্তার বলেন, ঈদ ও পূজা দুটোই ধর্মীয় উৎসব। সে অর্থে পহেলা বৈশাখ উদযাপন জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বাঙ্গালির প্রাণের উৎসব। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের এই উৎসবে নিজের এবং পরিবারের জন্য সেরাটাই কেনা লক্ষ্য আমার। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান