নুসরাত হত্যায় বোরকা পড়া ৪ জনের মধ্যে তিনজন ছিল পুরুষ
শাহজালাল ভূঞা ও সুজন কৈরী : ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকা-ের নির্দেশদাতা একই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ্দৌলা। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর নুসরাতের গায়ে সরাসরি আগুন দেয় চারজন। তাদের মধ্যে একজন ছিল শাহাদাত হোসেন শামীম। আরেকজন মেয়ে ছিল (যার পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে)। আগুন দিয়ে মাদ্রাসার মূল গেট দিয়ে পালিয়ে যায় তারা বলে জানিয়েছে নুসরাত হত্যা মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআই। শনিবার দুপুরে ধানমন্ডিস্থ সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির ডিআইজি বনোজ কুমার মজুমদার।
তিনি বলেন, নুসরাত হত্যায় এজাহারভুক্ত আট আসামির মধ্যে পরিকল্পনাকারী শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), নুর উদ্দিন (২০), মাকসুদ আলম কাউন্সিলর (২০), জোবায়ের আহম্মেদ, জাবেদ হোসেন (১৯) ও আফছার উদ্দিনকে (৩৫) গ্রেফতার করা হয়েছে। একই ঘটনায় আগে শ্লীলতাহানির অভিযোগে গ্রেফতার সিরাজ উদ্দৌলাকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এজাহারভুক্ত অপর আসামি হাফেজ আব্দুল কাদের পলাতক। এদের মধ্যে নুর উদ্দিন হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকার করে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে। তিনি বলেন, নুসরাতকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে সিরাজ উদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। ৪ এপ্রিল কারাগারে নুর উদ্দিন ও শাহাদাতসহ চারজন দেখা করে। সেখানেই সিরাজ কিছু একটা করে নুসরাতকে শায়েস্তা করার নির্দেশ দেন। এরপর ৫ এপ্রিল সকাল নয়টা থেকে সাড়ে নয়টার দিকে মাদ্রাসা সংলগ্ন একটি হোস্টেলের পশ্চিম অংশে তারা হত্যার পরিকল্পনা করে। সেখানে শামীম নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার প্রস্তাব দেয়। দুই কারণে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর একটি হলো অধ্যক্ষকে আটক করায় আলেম সমাজকে হেয় করা হয়েছে বলে মনে করে তারা এবং শামীমের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা। পরিকল্পনার কথা তারা দুই ছাত্রী ও দুই ছাত্রের সঙ্গে শেয়ার করে। এরমধ্যে একজন মেয়ের দায়িত্ব পড়ে ৩টি বোরকা আনা ও পলিথিনের ব্যাগে কেরোসিন আনা। ওই ছাত্রী কথা মতো ৬ এপ্রিল সকাল ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে শাহাদাতের হাতে হস্তান্তর করে। সকাল ৯টার পর ওদের ক্লাস পরীক্ষা শুরু হয়। এর আগে থেকেই সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে দুটি টয়লেটে লুকিয়ে ছিল হত্যাকারীরা। ঘটনায় অংশ নেয়া শম্পা ওরফে চম্পা নামের এক ছাত্রী নুসরাতকে জানায়, ভবনের চারতলায় যান নিশাতকে মারধর করা হচ্ছে। ওই খবরে নুসরাত ছাদে গেলে তাকে আটকে দেয়া হয়। প্রথমে ওড়না দিয়ে বেঁধে এরপর কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়া হয়। বাইরে নূর উদ্দিনের নেতৃত্বে হাফেজ আব্দুল কাদেরসহ পাঁচজন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, গেট পাহারা ও স্বাভাবিক রাখার কাজ করে। আগুন দেয়ার পর সরাসরি অংশ নেয়া চারজন বোরকা পরে বের হয়ে যায়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পর সবাই গাঁ ঢাকা দেয়। বনজ কুমার বলেন, নুসরাতের গায়ে সরাসরি আগুন দেয়া চারজনের মধ্যে এক নারীসহ দুইজনকে চিহ্নিত করা গেছে। এই দুইজনের একজন শামীমকে আটক করা হয়েছে। তাকে নিয়ে সংশ্লিষ্ট আরো কয়েকজনকে গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
পিবিআই’র এ কর্মকর্তা জানান, ঘটনার পরই পিবিআই ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর পিবিআইয়ের ছয়টি ইউনিট তদন্তে অংশ নেয়। ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। তবে জড়িতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। পাঁচজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আরো একজনকে রিমান্ডের জন্য আবেদন করা হবে। একজনের রিমান্ড শেষ হয়েছে। এ ঘটনায় আরো পাঁচজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
মৃত্যুশোকে অসুস্থ হয়ে পড়ায় নুসরাতের ছোটভাই রাশেদুল হাসান রায়হানকে শুক্রবার রাতে ফেনী ডায়াবেটিস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সে বর্তমানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ৬ এপ্রিল নুসরাতের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়ার পর থেকে সে একাধিকবার অজ্ঞান হয়ে যায়। চিকিৎসাধীন ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, মানসিক দুশ্চিন্তার কারণে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এখন তার অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক রয়েছে।