আনু মোহাম্মদ বললেন, পাইপলাইন মানসম্পন্ন করা হলে ও ঠিকমতো সংরক্ষণ করা হলে পানি ফোটানোর দরকার হবে না
আমিরুল ইসলাম : ঢাকা শহরের বেশিরভাগ মানুষ ফুটিয়ে পানি পান করেন। পানি ফোটাতে বছরে যে পরিমাণ গ্যাস লাগে তার দাম প্রায় ৩৩২ কোটি টাকা। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, ঢাকা ওয়াসার নি¤œমানের পানির কারণে প্রতিবছর এই বিশাল অঙ্কের টাকা অপচয় হচ্ছে। এই অপচয়রোধ করার জন্য কী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আনু মোহাম্মদ বলেছেন, সামগ্রিকভাবে একটা পরিকল্পনা নিয়ে, পানি সরবরাহ করার ব্যবস্থা ও পাইপলাইন যদি মানসম্পন্ন করা হয় এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থা যদি ঠিক থাকে তাহলে আমাদের পানি ফোটানোর কোনো দরকার হবে না।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, এটা খুব সহজ পথ। এটা বহু দেশে আছে, পানি সরাসরি মানুষ ট্যাব থেকে খেতে পারে। বহু দেশে পানি পানের এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশেও এটা সম্ভব। বাংলাদেশে যেখানে পানি পরিশোধন করা হয় সেই প্লান্টটা ঠিকঠাকমতো পরিচালিত হলে সেখানে পানিটা পরিশুদ্ধ থাকে। তারপরে পাইপলাইনে যে পানিটা আসে সেখানে নানা রকম সমস্যা আছে। ওয়াসার এই পাইপলাইন নিয়ে বহুদিনের অভিযোগ। যে গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নেয়া দরকার সে রকমভাবে নেয়া হয় না। বিদেশ থেকে ঋণ পেয়ে প্রজেক্ট না নেয়া পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয় না বাংলাদেশে। কিন্তু এটার জন্য তেমন খরচও হবে না। পানিতে ক্লোরিন বা নানা রকম ঔষধপত্রও দেয়ার দরকার হবে না। পানি খাবার উপযুক্ত করার জন্য আবার ঘরে ঘরে ফিল্টার মেশিন বসানোর প্রয়োজন পড়বে। এই ব্যবস্থা করলে সরাসরি ট্যাব থেকেই পানি পান করা যাবে। পাইপলাইন ঠিক করতে রাষ্ট্রীয়ভাবে যে খরচ হবে তার থেকে বহুগুণ বেশি খরচ মানুষকে করতে হচ্ছে। গ্যাসের অপচয় হচ্ছে। ফিল্টার মেশিন ক্রয় করতে হচ্ছে। ওয়াসার পানির উপর নির্ভর করা যায় না। পানি দূষিত পাওয়া যায়। সেগুলো খেয়ে মানুষের অসুখ-বিসুখ হয়, সেখানে আবার খরচ। সব খরচ যোগ করলে পাইপলাইন ঠিক করার যে খরচ তার তুলনায় অনেক বেশি খরচ প্রতি বছরই হয়। সুতরাং সরকার ও ওয়াসা এটাকে গুরুত্ব দিয়ে যদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে, বিদেশি ঋণ নিয়ে প্রজেক্ট করার উপর নির্ভর না করে যদি নিজেদের প্রয়োজনে, জনগণের প্রয়োজনে কাজ করার জন্য তহবিল বরাদ্দ করে যদি কাজটা করা হয় তাহলে অনেক অপচয় থেকে বাঁচা যাবে এবং মানুষ অনেক দুর্ভোগ থেকেও রেহাই পাবে।