মানসম্মত বিদ্যুৎ সঞ্চালন-বিতরণে বড় বাধা বিনিয়োগ
বাংলা ট্রিবিউন : বিদ্যুৎখাতের যেকোনও উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন। দেশে এককভাবে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণে জড়িত সরকারি প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) জন্য এটি বড় উদ্বেগের বিষয়। বলা হচ্ছে, দীর্ঘমেয়াদি উন্নত সঞ্চালন এবং বিতরণব্যবস্থার জন্য অন্তত ৬০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন। বিপুল এই বিনিয়োগকেই মানসম্মত বিদ্যুৎপ্রাপ্তির প্রধান অন্তরায় বলা হচ্ছে। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বার্ষিক সাধারণ সভায় পরিচালক পর্ষদের প্রতিবেদনে বিনিয়োগ নিয়ে উদ্বেগের কথা বলা হয়। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী ৬০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে সঞ্চালনের জন্য প্রয়োজন ২৫ বিলিয়ন ডলার, আর বিতরণ ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন ৩৫ বিলিয়ন ডলার।
সরকারি তথ্য বলছে, সারাদেশে বিদ্যুতের তিন কোটি ৩০ লাখের মতো গ্রাহক রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবার ঘরে বিদ্যুৎ দিতে যাচ্ছে সরকার। বিদ্যুৎ বিভাগ দাবি করছে, এরই মধ্যে সারাদেশের অন্তত ৯৩ ভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। আরও সাত ভাগ মানুষের ঘরে এ বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর পর এখন প্রত্যাশা নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের। তবে এ প্রত্যাশা কবে বাস্তবে ধরা দেবে, তা বলা কঠিন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রায় অর্ধেক বেসরকারি বিনিয়োগ রয়েছে। অর্থাৎ সরকার এ খাতে অর্ধেক বিনিয়োগ করছে আর দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা অর্ধেক বিনিয়োগ করছেন। কিন্তু সঞ্চালন ও বিতরণের পুরো উন্নয়নে সরকার এককভাবে করছে। এতে করে সরকারের ওপর বিনিয়োগের চাপ পড়ছে বেশি।
সঞ্চালনের ক্ষেত্রে মহাপরিকল্পনায় ২৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা বলা হচ্ছে। এর মধ্যে ২০১৭ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ১৩ দশমিক তিন বিলিয়ন ডলার, ২০২৬ থেকে ২০৩০ সালে চার বিলিয়ন, ২০৩১ থেকে ২০৩৫ সালে আরও চার বিলিয়ন এবং শেষ ছয় বছরে ২০৩৬ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত আরও চার বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে।
অন্যদিকে, পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান বা বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনায় দেখা গেছে, বিদ্যুতের বিতরণব্যবস্থা সম্প্রসারণে ২০৪১ সাল পর্যন্ত প্রয়োজন ৩৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ২০১৭ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ১২ বিলিয়ন ডলার, ২০২৬ থেকে ২০৩০ পর্যন্ত সাত বিলিয়ন ডলার, ২০৩১ থেকে ২০৩৫ সালের মধ্যে আরও সাত বিলিয়ন ডলার, আর বাকি নয় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে ২০৩৬ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশে এখন গ্রিড সংযুক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ১৮ হাজার ৫৬৪ মেগাওয়াটের। কিন্তু চাহিদা রয়েছে মাত্র ১২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় ছয় হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বেশি থাকার পরও সরকার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়ার ঘোষণা দিতে পারছে না।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি বলেছেন, সরকার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এজন্য সরকারকে সময় দিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘এখন মানুষের কাছে নিরবচ্ছিন্ন এবং মানসম্মত বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়াই আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করছি।’ পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘আমরা বিতরণ ও সঞ্চালনব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু উৎপাদনের মতো সঞ্চালন ও বিতরণ প্রকল্পের জন্য অর্থ সংস্থান করাটা কঠিন। তবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বেশকিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।’ এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে একটা সময় বিদ্যুৎবিভ্রাটের এই সমস্যা কেটে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব