কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিশে^র সব মানুষকে নিয়ে বিজ্ঞানীরা তৈরি করবেন ‘বৈশ্বিক মহামস্তিষ্ক’
রাশিদ রিয়াজ : খুব শিগগির মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে ইন্টারনেটের সরাসরি সংযোগ গড়ে উঠবে। এরফলে বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে নিয়ে তৈরি হবে ‘ বৈশ্বিক মহামস্তিষ্ক।’ ফন্ট্রটিয়ারস ইন নিউরোসায়েন্সের এক নিবন্ধে এমন দাবি করে বলা হয়েছে কম্পিউটার এবং জৈবপ্রযুক্তি বা বায়োটেকনোলজিতে অভাবনীয় সাফল্যের পথ ধরে এমনটি ঘটবে। আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই এমন প্রযুক্তি বাস্তব রূপ পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
এ জন্য ন্যানোপ্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইসহ কম্পিউটার প্রযুক্তির সম্মিলনে এমনটি সম্ভব হয়ে উঠবে। বর্তমানে স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট থেকে বিনা ঝামেলায় তথ্য আহরণ করি। ভবিষ্যতে একই ভাবে মানব মস্তিষ্কের সঙ্গে ইন্টারনেটের সরাসরি সংযোগ স্থাপন সম্ভব হবে এবং একই ভাবে বিনা বাধায় তথ্য আহরণ করতে পারবে মানুষ।
বিষয়টি নিয়ে গবেষণায় জড়িত অন্যতম ব্যক্তিত্ব রবার্ট ফেরিটাস জুনিয়র বলেছেন, ন্যানোপ্রযুক্তিতে মানব মস্তিষ্কে স্থাপন করা হবে কিছু অতি ক্ষুদ্রকায় রোবট। যা ন্যানোবোট হিসেবে পরিচিত হবে। এগুলো মানুষের মন-মানসের সঙ্গে সুপার কম্পিউটারের যোগাযোগ রক্ষার কাজ করবে। ফলে ম্যাট্রিক্স সিনেমার ধাঁচে তথ্যপ্রবাহ মানুষের মন-মানসে নামিয়ে নেয়া সম্ভব হয়ে উঠবে।
এ সব ন্যানোবোট মানুষের রক্তপ্রবাহের পথ বেয়ে শেষ পর্যন্ত মস্তিষ্কের কোষরাজিতে সুনির্দিষ্টভাবে নিজেদের অবস্থান করে নেবে। মানুষের রক্তপ্রবাহের সব উপাদানই মস্তিষ্কে ঢুকতে পারে না। কারণ ব্লাড-ব্রেইন ব্যারিয়ার হিসেবে পরিচিত একটি বাঁধার দেয়াল তুলে দেয়া আছে। কিন্তু এসব অতি ক্ষুদ্রাকৃতির যন্ত্র এধরনের বাধা পার হয়ে যেতে সক্ষম হবে।
এদিকে, একাধিক কম্পিউটারের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক আমরা এখনই অজ্ঞাতসারে ব্যবহারও করছি। কিন্তু একাধিক মানুষের মস্তিষ্ক অবলম্বনে ‘ব্রেইন নেটওয়ার্ক’ সৃষ্টির প্রাথমিক কাজে এরই মধ্যে সফল হয়েছেন গবেষকরা। এর মাধ্যমে টাটরিসের মতো খেলাও সফল ভাবে খেলা গেছে। এ জন্য ইইজি’র মাধ্যমে একাধিক ব্যক্তির মস্তিষ্কের যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছিল। আর এ যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের।
ন্যানোপ্রযুক্তির এধরনের ব্যবহারের আগে মানুষের দেহে এর প্রভাব নিয়ে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাবেন। তারা বিশ^াস করছেন, শেষ পর্যন্ত এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অদূর ভবিষ্যতে একদিকে ব্যক্তি মানুষের মস্তিষ্কের আওতায় গোটা ইন্টারনেটের তথ্য ভা-ার এসে যাবে। আর অন্যদিকে বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা মানুষ পরিবারের সব সদস্যকে নিয়ে একযোগে চিন্তা-ভাবনার সুযোগও সৃষ্টি হবে। এ ভাবেই একদিন সৃষ্টি হবে হয়ে উঠবে বিশ্ব-মানুষের প্রতিটি মস্তিষ্কের সহযোগিতায় ‘বৈশ্বিক মহামস্তিষ্ক’ বা ‘গ্লোবাল সুপারব্রেন।’