ঋণের সুদ সিঙ্গেল ডিজিটে নামাতে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে, বললেন অগ্রণী ব্যাংকের এমডি
রমজান আলী : অগ্রণী ব্যাংক যার হাত ধরে এগিয়ে চলছে তিনি হলেন, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম। তিনি একজন বিচক্ষণ ও দূরদর্শী ব্যক্তি। তার মেধা ও পরিশ্রমে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক এখন দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। দৈনিক আমাদের অর্থনীতি’র সঙ্গে আলাপকালে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘আমি যখন ব্যাংকে যোগদান করি তখন খেলাপি ঋণ ছিলো ২৯ শতাংশ, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ শতাংশ। আগামী দুই বছরের মধ্যে সিঙ্গেল ডিজিটে আনা হবে খেলাপি ঋণ। সেই লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছি। এছাড়া বর্তমানে ব্যাংকের সবগুলো সুচক দেখলেই বুঝতে পারা যাবে যে, অগ্রণী ব্যাংক কীভাবে এগুচ্ছে, ২০১৮ সালে নগদে খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ ছিলো ৭০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, ২০১৯ সালের এ পর্যন্ত আদায় করেছি ২০৪ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা।’ তিনি বলেন, ‘রেমিট্যান্স আহরণে অন্যান্য ব্যাংকের চেয়ে অগ্রণী ব্যাংক এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে। ২০১৮ সালে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩ হাজার ৮৩ কোটি টাকা, ২০১৯ সালের এ পর্যন্ত এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। এ ধারা অব্যহত থাকলে আরো উন্নত করা সম্ভব হবে।’
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, অগ্রণী ব্যাংক দেশের মেগা প্রকল্পগুলোতে ফাইন্যান্স করছে। অন্য কোনো ব্যাংক অগ্রণী ব্যাংকের মতো এগিয়ে আসছে না। একমাত্র অগ্রণী ব্যাংকই পদ্মা সেতুর জন্য ১০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ফাইন্যান্স করেছে। এখন পর্যন্ত আর কোনো ব্যাংক পদ্মা সেতুর জন্য ফাইন্যান্স করেনি। এছাড়া বড় বড় পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোতে অগ্রণী ব্যাংক ফাইন্যান্স করেছে। সরকারের নির্দেশ অনুয়ায়ী পদ্মা ব্যাংককেও আমরা ফাইন্যান্স করেছি। এভাবে অনেক বড় বড় প্রকল্পের কাজে অগ্রণী ব্যাংক ফাইন্যান্স করছে।’
তিনি বলেন, আমাদের এবারের স্লোগান হলো ‘অবিরত অগ্রযাত্রায় অগ্রণী’। ২০১৮ সালে অগ্রণী ব্যাংক ৮১২ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করে, ২০১৯ সালের এ পর্যন্ত মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৯৫৭ কোটি টাকা। মুনাফার দিক থেকে বর্তমানে সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। এর আগে ছিলো জনতা ব্যাংক। জনতা ব্যাংকে পেছনে ফেলে এখন দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। এছাড়া লোকসানি শাখা কমে দাঁড়িয়েছে ১৪টি।
তিনি আরও বলেন, ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক বেশি জোর দিচ্ছে এসএমই ও রপ্তানিমুখী এই দুই খাতে। এছাড়া ঋণ আদায়েও বিশেষ জোর দেয়া হচ্ছে।
কৃষিখাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম হওয়ার কারণ কীÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা আছে, তা বছরের শেষ দিকে পূরণ হয়ে যাবে। গত বছর অগ্রণী ব্যাংক কৃষিখাতে ৬৬০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।’
‘সরকারি ব্যাংকগুলো সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণের সুদ দিচ্ছে, কিন্তু সেখানে বেসকারি ব্যাংকগুলো সিঙ্গেল ডিজিটে আসেনি এখনো’Ñএ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদ এখনো ডবল ডিজিটে রয়েছে। সরকারি ব্যাংকগুলো ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে। সেখানে আমানত সংগ্রহ করা হচ্ছে ছয়-সাত শতাংশে সুদে। কিন্তু বেসরকারি ব্যাংক আমানত সংগ্রহ করছে ১০ শতাংশ বা এর উপরে সুদে। এভাবে চলতে থাকলে সরকারি ব্যাংকের আমানত কিছু ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এতে ব্যাংক খাতে প্রতিযোগিতা বাড়বে। প্রতিযোগিতা বাড়লেই ব্যাংকখাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে। তাই সরকারি ও বেসরকারি সকল ব্যাংকের উচিত সরকারের নির্দেশনা মেনে চলা। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান