নদীর ৫৮৭ একর তীরভূমি উদ্ধার, দুর্ঘটনারোধে চালু হচ্ছে ক্যাবলকার ও ফেরি সার্ভিস
তরিকুল সুমন : বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং উচ্ছেদকৃত জায়গায় ওয়াকওয়ে, বনায়ন, ইকোপার্ক, ল্যান্ডিংস্টেশন, আধুনিক টারমিনাল ও গ্যাংওয়ে, সদরঘাট টারমিনাল সম্প্রসারণ, সীমানা পিলার স্থাপন, কেবলকার, সদরঘাট থেকে যাত্রী পারাপারের জন্য ফেরি সার্ভিস, নদীর তলদেশ বর্জ্য ইত্তেলন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়। এমনটাই জানিয়েছেন নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী।
নৌ প্রতিমন্ত্রী এই প্রতিবেদককে জানান, নদীর তীর রক্ষায় উচ্ছেদ অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। নদীর জমি কোনো প্রভাবশালী দখল করতে পারবে না। এই নদীর পানি দূষণ মুক্ত করে স্বচ্ছ পানির প্রবাহ তৈরির জন্য আমরা কাজ করছি। আগামী ১০ বছরের মধ্যে বুড়িগঙ্গাসহ অন্যন্য নদীর দূষণ বন্ধ করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, আমার দেখছি বুড়িগঙ্গা নদীতে খেয়া পারাপারে প্রয়শই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে এটি বন্ধের জন্য ফেরি সার্ভিস এবং ক্যাবলকার স্থাপনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর মাধ্যমে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষ বিনোদনেরও সুযোগ পাবেন। তিনি জানান, কলকাতার কনভেয়ার ও রোপওয়ে সার্ভিসেস লিমিটেডের প্রতিনিধিরা সদরঘাটের বিভিন্ন স্পট পরিদর্শন করেছেন। তারা ক্যাবলকার স্থাপনে রাজি হয়েছেন। তাদেরকে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা নৌ পরিবহণ মন্ত্রনালয়ে দ্রুত সময়ের মধ্য জমা দিতে বলা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর মাহবুব-উল ইসলাম জানান, উচ্ছেদকৃত অংশে আরো ৩টি ইকো পার্ক (সিন্নিরটেক, টঙ্গী ও আশুলিয়া) ইকো পার্ক করা হবে, আরো ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে (হাঁটার রাস্তা), ১০৫ কি.মি রেলিং নির্মাণ, ৪৫ কিমি. তীর রক্ষা, ১০০ টি সিড়ি, ১৯ টি জেটি (১০ টি হেভি, ৯ টি হালকা), ৩৮ টি স্পাড, ১০ হাজার ৮২০ টি সীমানা পিলার স্থাপন করা হবে। এছাড়াও আমরা নদীর তলদেশ থেকে বর্র্জ্য উত্তোলনের জন্য বিশেষ ড্রেজার সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাশপাশি আমরা বুড়িঙ্গা নদীর পানি শোধন করার জন্যও উদ্যোগ নিচ্ছি।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, ২০১০ থেকে এ পর্যন্ত ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের তীরভূমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ১৫ হাজার ৮শ স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে ৫৮৭ একর তীরভূমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। উচ্ছদকুত জায়গায় এ পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, ২টি ইকো পার্ক শ্যামপুর (৬.৫ একর) এবং খানপুর (১.৫ একর), ১৪৮টি সুয়ারেজ নির্গমন লাইন বন্ধ করা হয়েছে।
ওয়াকওয়েসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক ও বিআইডব্লিউটিএর সদস্য (অর্থ) মো. নূরুল আলম জানান, প্রথম পর্যায়ে ২০ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। এখন দ্বিতীয় প্রকল্পের ৫২ কিমি. ওয়াকওয়ের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে আমরা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের জন্য প্রায় ৬ হাজার সীমানা পিলারের টেন্ডার প্রত্রিয়া প্রায় শেষ করেছে। উচ্ছেদকৃত তীর রক্ষায় ১১ কিলোমিটার জায়গা উচ্চুকরা, প্রায় ২ কিলোমিটার জায়গা পাইলিং করে খাড়াভাবে, নদীর সীমানা চিহ্নিত করার লক্ষ্যে ১০ হাজার ৮২০টি টেকসই সীমানা পিলার ৬০-৮০ ফিট গভীর পাইলিং করে স্থাপন হবে। চার নদীর দখলমুক্ত অংশের সৌন্দর্যবর্ধনে পথচারীদের বসার জন্য বেঞ্চ, বিনোদন কেন্দ্র এবং বৃক্ষরোপণ করা হবে। এতে সরকারের ব্যয় হবে ৮৪৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। চার বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।