বিশ্ব অর্থনীতির বৈরি আবহাওয়ায় তীব্রচাপে মধ্যবিত্ত শ্রেণী
নূর মাজিদ : একবিংশ শতাব্দিতে জন্ম নেয়া দুটি প্রজন্মের জন্য মধ্যবিত্ত হিসেবে নিজেদের পারিবারিক অবস্থান ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। এইক্ষেত্রে, অবশ্য বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিই দায়ী। ৩৬টি উন্নত দেশের জোট অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের গবেষক রিচার্ড প্যারিংটন এমনটাই মনে করছেন। চলতি সপ্তাহে সংস্থাটি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধে এই আশংকা ব্যক্ত করেন তিনি। যার শিরোনাম ছিলো ‘গভরমেন্টস মাস্ট অ্যাক্ট টু হেল্প স্ট্রাগলিং মিডল ক্লাস’, অর্থাৎ অর্থনৈতিক দুর্দশায় পতিত মধ্যবিত্তদের সাহায্যে সরকারি পদক্ষেপ নিশ্চিত করা উচিৎ। সূত্র : ওইসিডি অর্গ, বেরনসডটকম
প্রতিবেদনটিতে ওইসিডি দেশগুলোর পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, রাশিয়া এবং ব্রাজিলের অবস্থাও তুলে ধরা হয়। এই ৪০টি দেশে বিগত ৩০ বছর ধরেই মধ্যবিত্তদের আর্থিক প্রভাব এবং সক্ষমতা কমছে। প্রতি প্রজন্মের জন্য এখন পূর্ববর্তী প্রজন্মের তুলনায় সামাজিক অবস্থান ধরে রাখা অনেক কঠিন হয়ে পড়ছে। এইসব দেশে একবিংশ শতকে জন্ম নেয়া জনগোষ্ঠীর ৬০ শতাংশই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। সেই তুলনায় তাদের পিতামাতাদের প্রজন্মের ৭০ শতাংশই ছিলেন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। অর্থাৎ বিগত দুই দশকে এই ৪০টি দেশে গড়ে ১০ শতাংশ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পরিমাণ কমেছে। তবে এইক্ষেত্রে সবচাইতে এগিয়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির মধ্যবিত্তেরা সবচাইতে চাপের মুখে রয়েছেন। যার সঙ্গে বিগত দুই দশক ধরে চলমান অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতাও দায়ী। যুদ্ধ, জাতীয় বাজেট ঘাটতি, সরকারি দেনা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয় সবচাইতে বড় আঘাত করেছে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে। কমেছে তাদের সঞ্চয়ের পরিমাণ। ফলে ১৯৭১ সালে যেখানে ৬১ শতাংশ মধ্যবিত্ত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে, সেখানে বর্তমানে রয়েছেন মাত্র ৫২ শতাংশ। পিউ রিসার্চ ইন্সটিটিউডের ২০১৬ সালে প্রকাশিত এক গবেষণার বরাত দিয়ে একথা জানান বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদক কেটি ওয়ারেন। যা ওইসিডি প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়।
কেটি ওয়ারেন বলেন, ‘মার্কিনীরা বিষয়টি খুব ভালো করেই জানেন। পিউ জরিপে অংশ নেয়া প্রায় অর্ধেক মার্কিনী স্বীকার করেছিলেন, ২০১৪ সালেই তারা মধ্যমানের জীবিকা নির্বাহ করতে পারতেন। যা মাত্র দুই বছর পড়েই তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতি তারা নিজেদের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আওতার বাহিরে বলেই মনে করেন।’
পিউ রিসার্চ সেন্টারের সংজ্ঞা যেসব মার্কিন নাগরিক তাদের সাংসারিক চাহিদার ৭৫ শতাংশ বা ২০০ শতাংশ বেশি আয় করতে সক্ষম হন তাদেরকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আওতায় ফেলে। তবে যুক্তরাষ্ট্র শুধু একাই নয়, ওইসিডি জোটের অন্যান্য দেশেও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। এসব দেশে মধ্যবিত্তদের আয়ের গড় প্রবৃদ্ধিও কমেছে। যার বাৎসরিক পরিমাণ মাত্র শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। সেই তুলনায় ধনীক শ্রেণীর আয় বাড়ছে বাৎসরিক ১০ শতাংশ হারে।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন ওইসিডি মহাসচিব অ্যাঞ্জেল গুরিয়া। তিনি বলেন, ‘আজকে মধ্য বিত্ত শ্রেণীকে মনে হয় উত্তাল সমুদ্রে ভাসমান একটি ক্ষুদ্র নৌকার মতো। যা অর্থনীতির উত্তাল পথ পাড়ি দেয়ার জন্য মোটেই উপযোগী নয়। এছাড়াও সরকারি নীতিমালাও এইজন্য অবদান রাখছে। বিশ্বে শিল্পায়নের স্বার্থে এখন ধনীরা বেশি কররেয়াত পাচ্ছেন। অন্যদিকে মধ্যবিত্তদের ওপর করের চাপ বাড়ছে। বাড়ছে অন্যান্য জীবন-যাত্রার খরচও।’
এইক্ষেত্রে, সংকট সমাধানে জনগণের দাবী অনুযায়ী সরকার পরিচালনা করা উচিৎ, বলেই তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্বের সরকারগুলোকে মধ্যবিত্তদের জীবন-যাত্রার মান উন্নয়ন এবং তাদের আর্থিক কল্যানের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যা একটি টেকসই এবং সম্মিলিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্ম দেবে। কারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণীই ভোক্তাবাজারের প্রধান প্রাণশক্তি।’