আমাদের বিশ্ব • আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৪
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রাজীবের ক্ষতিপূরণের রুল শুনানিতে উঠছে আজপ্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত চান খালািিবসিএস ক্যাডার হতে চান ছোটভাই
এস এম নূর মোহাম্মদ : সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর বছর পেরোলেও ক্ষতিপূরণ পায়নি তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীবের পরিবার। দুর্ঘটনার পর রিট করলে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। পরে পরিবহন কর্তৃপক্ষ আপিল বিভাগে গেলে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দায় নিরুপন করতে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে বছর পেরিয়ে আজ শুনানিতে উঠছে ওই রুল। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের বেঞ্চে দুপুর ২টায় এ বিষয়ে শুনানির জন্য ধার্য রয়েছে বলে জানান রিটকারী আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল। তিনি বলেন, সড়কে সন্ত্রাস, হত্যাযজ্ঞ বন্ধে আমরা রায় চেয়েছি। আশাকরি আদালত একটি যুগান্তকারী রায় দিবেন। যাতে, সড়কে নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালনকারী সংস্থা আরও সচেতন হবে। রাজীবের মতো এমন প্রাণহানী যাতে না হয় সেজন্য চেষ্টা করবো আদালতের কাছ থেকে নির্দেশনা পেতে। এছাড়া রাজীবের দুই ভাইয়ের পড়া-লেখাসহ যথাযথ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে রাজীবের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছিল শাহবাগ থানায়। মামলায় অপরাধজনক প্রাণহানির অভিযোগ যুক্ত করা হয়। কিন্তু এক বছরেও পুলিশ সে মামলার তদন্ত শেষ করতে পারেনি। তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই ইদ্রিস আলী বলেন, দুই বাসের চালক কারাগারে আছেন। চলতি মাসে অভিযোগপত্র দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
রাজীবের খালা জাহানারা বলেন, আমি আশাকরি এর ন্যায্য বিচার হবে এবং তার দুইভাই যথাযথ ক্ষতিপূরণ পাবে যা দিয়ে তারা সুন্দরভাবে চলতে পারবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে চাই। এর আগে প্রধানমন্ত্রী দুই লাখ টাকা দিয়েছিলেন। এখন এরা দুই ভাই খুবই অসহায় অবস্থায় রয়েছে। আমিইবা আর কতটুকু করতে পারবো জানিনা।
রাজীবের ছোট ভাই মেহেদী হাসান বাপ্পী বলেন, এবার পহেলা বৈশাখে আমরা আনন্দ করতে পারিনি। গত বছর ভাই অন্তত জীবীত ছিল এবার তাও নেই। ঈদ আসলে বাড়ি যাবো, কিন্তু আমাদের বাড়ি নেই। আগে ভাইয়ের কাছে যেতাম, এখন সেও নেই। যারা আমার ভাইকে কেড়ে নিয়েছে আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। আশাকরি আদালত এমন একটি সিদ্ধান্ত দিবেন, যা সারা দেশের মানুষের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
মেহেদী বলেন, আমি হাফেজ হওয়ার পর এখন অষ্ট শ্রেণীতে পড়ছি। আর আমার ছোট ভাই আব্দুল্লাহ সপ্তম শ্রেণীতে। আমাদের এখন খাওয়াসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে সমস্যা হচ্ছে। শুরুর দিকে অনন্তজলিলসহ অনেকেই পাশে এসে সহযোগীতার কথা বলেছিল, কিন্তু সেটা হয়ে উঠেনি। তবে চিফহুইপ বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী দেখবেন, তিনি এতিমদের ভালবাসেন। আমরা বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী আমাদের সাক্ষাত দিবেন এবং দেখবেন। আমাদের বাড়ি নেই, আশাকরি এটি প্রধানমন্ত্রী দেখবেন।
মেহেদী আরও বলেন, বেঁচে থাকতে ভাই রাজীবের স্বপ্ন ছিল আমি বিসিএস ক্যাডার হবো। আমারও তাই ইচ্ছে ভাইয়ের স্বপ্নবাস্তবায়ন করা। যেতে চাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্থানে।
এদিকে আপিল বিভাগের নির্দেশের পর বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিচার্স ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি গত বছরের ১৫ অক্টোবর প্রতিবেদন জমা দেয় হাইকোর্টে। পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ১৮ দফা সুপারিশ করেছে কমিটি।
৪৯ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার জন্য স্বজন পরিবহনের চালকের বেপরোয়া চালনাকে দায়ী করা হয়। এ ছাড়া হালকা বাহন চালানোর লাইসেন্স থাকার পরও চালককে বিআরটিসি ডাবল ডেকার বাস চালানোর অনুমোদন দেয়ায় এই দুর্ঘটনার দায় কিছুটা বিআরটিসিরও। বিআরটিসির বিদ্যমান লিজভিত্তিক পরিবহন ব্যবস্থায় গণপরিবহনে এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে চালক নিয়োগ করে গণপরিবহন চালানো এ ধরনের দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে পর্যবেক্ষণ দেয়া হয় দায় নিরূপণ কমিটির প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আহত রাজীবের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হওয়ার পরও শমরিতা হাসপাতাল তার চিকিৎসায় সময় ক্ষেপণ করেছে। শমরিতা হাসপাতাল রাজীবের আত্মীয়স্বজনদের জন্য অপেক্ষা করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অযথা সময় নষ্ট করেছে। সে কারণে ওই হাসপাতালও রাজীবের মৃত্যুর দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।